ITR ফাইল করবেন? আগে জেনে নিন ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্টের পার্থক্য

old-vs-new-tax-regime-which-is-more-beneficial-key-conditions

ভারতে ডিজিটালাইজেশনের সূচনা প্রশাসনিক কার্যক্রমে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। বিশেষ করে কর ব্যবস্থা এবং সরকারি পরিষেবায় ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রমের প্রসার সাধারণ মানুষের জীবনকে করেছে আরও সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ। এই পরিবর্তনের অন্যতম স্তম্ভ ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা। করদাতারা এখন ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারছেন, কর পরিশোধ করতে পারছেন, আর সেইসঙ্গে পাচ্ছেন দ্রুত রিফান্ড এবং নিশ্চিত লেনদেনের প্রমাণ।

Advertisements

ই-ফাইলিং কী?
ই-ফাইলিং বলতে বোঝায় অনলাইনের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়া। আগে করদাতাদের আয়কর দফতরে গিয়ে ফর্ম পূরণ, নথি জমা এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু এখন আয়কর দফতরের অফিসিয়াল ই-ফাইলিং পোর্টালে লগ ইন করে খুব সহজেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।
এখানে কোনও শারীরিক পরিশ্রম নেই—কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বাড়ি থেকে বা অফিস থেকে রিটার্ন ফাইল করা যায়।

   

ই-ফাইলিং এর প্রধান সুবিধা:
1. দ্রুত প্রক্রিয়া – কাগজে জমা দেওয়ার তুলনায় অনেক দ্রুত ITR জমা দেওয়া যায়।
2. রিফান্ড ত্বরান্বিত – ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে রিফান্ডও দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ হয়।
3. যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে জমা দেওয়া – ২৪ ঘণ্টা এই পরিষেবা ব্যবহার করা যায়।
4. নিরাপত্তা – ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ই-পেমেন্ট কী?
ই-পেমেন্ট হলো কর বা সরকারি নির্ধারিত ফি অনলাইনে পরিশোধের প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে আয়কর, পণ্য ও পরিষেবা কর (GST), অথবা অন্যান্য সরকারি চার্জ সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং বা ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে পরিশোধ করা যায়।

ই-পেমেন্ট এর প্রধান সুবিধা:
1. দ্রুত ও সুবিধাজনক – কয়েক মিনিটের মধ্যেই কর পরিশোধ সম্ভব।
2. লেনদেনের প্রমাণ – প্রতিটি ডিজিটাল পেমেন্টের রসিদ পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
3. ২৪x৭ পরিষেবা – যেকোনো সময় এই সুবিধা পাওয়া যায়, ব্যাংক বা দফতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্টের মধ্যে পার্থক্য:
যদিও দুটি পরিষেবাই ডিজিটাল এবং কর ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু কাজের ক্ষেত্র আলাদা। ই-ফাইলিং হলো কর রিটার্ন বা সংশ্লিষ্ট নথি অনলাইনে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, ই-পেমেন্ট হলো করের অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করার প্রক্রিয়া।
উদাহরণস্বরূপ, একজন করদাতা প্রথমে ই-ফাইলিং পোর্টালে নিজের আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন, এরপর যদি তার কর বকেয়া থাকে, তবে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে সেই কর অনলাইনে পরিশোধ করবেন।

Advertisements

ডিজিটাল কর ব্যবস্থার ইতিবাচক প্রভাব:
ভারতে ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন শুধু করদাতাদের সুবিধাই বাড়ায়নি, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতাও বৃদ্ধি করেছে। আগে কর রিটার্ন জমা ও পরিশোধে যে সময় ও খরচ লাগত, এখন তার তুলনায় অনেক কম সময়ে এবং বিনা ঝামেলায় সব সম্পন্ন হচ্ছে।
এছাড়াও, অনলাইন লেনদেনের কারণে দুর্নীতি ও মানবিক ত্রুটির সম্ভাবনাও কমেছে। করদাতারা তাদের জমা দেওয়া রিটার্ন ও পরিশোধিত করের রেকর্ড সহজেই অনলাইনে সংরক্ষণ ও যাচাই করতে পারছেন।

সরকারের ডিজিটাল প্রচেষ্টা:
ভারত সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে ই-গভর্ন্যান্স বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে। কর ব্যবস্থায় ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্টের প্রচলন সেই উদ্যোগেরই একটি বড় পদক্ষেপ। বর্তমানে আয়কর দফতরের পোর্টাল থেকে শুরু করে GST পোর্টাল পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই এই সুবিধা চালু আছে।
এছাড়াও, মোবাইল অ্যাপ, এসএমএস এলার্ট, এবং অনলাইন হেল্পডেস্কের মাধ্যমে করদাতাদের সহায়তা করা হচ্ছে, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এই ডিজিটাল সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
যদিও ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্টের প্রচলন ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেমন—
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের অভাব।
ডিজিটাল সাক্ষরতার ঘাটতি।
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি।

সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা, সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা, এবং গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

ই-ফাইলিং ও ই-পেমেন্টের যুগে কর ব্যবস্থার পুরনো ধারা বদলে যাচ্ছে। করদাতারা এখন আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম জমা বা কর পরিশোধের ঝামেলায় পড়ছেন না। ঘরে বসেই তারা নিজের কর সংক্রান্ত সমস্ত কাজ করতে পারছেন—দ্রুত, নিরাপদ এবং স্বচ্ছভাবে।
ডিজিটালাইজেশনের এই ধারাকে আরও বিস্তৃত করতে পারলে ভারতের কর ব্যবস্থা ভবিষ্যতে আরও সহজ, কার্যকর ও জনগণমুখী হয়ে উঠবে।