২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের আইটিইএস চাকরি ২০% বৃদ্ধি পাবে

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ও সক্ষমতা পরিষেবা (ITeS) খাত ২০২৫ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খাতে চাকরির সুযোগ ২০% বৃদ্ধি পাবে।…

ITeS Jobs in India

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ও সক্ষমতা পরিষেবা (ITeS) খাত ২০২৫ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খাতে চাকরির সুযোগ ২০% বৃদ্ধি পাবে। ইনস্টাহায়ার টেক স্যালারি ইনডেক্স ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অভিজ্ঞতার স্তর এবং ক্ষেত্র জুড়ে বেতনের প্রবণতায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এআই-চালিত নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাহায়ার ৪২,০০০-এর বেশি গোপনীয় প্রার্থী প্রোফাইল এবং ১১,০০০-এর বেশি নিয়োগকর্তা-প্রার্থী মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণ করে এই তথ্য সংগ্রহ করেছে।

Also Read | প্রযুক্তি জায়ান্ট আইবিএমে ৯,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা চুড়ান্ত

   

নতুন প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতার কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সাইবার নিরাপত্তা এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ভূমিকাগুলোতে ৭৫% বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। গিগ অর্থনীতি এবং দূরবর্তী কাজের মডেলগুলোও এই খাতের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা প্রায় ১০% প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। তবে, প্রযুক্তির এই উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রায় ৪০% কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি বা আপস্কিলিংয়ের প্রয়োজন হবে, যাতে তারা পরিবর্তনশীল চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে পারে।

Advertisements

বেতনের প্রবণতা এবং দক্ষতার চাহিদা
প্রতিবেদনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার স্তর এবং ক্ষেত্র জুড়ে বেতনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। AWS দক্ষতাসম্পন্ন ডেভঅপস পেশাদাররা সব অভিজ্ঞতার স্তরে প্রায় ১০% বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছেন। অন্যদিকে, ০-৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপারদের বেতন বছরে প্রায় ১.৫ লাখ টাকা কমেছে। তবে, ছয় বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ফ্রন্টএন্ড পেশাদারদের বেতন প্রায় ৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মোবাইল ডেভেলপমেন্ট এবং ডেটা সায়েন্সের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের বেতন হ্রাসের চাপের মুখে রয়েছে। পাইথন ব্যাকএন্ড দক্ষতার জন্য সর্বোচ্চ বেতন প্রদানকারী ভাষা হিসেবে রয়ে গেছে, যেখানে প্রতি পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার সঙ্গে বেতন প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। জাভাও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, যেখানে প্রবেশ পর্যায়ের পদ থেকে দশ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাদারদের বেতন পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই প্রবণতা থেকে বোঝা যায় যে, যেসব পেশাদাররা উচ্চ-চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা, যেমন এআই, সাইবার নিরাপত্তা এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করছেন, তারা উচ্চ বেতনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে, যারা ঐতিহ্যবাহী দক্ষতার উপর নির্ভর করছেন, তাদের জন্য বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। এটি আইটিইএস খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির গুরুত্বকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরছে।

ভৌগোলিক পরিবর্তন এবং প্রতিভার বিস্তার
বেঙ্গালুরু ভারতের প্রযুক্তি প্রতিভার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে, যেখানে দেশের ৩৫% প্রযুক্তি কর্মী রয়েছেন। এরপরে রয়েছে দিল্লি-এনসিআর এবং হায়দ্রাবাদ, যেখানে ২০% করে প্রতিভা রয়েছে। পুণে ১৫% এবং চেন্নাই ১০% প্রতিভা নিয়ে তালিকায় রয়েছে। তবে, দূরবর্তী কাজের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে পেশাদাররা এখন মেট্রো শহরের বাইরে, অর্থাৎ নন-মেট্রো এলাকায় চলে যাচ্ছেন। এটি কোম্পানিগুলোর জন্য প্রতিভার পুল বৃদ্ধি করছে, বিশেষ করে এআই-কেন্দ্রিক ভূমিকার জন্য।

টিয়ার-২ শহরগুলো, যেমন চণ্ডীগড়, জয়পুর এবং ইন্দোর, আকর্ষণীয় প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে। এই শহরগুলো ঐতিহ্যবাহী মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রতিভা আকর্ষণ করছে। সাইবার নিরাপত্তা এবং স্পেস প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলো ডিজিটাল অর্থনীতিতে নিয়োগ বৃদ্ধি করছে, যা বিশেষায়িত দক্ষতার ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে তুলে ধরছে। এই ভৌগোলিক পরিবর্তন বাঙালি তরুণদের জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি করছে, যারা এখন কলকাতা বা বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহরে না গিয়েও প্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন।

ভবিষ্যৎ নিয়োগ কৌশল
কোম্পানিগুলো এখন দক্ষতা-ভিত্তিক নিয়োগের উপর বেশি জোর দিচ্ছে, যা বৈচিত্র্য নিয়োগের লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গভীর প্রযুক্তি এবং এআই দক্ষতার উপর কোম্পানিগুলোর ফোকাস বাড়ছে। ইনস্টাহায়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সর্বজিৎ মল্লিক বলেন, “সংস্থাগুলো যখন দক্ষতার পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন নিয়োগ কৌশল গ্রহণ করছে, তখন যেসব পেশাদার আপস্কিলিং এবং বিশেষায়নে বিনিয়োগ করবেন, তারাই ক্যারিয়ার প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থাকবেন।”

এই প্রবণতা থেকে স্পষ্ট যে, আইটিইএস খাতে সাফল্যের জন্য পেশাদারদের ক্রমাগত শিক্ষা এবং নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। যেসব তরুণ বাঙালি প্রযুক্তি খাতে প্রবেশ করতে চান, তাদের জন্য এআই, সাইবার নিরাপত্তা এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, দূরবর্তী কাজের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে তারা এখন বিশ্বব্যাপী দলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন, যা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় সুবিধা।

বাঙালি তরুণদের জন্য সুযোগ
পশ্চিমবঙ্গের তরুণদের জন্য এই প্রবৃদ্ধি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কলকাতা ইতিমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ আইটি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এবং এখানকার তরুণরা এই নতুন সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেন। তবে, শুধুমাত্র কলকাতা নয়, দূরবর্তী কাজের সুযোগের কারণে রাজ্যের অন্যান্য শহর, যেমন শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর বা আসানসোল থেকেও তরুণরা এই খাতে যোগ দিতে পারেন।

এআই এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেমন UpGrad, Byju’s বা Skillshare, বাঙালি তরুণদের জন্য সহজলভ্য। এই প্ল্যাটফর্মগুলো শহর ও গ্রামের তরুণদের জন্য শিক্ষার দরজা খুলে দিয়েছে, যাতে তারা ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা ছাড়াই দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া, সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং স্কিল ইন্ডিয়া উদ্যোগগুলো এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
যদিও আইটিইএস খাতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দক্ষতার ঘাটতি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এই খাতের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোম্পানিগুলোকে আপস্কিলিং প্রোগ্রামে বিনিয়োগ করতে হবে এবং সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

বাঙালি তরুণদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যারা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন, তারাই এই খাতে সাফল্য অর্জন করবেন। পাইথন, জাভা, এআই এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো দক্ষতা অর্জন করা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করবে।

২০২৫ সাল ভারতের আইটিইএস খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে চলেছে। ২০% চাকরির প্রবৃদ্ধি, এআই এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে ৭৫% বৃদ্ধি এবং দূরবর্তী কাজের সুযোগ এই খাতকে আরও গতিশীল করছে। বাঙালি তরুণদের জন্য এটি একটি সুযোগ, যা তারা কাজে লাগিয়ে তাদের ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন। তবে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আপস্কিলিং এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি। আগামী দিনে এই খাত কীভাবে এগিয়ে যায়, সেদিকে নজর থাকবে সবার।