১ টাকা বিনিয়োগে রিটার্ন ২.৫৪ টাকা! প্রাক্তন ISRO কর্তার চাঞ্চল্যকর দাবি

ISRO Remarkable ROI: Every Rupee Invested Yields Rs 2.54, Says Former Chairman S. Somanath

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস. সোমনাথের একটি সাম্প্রতিক বিবৃতি পুরো দেশে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। তিনি দাবি করেছেন যে, ISRO-তে প্রতি একটি টাকা বিনিয়োগের জন্য দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে ২.৫৪ টাকা। এই অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যানটি শুধুমাত্র একটি সাফল্যের গল্প নয়, বরং এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ফলাফলের একটি গভীর প্রমাণ। সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণের একটি রিপোর্ট, যা ISRO এবং ইউরোপীয় স্পেস কনসালটেন্সি নোভাস্পেসের যৌথ উদ্যোগে প্রণীত হয়েছে, এই দাবির ভিত্তি প্রদান করে।

Advertisements

ISRO-এর অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প
এস. সোমনাথের নেতৃত্বে ISRO-এর অবদান অতুলনীয়। তিনি যখন চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন চন্দ্রয়ান-৩ মিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এই মিশনে ভারত প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নিখুঁতভাবে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই মিশনটির বাজেট ছিল মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা, যা NASA-এর চন্দ্র মিশনের তুলনায় অত্যন্ত কম। সোমনাথের দাবি হলো, এই ধরনের কম খরচে অর্জিত সাফল্য অর্থনৈতিকভাবে দেশকে বহু গুণ ফল প্রদান করছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দশকের মধ্যে ভারতের মহাকাশ খাতে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার (কর্তৃক ১ লক্ষ কোটি টাকা) বিনিয়োগ হয়েছে, যা GDP-তে ২৪ বিলিয়ন ডলারের অবদান রেখেছে।

কীভাবে ফিরে আসে এত বড় রিটার্ন?
ISRO-এর বিনিয়োগের ফলাফল কীভাবে এত বড় হয়, তা বোঝার জন্য আমাদের তাদের কার্যক্রমের গভীরে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, উপগ্রহ-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি, আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভারত বিশ্বে অগ্রগতি করেছে। এই প্রযুক্তিগুলো শুধুমাত্র জনগণের জীবনে সুবিধা আনে না, বরং কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। উপরন্তু, ISRO-এর উন্নত রকেট প্রযুক্তি এবং সস্তা লঞ্চ সার্ভিস সাম্প্রতিককালে বাণিজ্যিক খাতেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিদেশি কোম্পানিও ভারতের সাথে জড়িত হচ্ছে, যা দেশের রাজস্ব আয় বাড়াচ্ছে।

সাশ্রয়ী মহাকাশ গবেষণার মডেল
ভারতের মহাকাশ গবেষণার মডেল বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। যেখানে NASA-এর বার্ষিক বাজেট ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, সেখানে ISRO-এর বার্ষিক ব্যয় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। এই সীমিত বাজেটে ISRO-এর ক্ষমতা এবং দক্ষতা তাদের সাফল্যের মূল কারণ। চন্দ্রয়ান-৩ মিশনের ক্ষেত্রে, ভারতের স্বদেশী প্রযুক্তি এবং শ্রমিকদের উৎসাহ এই সাফল্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এই মডেলটি প্রমাণ করে যে, উচ্চ প্রযুক্তির গবেষণা সর্বসাধারণের জন্য উপযোগী এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।

Advertisements

সমালোচনা এবং প্রতিক্রিয়া
তবে এই দাবির বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনাও উঠেছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, ISRO-এর বিনিয়োগ ফিরতি টাকা সরকারের হাতে ফিরে আসলে তা বিভিন্ন কল্যাণমূলক পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মহাকাশ গবেষণার জন্য পুনঃবিনিয়োগের পরিবর্তে অন্য ক্ষেত্রে চলে যাচ্ছে। তবে সোমনাথ এই সমালোচনার উত্তরে বলেছেন, ISRO-এর প্রযুক্তি দেশের বিভিন্ন খাতে সুবিধা প্রদান করছে, যা সরাসরি জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ভারতের মহাকাশ খাতের বর্তমান বাজার মূল্য ৬.৩ বিলিয়ন ডলার, এবং এটি ২০২৫ সালের মধ্যে ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা বিশ্বের মহাকাশ বাজারে ১.৫% অংশ গ্রহণ করবে। এই সাফল্যের পেছনে ISRO-এর দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক বিনিয়োগ এবং সংস্থার দক্ষ কর্মীদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। ভবিষ্যতে, যদি এই গতি ধরে থাকে, তবে ভারত আগামী দশকে বিশ্বের মহাকাশ অর্থনীতিতে ১০% অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে।

এস. সোমনাথের এই দাবি শুধুমাত্র একটি সংখ্যার খেলা নয়; এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্য ও আত্মনির্ভরতার একটি গৌরবময় ইতিহাসের প্রতিফলন। ১ টাকা বিনিয়োগে ২.৫৪ টাকা রিটার্নের গল্প দেশবাসীকে গর্বিত করার পাশাপাশি আশা জাগায় যে, ভারত আগামী দিনে মহাকাশে আরও বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে। ISRO-এর এই অর্থনৈতিক মডেল বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর জন্যও একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে।