Gold gift tax rules India: আয়কর দাতাদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর এসেছে আয়কর দপ্তরের পক্ষ থেকে। ২০২৫ অর্থবছরের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনেকের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই সময়টি দেশে বিয়ের মরসুম হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে এই সময় অনেক মানুষ বিবাহ উপলক্ষে সোনা ও নগদ টাকা উপহার হিসেবে পেয়ে থাকেন। তাই এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো বিবাহ উপলক্ষে সোনা উপহার পাওয়ার পর কর সংক্রান্ত নিয়ম ও আয়কর রিটার্নে কীভাবে তা উল্লেখ করতে হবে।
বিয়ের সময় প্রাপ্ত উপহার: কর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত
ভারতের আয়কর আইনে বিবাহ একটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়, যার ফলে বিয়ের সময় প্রাপ্ত উপহার, তা সোনা হোক কিংবা নগদ অর্থ, তা যে পরিমাণেই হোক না কেন, করমুক্ত। অর্থাৎ, বিবাহ উপলক্ষে যদি আপনি সোনা উপহার পান, তাহলে সেই উপহারের উপর কোনও আয়কর প্রযোজ্য নয়, তা যত মূল্যবানই হোক না কেন।
তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—উপহারটি “বিবাহ উপলক্ষে” হতে হবে এবং সেই সময় প্রাপ্ত হতে হবে। যদি এই উপহার কোনো ভিন্ন উপলক্ষে প্রদান করা হয়, তাহলে কর প্রযোজ্য হতে পারে।
বিয়ের বাইরে উপহার: করের আওতায়
যদি কেউ সোনা বা অন্য কোনও মূল্যবান উপহার পান কোনও উৎসব, জন্মদিন বা অন্য উপলক্ষে, এবং সেটির মূল্য যদি ৫০,০০০ টাকার বেশি হয়, এবং উপহারটি কোনও ‘অসম্পর্কিত ব্যক্তি’র কাছ থেকে আসে, তাহলে সেই সম্পূর্ণ উপহারের মূল্য তার মোট আয় হিসেবে গণ্য হবে এবং সেই অনুযায়ী কর দিতে হবে।
উপহার পাওয়ার পর সোনা বিক্রি করলে কর প্রযোজ্য
যদিও বিয়েতে পাওয়া সোনা উপহার করমুক্ত, কিন্তু যদি সেই সোনা ভবিষ্যতে বিক্রি করা হয়, তখন তা থেকে যে লাভ হয়, তা করযোগ্য হয়। এটি মূলত মূলধনী লাভ (capital gain) হিসাবে ধরা হয় এবং এর উপর নির্দিষ্ট কর প্রযোজ্য হয়। এই লাভ দুই ভাগে ভাগ হয়—স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ (STCG) এবং দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (LTCG)।
স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ (STCG)
যদি আপনি সোনা পাওয়ার পর ৩৬ মাসের মধ্যে সেটি বিক্রি করেন, তাহলে যেটুকু লাভ হবে, তা আপনার স্বাভাবিক আয়ের সঙ্গে যোগ হবে এবং আপনার কর স্ল্যাব অনুযায়ী কর ধার্য হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কর স্ল্যাব ২০% হয় এবং আপনি সোনা বিক্রি করে ১ লাখ টাকা লাভ করেন, তাহলে সেই ১ লাখ টাকাই আপনার মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং তাতে ২০% হারে কর দিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (LTCG)
যদি সোনা ৩৬ মাসের পরে বিক্রি করা হয়, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি লাভ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ক্ষেত্রে করের হার নির্দিষ্ট—২০% হারে কর দিতে হয়, এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয় সূচকায়নের সুবিধা (indexation benefit)। এটি মুদ্রাস্ফীতি অনুযায়ী মূল্যের সমন্বয় করে প্রকৃত লাভ কমিয়ে আনে, ফলে করের বোঝা কিছুটা হ্রাস পায়।
সোনা বিক্রির তথ্য কীভাবে ITR-এ জানাবেন?
আইটিআর ফর্ম পূরণ করার সময়, যদি আপনি সোনা বিক্রি করে লাভ করে থাকেন, তবে সেটি স্পষ্টভাবে ‘Capital Gains’ বিভাগে জানাতে হবে। আবার, আপনি যদি বিয়ের সময় সোনা উপহার পেয়ে থাকেন, তবে সেটি করমুক্ত হলেও, ‘Exempt Income’ বিভাগে সেটির বিবরণ দেওয়া উচিৎ, যাতে আয়কর দপ্তর বুঝতে পারে সেই সম্পদের উৎস কী। এই ধরনের স্বচ্ছতা ভবিষ্যতে নোটিস বা যাচাইয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
আত্মীয় বনাম অনাত্মীয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহার: করের পার্থক্য
আয়কর আইনে ‘আত্মীয়’ ও ‘অনাত্মীয়’ শব্দ দুটি কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যদি সোনা উপহার প্রদানকারী ব্যক্তি আত্মীয় হন (যেমন—পিতা, মাতা, ভাই, বোন, কাকা, মামা, ইত্যাদি), তাহলে সেই উপহার বিবাহ হোক বা না হোক, করমুক্ত থাকে।
কিন্তু যদি উপহারদাতা আত্মীয় না হন এবং উপহারের মূল্য ৫০,০০০ টাকার বেশি হয় (যদি তা বিবাহ উপলক্ষে না হয়), তাহলে তা পুরোপুরি করযোগ্য হয়ে যায়।
আয়কর দপ্তর এবার সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করেছে ঠিকই, তবে করদাতাদের উচিত সেই সময়ের মধ্যেই সঠিকভাবে সমস্ত তথ্যসহ রিটার্ন দাখিল করা। বিবাহ উপলক্ষে প্রাপ্ত সোনা বা অন্যান্য উপহার করমুক্ত হলেও, পরবর্তীকালে সেই সম্পদ বিক্রির সময় করপ্রদান বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সঠিক তথ্য দেওয়া এবং নিয়মিত রেকর্ড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধরনের তথ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রতিটি নাগরিকের কর-সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্বচ্ছ আর্থিক পরিকল্পনা গড়ে তুলবে।
