বুধবার IRCTC-র শেয়ারমূল্যে ২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়, কারণ ভারতীয় রেল ১ জুলাই ২০২৫ থেকে সারাদেশে যাত্রী ভাড়ায় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির পর এই প্রথমবার ভাড়া বৃদ্ধি হতে চলেছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য:
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নন-এসি কোচগুলিতে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে ১ পয়সা, আর এসি শ্রেণির ক্ষেত্রে বাড়বে ২ পয়সা। তবে শহরতলি ট্রেন ও ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রার ক্ষেত্রে কোনো ভাড়া পরিবর্তন হবে না।
৫০০ কিলোমিটারের বেশি দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রার জন্য ভাড়া বৃদ্ধি হবে অতি সামান্য—মাত্র ০.৫ পয়সা প্রতি কিলোমিটারে। এছাড়া, মাসিক সিজন টিকিট (MST) যাত্রীদের জন্যও বড়সড় স্বস্তির খবর রয়েছে—এই টিকিটের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।
রেল মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “যাত্রীদের উপরে বেশি আর্থিক চাপ না দিয়ে সীমিত ভাড়াবৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারি ভর্তুকি বজায় থাকলেও, রেলের পরিচালন ব্যয় সামাল দিতে এই সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।”
তৎকাল টিকিট বুকিংয়ে আধার বাধ্যতামূলক:
রেল ভাড়ার পরিবর্তনের পাশাপাশি ১ জুলাই থেকে তৎকাল টিকিট বুকিং নিয়েও বড় ঘোষণা করল ভারতীয় রেল। এখন থেকে আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট কিংবা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তৎকাল টিকিট বুক করতে হলে যাত্রীদের আধার যাচাই (Aadhaar Verification) সম্পূর্ণ করা বাধ্যতামূলক হবে।
এই নিয়ম কার্যকর হবে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে। আর ১৫ জুলাই ২০২৫ থেকে তৎকাল টিকিট কাটার সময় ওটিপি-ভিত্তিক আধার প্রমাণীকরণ (OTP-based Aadhaar Authentication) বাধ্যতামূলক করা হবে। এর মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষ প্রতারণামূলক বুকিং প্রতিরোধ করতে চায়।
রেল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, “তৎকাল টিকিট বুকিংয়ে বহুদিন ধরেই অসাধুতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অনেক সময় দেখা যায়, আসল যাত্রী টিকিট পাচ্ছেন না অথচ দালালরা টিকিট তুলে নিচ্ছে। আধার যাচাই বাধ্যতামূলক হলে স্বচ্ছতা আসবে এবং সাধারণ যাত্রীরা উপকৃত হবেন।”
রেল এজেন্টদের জন্য নতুন বিধিনিষেধ:
আসল যাত্রীদের তৎকাল টিকিট পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে রেল এবার এজেন্টদের জন্য সময় ভিত্তিক বিধিনিষেধ চালু করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী—
এসি ক্লাস তৎকাল টিকিট: রেল এজেন্টরা সকাল ১০:০০ থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত বুকিং করতে পারবেন না।
নন-এসি ক্লাস তৎকাল টিকিট: বুকিং ১১:০০ থেকে ১১:৩০ পর্যন্ত এজেন্টদের জন্য বন্ধ থাকবে।
এই নিয়মগুলির মাধ্যমে আইআরসিটিসি ও সিআরআইএস (CRIS) তাদের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা আপডেট করবে এবং দেশের সমস্ত জোনাল অফিসে এই নতুন নির্দেশিকা পাঠানো হবে।
IRCTC শেয়ারে ইতিবাচক প্রভাব:
এই ঘোষণার পরেই বুধবার সকাল থেকে শেয়ারবাজারে আইআরসিটিসি-র শেয়ারে ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং আইআরসিটিসি-র পরিষেবায় বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিশেষ করে আধার ভিত্তিক টিকিট বুকিং সিস্টেম এবং এজেন্টদের উপর বিধিনিষেধ, প্রযুক্তিগত দিক থেকে আইআরসিটিসি-র ভূমিকা বাড়াবে।
একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন, “আইআরসিটিসি-র ব্যবসা মূলত পরিষেবা ও টিকিটিং সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। এই পরিবর্তনগুলি তাদের প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে।”
রেল যাত্রীদের জন্য প্রভাব কী?
যাত্রীদের জন্য এই পরিবর্তন একদিকে যেমন সামান্য অতিরিক্ত ভাড়া বহনের কথা বলছে, অন্যদিকে আধার যাচাইয়ের বাধ্যতামূলকতা এবং এজেন্ট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তৎকাল টিকিট পাওয়া সহজতর হতে পারে। বিশেষ করে অফিসযাত্রী ও দূরপাল্লার ভ্রমণকারীরা এতে উপকৃত হবেন।
১ জুলাই থেকে রেলের এই নতুন পরিবর্তনগুলির প্রভাব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। যেখানে একদিকে ভাড়াবৃদ্ধি রেলের আয় বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছে, অন্যদিকে আধার-ভিত্তিক টিকিট বুকিং এবং এজেন্ট নিয়ন্ত্রণ রেল পরিষেবাকে আরও স্বচ্ছ ও যাত্রীবান্ধব করে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইআরসিটিসি ও রেল মন্ত্রকের যৌথ প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তনগুলিকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে রেল যাত্রীদের সহযোগিতা এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।