ভারতের কর্মশক্তি বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছে, যেখানে মহিলারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। দেশ এখন ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অন্তর্ভুক্তি এবং সুযোগই আগামী দিনের উন্নতির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কৃষি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, পরিষেবা এবং উৎপাদন শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে মহিলাদের অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রি এবং সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মহিলাদের জন্য একটি সুশৃঙ্খল এবং সুযোগমুখী কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের সচিব সুমিতা দাওরা বলেছেন, “ভারতের ২০৪৭ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ মহিলা কর্মশক্তি অংশগ্রহণের লক্ষ্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি আমাদের ভিশন ‘বিকশিত ভারত’-এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেছেন, “মহিলাদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে যেখানে মহিলাদের কাজের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ২২%, সেখানে ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৩%।” তিনি জানান, মহিলাদের বেকারত্বের হারও হ্রাস পেয়েছে, যা ২০১৭-১৮ সালে ছিল ৫.৬% এবং ২০২৩-২৪ সালে তা ৩.২%।
মহিলা উদ্যোক্তারা এবং ব্যবসায়ী নেতারা ‘ভিক্সিত ভারত’ গঠনে লিঙ্গ বৈষম্য ও সমতা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। অ্যাডভান্টেজক্লাব এআই-র চিফ অপারেটিং অফিসার এবং কো-ফাউন্ডার স্মিতি ভট্ট দিওরা বলেছেন, “অন্তর্ভুক্তি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা পূরণ করার বিষয় নয়, বরং মহিলাদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করা, চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করা এবং কর্মস্থলে লিঙ্গ সমতা ও সমান মজুরি নিশ্চিত করা জরুরি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কর্মস্থলে প্রকৃত অন্তর্ভুক্তি তখনই সম্ভব যখন মহিলাদের জন্য নমনীয়তা, পরামর্শদাতা এবং সাহায্য চাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা হয়। যখন মহিলাদের এমনভাবে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ দেওয়া হয় যা তাদের জন্য কার্যকর, তখন প্রকৃত পরিবর্তন ঘটে, যা কেবল তাদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য উপকারী।”
স্নোকাশের সাসটেইনেবিলিটি প্রধান অম্বালিকা গুপ্ত বলেছেন, “মহিলাদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভারতের কর্মস্থলগুলোর অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ করার দক্ষতা ব্যবসা এবং সমাজের উন্নয়নে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতের কর্মস্থল হবে সাহসী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমান সুযোগ দ্বারা চালিত, যা সবার জন্য উন্নতির পথ উন্মুক্ত করবে।”
ব্র্যান্ডম্যান রিটেইল-এর ডিরেক্টর এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান কাশিকা মালহোত্রা বলেছেন, “মহিলারা যে দক্ষতাগুলি নিয়ে কাজ করেন তা ব্যবসায়িক পারদর্শিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন সহনশীলতা, মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি। তবে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এখনও মহিলাদের অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে, যা ব্যবসার ক্ষেত্রেই নয়, সারা সমাজের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
আরব্রো ফার্মাসিউটিক্যালসের ডিরেক্টর এবং নিনজেন-এর কো-ফাউন্ডার ড. নেহা অরোরা বলেছেন, “মহিলারা বহু কাজ একসাথে করতে পারেন, তারা নমনীয়, সহনশীল, মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং নেতৃত্বের যে দক্ষতা দেখান তা ব্যবসার উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এবং লিঙ্গবৈষম্য মহিলাদের পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে, যা সংগঠনের উন্নতি সীমাবদ্ধ করতে পারে।”
মহিলা কর্মী উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের এই অভিমত ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি ও সমতার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে।