ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা ইনফোসিসের (Infosys) সিইও সালিল পারেখ ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে তার মোট বার্ষিক পারিশ্রমিকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখেছেন। সংস্থার সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা গেছে, এই বছর পারেখের মোট আয় হয়েছে ₹৮০.৬ কোটি, যা আগের বছরের ₹৬৬.২ কোটি থেকে ২২ শতাংশ বেশি।
এই বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিকের মধ্যে রয়েছে ₹৭.৪৫ কোটি মূল বেতন, ₹২৩.১ কোটি পারফরম্যান্স-ভিত্তিক বোনাস এবং ₹৪৯.৫ কোটি মূল্যের স্টক-ভিত্তিক পার্কুইজিট। সবগুলো উপাদানেই আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি ঘটেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “পারেখ FY25 সালে বেশি সংখ্যক রেস্ট্রিকটেড স্টক ইউনিট (RSU) এক্সারসাইজ করেছেন।” ইনফোসিস-এর শেয়ারমূল্যের শক্তিশালী পারফরম্যান্সের কারণে এই আর্থিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
পারেখ, যিনি ২০১৮ সালে ইনফোসিসে যোগ দেন এবং এর আগে ক্যাপজেমিনিতে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন, বর্তমানে ভারতের আইটি খাতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত সিইও।
অন্যান্য সিইওদের তুলনামূলক পারিশ্রমিক
পারেখের পারিশ্রমিক অন্য আইটি কোম্পানির সিইওদের তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের সর্ববৃহৎ আইটি সংস্থা টিসিএস-এর সিইও কে. কৃত্তিবাসন FY25-এ ₹২৬.৫ কোটি আয় করেছেন, যা মাত্র ৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত। অন্যদিকে, উইপ্রোর সিইও শ্রীনি পালিয়া ₹৫৩.৬ কোটি আয় করেছেন, যেখানে তার আয় বছরে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এই তুলনায়, পারেখের আয় বৃদ্ধির হার এবং পরিমাণ দুই-ই উল্লেখযোগ্য।
কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির তুলনায় ব্যবধান
যেখানে ইনফোসিস-এর সিইওর আয় এক বছরে ২২ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে সাধারণ কর্মীদের গড় বেতন বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬.৫ শতাংশ (এপ্রিল থেকে কার্যকর)। এই পার্থক্য সংস্থার অভ্যন্তরীণ বেতন বৈষম্য স্পষ্ট করে তোলে। FY25-এ সিইও এবং মিডিয়ান কর্মচারীর বেতন অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৭৫২:১, যা আগের বছরের ৬৭৭:১ অনুপাতের তুলনায় অনেক বেশি।
এই ডেটা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, সংস্থায় উচ্চপদস্থ নেতৃত্বের বেতন বৃদ্ধির হার সাধারণ কর্মীদের তুলনায় অনেক দ্রুত, যা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।
স্টক ইউনিট দ্বারা পুরস্কার
FY25-এ পারেখকে ৩,৮২,০৭১টি RSU প্রদান করা হয়েছে, যা মূলত কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ইনসেনটিভ পরিকল্পনার অংশ। এই ধরণের স্টক ইউনিট সাধারণত সংস্থার পারফরম্যান্সের সঙ্গে যুক্ত থাকে, এবং এক্সারসাইজ করার সময় শেয়ারের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এর পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
স্টক ভিত্তিক পারিশ্রমিক কর্মীদের মধ্যে কোম্পানির মালিকানার অনুভব সৃষ্টি করলেও, যখন তা অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ে কেন্দ্রীভূত হয়, তখন এটি সংস্থার ভেতর ও বাইরে ন্যায়সংগততার প্রশ্ন তোলে।
পারেখের প্রতিক্রিয়া
তবে কর্মীদের অবদান সম্পর্কে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সালিল পারেখ বলেন, “আমাদের ৩,২০,০০০-রও বেশি কর্মীর অবিচল নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমই আমাদের ক্লায়েন্টদের সাফল্য এনে দিয়েছে। তাদের অবদানই ইনফোসিস-এর জন্য টেকসই মূল্য সৃষ্টি সম্ভব করেছে।”
এই বিবৃতিতে তিনি কর্মীদের মূল্যায়ন করলেও, প্রকৃত বেতনবৃদ্ধির হার যে বেতনবৈষম্যকে আরও স্পষ্ট করেছে, তা নিয়ে সংস্থার অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক মহলে প্রশ্ন উঠছে।
নেতৃত্বে ধারাবাহিকতা
২০১৮ সালে ইনফোসিসের নেতৃত্ব নেওয়ার পর, সালিল পারেখকে সংস্থায় স্থিতিশীলতা এবং বৃদ্ধির পথ দেখানোর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। একাধিক বৈশ্বিক আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ইনফোসিস তার বাজার অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পারেখের অধীনে সংস্থার স্ট্র্যাটেজিক রূপান্তর এবং ক্লাউড, ডিজিটাল এবং এআই-ভিত্তিক পরিষেবায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি সংস্থাকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রেখেছে।
তবে এই অর্থনৈতিক সাফল্যের ছায়ায় কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া বৈষম্য এবং ক্ষোভ আগামী দিনে ইনফোসিসের মানবসম্পদ নীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।
সারাংশে, FY25-এ ইনফোসিস সিইও সালিল পারেখের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি যেমন কোম্পানির স্টক পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্বের পুরস্কার হিসাবে দেখা যেতে পারে, তেমনই এটি ভারতীয় কর্পোরেট জগতের চিরন্তন প্রশ্ন—নেতৃত্ব বনাম সাধারণ কর্মী—এই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।