ইনফোসিস, ভারতীয় IT জায়ান্ট, সম্প্রতি প্রায় ৭০০ প্রশিক্ষণার্থীকে বরখাস্ত করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই দুই বছর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও মাত্র গত অক্টোবর মাসে তারা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। এই বরখাস্তের ঘটনা একটি বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে (PMO) আবেদন করেছেন তাদের পুনর্বহালের জন্য।
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫ তারিখে, ইনফোসিস ৭০০ প্রশিক্ষণার্থীকে তাদের মাইসুরু ক্যাম্পাস থেকে বরখাস্ত করে। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তবে, এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বরখাস্ত হওয়া কর্মীরা দাবি করেছেন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অবিচারপূর্ণ এবং পূর্বের তুলনায় অনেক কঠিন ছিল, যার কারণে অনেকেই সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
বরখাস্ত হওয়া কর্মীরা দাবি করেছেন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি এবং কঠোর শর্তে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, যা তাদের পক্ষে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হয়নি। তারা এই অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে পুনর্বহাল এবং ভবিষ্যতে এমন ধরনের বরখাস্তের প্রতিবিধান।
এছাড়াও, কর্মীরা দাবি করেছেন যে ইনফোসিস কর্তৃপক্ষ তাদের যথাযথভাবে জানায়নি যে কবে এবং কেন তাদের মূল্যায়ন হবে। অনেকের মতে, কোম্পানির নীতি অনুযায়ী, প্রশিক্ষণার্থীদের বেশ কিছু সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা পায়নি।
এই বরখাস্তের ঘটনায় সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রণালয় কন্নড় রাজ্যের শ্রম কমিশনারকে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে এবং তাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্য সরকার প্রযোজ্য শ্রম আইন অনুযায়ী এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপযুক্ত।
এছাড়া, নোটিশটি ন্যাসেন্ট ইনফরমেশন টেকনোলজি এমপ্লয়িস সেনেটের (NITES) প্রেসিডেন্ট হরপ্রীত সিং সলুজাকেও পাঠানো হয়েছে, যারা এই বিষয়ে আরও কর্মীদের সহায়তা করছেন। NITES হল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইটি কর্মী কল্যাণ সংস্থা, যারা আইটি কর্মীদের অধিকারের জন্য কাজ করে।
ইনফোসিস কোম্পানি তাদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করেছে। সেখানে তারা জানিয়েছে যে, তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে প্রশিক্ষণার্থীদের জানানো হয়েছে এবং তাদের নীতি অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কোম্পানি দাবি করেছে যে, পরীক্ষায় ফলস্বরূপ যারা সঠিকভাবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি, তারা কেবলমাত্র তাদের চুক্তি অনুযায়ী বরখাস্ত হয়েছে।
ইনফোসিস আরও জানিয়েছে, তাদের কর্মীদের জন্য আউটপ্লেসমেন্ট সেবা, সেবা ছাড়পত্র, ক্ষতিপূরণ এবং পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ৯৮% প্রশিক্ষণার্থীদের এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তারা বলেছে যে, কোম্পানি যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজস্ব খরচে ছিল এবং কোনো ধরনের অভিযোগ নেই।
ইনফোসিসের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে। কর্মীরা বলছেন, এই ধরনের বরখাস্তের ঘটনা অন্যদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত, যারা ভবিষ্যতে আইটি কোম্পানিতে চাকরি করতে চান। তারা মনে করেন যে, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং ন্যায্য হওয়া উচিত।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে, এই ঘটনাটি কর্মীদের অধিকার, শ্রম আইন এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আরও আলোচনা উত্থাপন করেছে।
এই ঘটনা, শেষ পর্যন্ত, ভারতের আইটি শিল্পের পরিবেশ এবং কর্মীদের সাথে কোম্পানিগুলির সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মীদের জন্য এই পরিস্থিতি একটি বড় শিক্ষা হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এমন কোনো পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ইনফোসিসের এই বরখাস্তের ঘটনা শুধু প্রতিষ্ঠানটির জন্য নয়, দেশের সমস্ত আইটি কোম্পানির জন্য একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে। কতটা স্বচ্ছ এবং ন্যায্যভাবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে, তা এখন পুরো কর্মী সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, সরকারের ভূমিকা এবং তার হস্তক্ষেপও কর্মী অধিকারের বিষয়টি আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।