ভারতীয় আইটি স্টার্টআপগুলি কেন ব্যাপক ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হচ্ছে?

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) স্টার্টআপগুলি ২০২৫ সালে একটি গুরুতর সংকটের (IT layoffs) মুখোমুখি হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত প্রসার এবং অর্থায়নের ঘাটতির কারণে…

Why Indian IT Startups Are Facing Massive Layoffs in 2025

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) স্টার্টআপগুলি ২০২৫ সালে একটি গুরুতর সংকটের (IT layoffs) মুখোমুখি হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত প্রসার এবং অর্থায়নের ঘাটতির কারণে এই খাতে ব্যাপক ছাঁটাই চলছে। এই পরিস্থিতি ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য একটি উদ্বেগজনক সংকেত। এই প্রতিবেদনে আমরা এই সমস্যার কারণ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।

ছাঁটাইয়ের পেছনের কারণ
২০২৫ সালে ভারতীয় আইটি স্টার্টআপগুলিতে ছাঁটাইয়ের প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং এআই প্রযুক্তির দ্রুত গ্রহণ। বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ায়, অনেক স্টার্টআপ তাদের ব্যয় হ্রাস করতে বাধ্য হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ওলা ইলেকট্রিক ২০২৫ সালে প্রায় ১,০০০ কর্মচারী এবং চুক্তিভিত্তিক শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে, যা তাদের আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং লাভজনকতার দিকে মনোনিবেশ করার প্রচেষ্টার অংশ। একইভাবে, কথোপকথনমূলক এআই ইউনিকর্ন গুপশুপ ৫০০ কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে, যার মধ্যে অনেকে তাদের অধিগ্রহণকৃত সংস্থাগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই ছাঁটাইগুলি কোম্পানিগুলির দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি এবং এআই-চালিত গ্রাহক সংযোগের জন্য প্রয়োজন pictured as necessary for long-term growth and AI-driven customer engagement.

   

অন্যদিকে, অর্থায়নের অভাবও একটি বড় কারণ। ২০২২ সালে শুরু হওয়া “ফান্ডিং শীতকাল” এখনও চলছে, যার ফলে স্টার্টআপগুলি তাদের রানওয়ে বাড়ানোর জন্য ব্যয় হ্রাস করছে। ইনক৪২-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩,৬০০ কর্মচারী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতি বিশেষ করে এডটেক, কনজিউমার সার্ভিসেস এবং ই-কমার্স সেক্টরে বেশি দেখা যাচ্ছে, যেখানে অতিরিক্ত নগদ ব্যয়ের প্রবণতা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, জেনওয়াইজ, একটি সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য অ্যাপ-ভিত্তিক কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম, তার ২০% কর্মীবাহিনী ছাঁটাই করেছে, কারণ তারা নতুন অধ্যায়ন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এআই এবং অটোমেশনের ভূমিকা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের ক্রমবর্ধমান গ্রহণ ভারতীয় আইটি স্টার্টআপগুলির জন্য একটি দ্বি-ধারী তলোয়ার হিসেবে কাজ করছে। একদিকে, এআই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং দক্ষতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে এটি অনেক প্রথাগত ভূমিকাকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলছে। গ্রাহক পরিষেবা, ডেটা বিশ্লেষণ এবং কনটেন্ট তৈরির মতো কাজগুলি এখন এআই-চালিত সিস্টেম দ্বারা দ্রুত এবং সাশ্রয়ীভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এই প্রবণতা মধ্য-স্তরের কর্মচারীদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, যারা এআই এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। রোহিত আডলাখা, ডিএক্সসি টেকনোলজির চিফ ডিজিটাল অফিসার, তার লিঙ্কডইন পোস্টে বলেছেন, “ভবিষ্যৎ তাদের জন্য যারা পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করে। ভারতীয় টেক পেশাদারদের এআই এবং অটোমেশনের মতো উদীয়মান প্রযুক্তির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে হবে।”

অর্থনীতি ও সমাজে প্রভাব
এই ছাঁটাইগুলি শুধুমাত্র কর্মচারীদের জন্য নয়, ভারতীয় অর্থনীতি এবং সমাজের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। আইটি সেক্টর ভারতের মধ্যবিত্তের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থানের উৎস। ছাঁটাইয়ের ফলে ভোক্তা চাহিদা কমছে, যা পর্যটন, বিলাসবহুল কেনাকাটা এবং রিয়েল এস্টেটের মতো খাতে প্রভাব ফেলছে। ব্যাঙ্কগুলি ঋণ প্রদানে আরও সতর্ক হয়ে উঠছে, যা বাড়ি এবং গাড়ির বিক্রয়ে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও, এই পরিস্থিতি কর্মচারীদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে, যা উৎপাদনশীলতা এবং কর্মক্ষেত্রের মনোবলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

Advertisements

সমাধানের পথ
এই সংকট মোকাবেলায় দক্ষতা উন্নয়ন এবং পুনঃদক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে ভারতীয় টেক পেশাদারদের এআই, ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং সাইবারসিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রে নিয়মিত শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলির উচিত দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা। উদাহরণস্বরূপ, নাসকম ফিউচারস্কিলসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি কর্মচারীদের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে সহায়ক হতে পারে।

এছাড়াও, স্টার্টআপগুলির উচিত তাদের ব্যবসায়িক মডেল পুনর্বিবেচনা করা এবং লাভজনকতার উপর জোর দেওয়া। অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবেলায়, স্টার্টআপগুলি বিকল্প অর্থায়নের উৎস যেমন ক্রাউডফান্ডিং বা সরকারী অনুদানের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকেও স্টার্টআপ-বান্ধব নীতি এবং প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে, যা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।

ভারতীয় আইটি স্টার্টআপগুলির ২০২৫ সালের ছাঁটাই সংকট একটি জটিল সমস্যা, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং অর্থায়নের অভাবের সমন্বয়ে সৃষ্ট। এই পরিস্থিতি কেবল কর্মচারীদের জন্যই নয়, সমগ্র অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তবে, সঠিক দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসায়িক কৌশল এবং সরকারী সহায়তার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ভারতের আইটি স্টার্টআপগুলির উচিত এই পরিবর্তনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে নতুন প্রযুক্তি এবং বাজারের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া।