কলকাতা, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) স্টার্টআপগুলি (IT Startups) দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে, যেখানে কলকাতা ও শিলিগুড়ি আইটি হাব হিসেবে উঠে আসছে। তবে, এই দ্রুত বর্ধনশীল খাতে স্টার্টআপগুলি একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের বৃদ্ধি ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আইটি স্টার্টআপগুলির মুখোমুখি হওয়া শীর্ষ পাঁচটি আইনি সমস্যা এবং সেগুলি মোকাবিলার উপায়ও রয়েছে৷
Top 5 Legal Challenges for IT Startups in India

১. ব্যবসায়িক কাঠামো নির্বাচন ও নিবন্ধনের জটিলতা
আইটি স্টার্টআপগুলির (Startups) জন্য সঠিক ব্যবসায়িক কাঠামো নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতে সোল প্রোপ্রাইটরশিপ, পার্টনারশিপ, লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ (এলএলপি) এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মতো বিভিন্ন কাঠামো রয়েছে। প্রতিটি কাঠামোর নিজস্ব আইনি, কর এবং সম্মতি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অনেক আইটি স্টার্টআপ প্রাথমিকভাবে সোল প্রোপ্রাইটরশিপ বেছে নেয় এর সরলতার জন্য, কিন্তু এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় নয় কারণ এতে সীমিত দায়বদ্ধতা এবং কাঠামোগত শাসনের অভাব থাকে।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য, তবে এর নিবন্ধন প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ২০১৩ অনুসারে, বার্ষিক ফাইলিং, স্ট্যাটুটরি রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ এবং অডিটের মতো সম্মতি মেনে চলতে হয়, যা অনেক নতুন উদ্যোক্তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। সমাধান হিসেবে, আইনি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া এবং স্টার্টআপ ইন্ডিয়া পোর্টালের মাধ্যমে ডিপিআইআইটি স্বীকৃতি অর্জন করা উচিত, যা কর ছাড় এবং সহজ সম্মতির সুবিধা প্রদান করে।
Also Read | কলকাতায় অফিস ভাড়ার উত্থানে কীভাবে ছোট স্টার্টআপগুলি সংকটে পড়ছে?
২. ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (আইপি) সুরক্ষা
আইটি স্টার্টআপগুলির (Startups) জন্য তাদের সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন, ব্র্যান্ড নাম এবং ডিজাইনের মতো মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে ট্রেডমার্ক, কপিরাইট এবং পেটেন্টের মাধ্যমে আইপি সুরক্ষা পাওয়া যায়, তবে এই প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লিপকার্টের মতো কোম্পানি তাদের ‘মারকিউ’ ব্র্যান্ড নাম নিয়ে ট্রেডমার্ক বিতর্কে জড়িয়েছিল। আইপি সুরক্ষার অভাবে প্রতিযোগীরা স্টার্টআপের উদ্ভাবনের সুবিধা নিতে পারে, যা প্রতিযোগিতামূলক ক্ষতি এবং আয় হ্রাসের কারণ হয়। স্টার্টআপগুলির উচিত আইপি অ্যাটর্নিদের সঙ্গে কাজ করা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপক আইপি অনুসন্ধান করা।
৩. ডেটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা আইন
ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ২০২৩ (ডিপিডিপি অ্যাক্ট) এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট, ২০০০ অনুসারে, আইটি স্টার্টআপগুলিকে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। ডেটা লোকালাইজেশন, সম্মতি ব্যবস্থাপনা এবং ডেটা লঙ্ঘন রিপোর্টিংয়ের মতো কঠোর বিধান মেনে চলতে হয়। অ-সম্মতির জন্য ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আইটি স্টার্টআপগুলি প্রায়ই সীমিত সম্পদের কারণে শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা নীতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। সমাধান হিসেবে, তাদের ব্যাপক গোপনীয়তা নীতি তৈরি করা, কর্মীদের ডেটা হ্যান্ডলিং প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং নিয়মিত সম্মতি অডিট করা উচিত।

Also Read | সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপ! অনলাইন হুমকির বিরুদ্ধে বাংলার নতুন প্রতিরক্ষা
৪. কর সম্মতি ও নিয়ন্ত্রক জটিলতা
ভারতের কর ব্যবস্থা, যেমন জিএসটি, টিডিএস এবং ইনকাম ট্যাক্স, আইটি স্টার্টআপগুলির (Startups) জন্য জটিল। অজ্ঞতা বা ভুলের কারণে অ-সম্মতি জরিমানা এবং আইনি বিরোধের দিকে নিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, টাটা কেমিক্যালস লিমিটেড বনাম কমিশনার অফ সেন্ট্রাল এক্সাইজ মামলায় আদালত স্পষ্ট করেছে যে কর আইনের অজ্ঞতা কোনো অজুহাত নয়। স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মতো স্কিমগুলি নির্দিষ্ট শর্তে কর ছাড় দেয়, তবে সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেকে এই সুবিধা হারায়। স্টার্টআপগুলির উচিত পেশাদার ট্যাক্স কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা এবং স্টার্টআপ ইন্ডিয়া স্কিমের সুবিধা গ্রহণ করা।৫. শ্রম
আইন সম্মতি
আইটি স্টার্টআপগুলি (Startups) কর্মী নিয়োগের সময় শ্রম আইন, যেমন মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট, ১৯৪৮, পেমেন্ট অফ গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন মেনে চলতে হয়। অ-সম্মতি জরিমানা, আইনি বিরোধ এবং ব্র্যান্ড ইমেজের ক্ষতি করে। স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার অধীনে এক বছরের জন্য নয়টি শ্রম আইনে স্ব-ঘোষণার মাধ্যমে পরিদর্শন থেকে ছাড় পাওয়া যায়, তবে এরপর সম্মতি বাধ্যতামূলক। স্পষ্ট কর্মসংস্থান চুক্তি এবং শ্রম আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এই সমস্যা এড়াতে সহায়ক।
সমাধানের পথ
আইটি স্টার্টআপগুলির জন্য এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্যায়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গে, কলকাতা ও শিলিগুড়ির মতো আইটি হাবগুলিতে স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এবং রাজ্যের স্টার্টআপ (Startups) নীতির সুবিধা গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন ডিপিআইআইটি স্বীকৃতি, ট্যাক্স হলিডে এবং সিড ফান্ডিং। নিয়মিত সম্মতি অডিট, ডিজিটাল সম্মতি সরঞ্জাম ব্যবহার এবং শিল্প সংস্থার সঙ্গে নেটওয়ার্কিং আইনি ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এই পদক্ষেপগুলি আইটি স্টার্টআপগুলিকে (Startups) ভারতের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে এবং বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করবে।