গ্লাসডোর বনাম বাস্তবতা! কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বেতন

কলকাতা (Kolkata) ভারতের প্রধান আইটি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গত দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (Software Engineer) একটি লাভজনক পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়,…

Software Engineer Salary in Kolkata 2025: Glassdoor Estimates vs Real-World Earnings

কলকাতা (Kolkata) ভারতের প্রধান আইটি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গত দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (Software Engineer) একটি লাভজনক পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং কলকাতার তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার পথ। তবে, ২০২৫ সালে কলকাতায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের গড় বেতন কত? গ্লাসডোরের মতো প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত বেতনের তথ্য বাস্তবতার সঙ্গে কতটা মেলে? এই প্রতিবেদনে আমরা কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বেতন, আইটি বেতন কাঠামো, এবং গ্লাসডোরের তথ্যের সঙ্গে বাস্তব অবস্থার তুলনা বিশ্লেষণ করব।

গ্লাসডোরের তথ্য: কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন
গ্লাসডোরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত), কলকাতায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের গড় বেতন বছরে প্রায় ৫.৯৮ লাখ টাকা, যা ঘণ্টায় ২৮৮ টাকার সমতুল্য। এই গড় বেতন জাতীয় গড়ের তুলনায় ২৭% কম। তবে, বেতনের পরিসর ৪.১৮ লাখ টাকা (২৫তম পার্সেন্টাইল) থেকে ৮.৭৫ লাখ টাকা (৭৫তম পার্সেন্টাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। শীর্ষ উপার্জনকারীরা (৯০তম পার্সেন্টাইল) বছরে ১২.০৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এই তথ্য ৩০৮১ জন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেনামে জমা দেওয়া বেতনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

   

গ্লাসডোর আরও জানায়, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গড় মোট ক্ষতিপূরণ ৫.৯৮ লাখ টাকা, যার মধ্যে গড় বেস বেতন ৫.৫৩ লাখ টাকা এবং অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ (বোনাস, কমিশন, প্রফিট শেয়ারিং) প্রায় ৪৫,০০০ টাকা। তবে, এই তথ্য কলকাতার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বাস্তব আয়ের পুরো চিত্র প্রতিফলিত নাও করতে পারে, কারণ এটি কেবলমাত্র গ্লাসডোরে জমা দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে।

বাস্তবতা: কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন
বাস্তবে, কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন অভিজ্ঞতা, কোম্পানি, এবং বিশেষায়িত দক্ষতার উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বেতন ২০২৫ সালে প্রায় ৫.৯ লাখ টাকা, যা বেঙ্গালুরু (৮.৮ লাখ টাকা) বা হায়দ্রাবাদ (৭.৮ লাখ টাকা) এর তুলনায় কম। তবে, কলকাতার জীবনযাত্রার খরচ জাতীয় গড়ের তুলনায় ২% কম, যা এই বেতনকে তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে।

Software Engineer Salary in Kolkata 2025: Glassdoor Estimates vs Real-World Earnings
Software Engineer Salary in Kolkata 2025: Glassdoor Estimates vs Real-World Earnings
  • এন্ট্রি-লেভেল (০-২ বছরের অভিজ্ঞতা): নতুন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত বছরে ২.৩২ লাখ থেকে ৪.৭৭ লাখ টাকা আয় করেন। কোম্পানি যেমন টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) বা কগনিজেন্টে এই বেতন ৩.৫-৪ লাখ টাকা হতে পারে।
  • মধ্য-স্তর (২-৫ বছরের অভিজ্ঞতা): ২ থেকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়াররা গড়ে ৩.১৪ লাখ থেকে ৫.৮৪ লাখ টাকা আয় করেন। এই পর্যায়ে, AI, মেশিন লার্নিং, বা ক্লাউড কম্পিউটিং-এ দক্ষতা থাকলে বেতন ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • সিনিয়র-লেভেল (৫-১০ বছরের অভিজ্ঞতা): সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা গড়ে ৪.০৭ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন। ডেলয়েটের মতো কোম্পানিতে এই বেতন ১৪.৩৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • অভিজ্ঞ পেশাদার (১০+ বছর): ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা ৪.৯২ লাখ থেকে ২৯.১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন, বিশেষ করে উচ্চ দক্ষতা যেমন সাইবারসিকিউরিটি বা ব্লকচেইনের ক্ষেত্রে।

গ্লাসডোর বনাম বাস্তবতা
গ্লাসডোরের তথ্য কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবতার সঙ্গে মেলে, তবে এটি সবসময় পুরো চিত্র প্রতিফলিত করে না। গ্লাসডোরে বেতনের তথ্য বেনামে জমা দেওয়া হয়, যা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কোম্পানি বা কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গ্লাসডোরে উল্লেখিত ৫.৯৮ লাখ টাকার গড় বেতন টিসিএস বা কগনিজেন্টের মতো বড় আইটি কোম্পানির এন্ট্রি-লেভেল কর্মচারীদের জন্য বাস্তবসম্মত হতে পারে, তবে ছোট স্টার্টআপ বা স্থানীয় কোম্পানিতে বেতন প্রায়ই ৩-৪ লাখ টাকার মধ্যে থাকে।

অন্যদিকে, ডেলয়েটের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গড়ে ১৪.৩৪ লাখ টাকা প্রদান করে, যা গ্লাসডোরের শীর্ষ পরিসরের (১২.০৬ লাখ টাকা) থেকেও বেশি। এছাড়া, কলকাতায় কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রকল্পের গুণমান এবং কর্ম-জীবনের ভারসাম্যও বেতনের উপর প্রভাব ফেলে। অ্যাম্বিশনবক্সের তথ্য অনুযায়ী, কিছু কোম্পানিতে নিম্নমানের প্রকল্পে এক বছরের জন্য আটকে থাকতে হয়, যা বেতন বৃদ্ধি বা প্রকল্প পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করে।

Advertisements

বেতনকে প্রভাবিত করার কারণগুলো
কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন নির্ধারণে বেশ কিছু কারণ প্রভাব ফেলে:

  • অভিজ্ঞতা: এন্ট্রি-লেভেল ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় ৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পেশাদাররা দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেতন পান। উদাহরণস্বরূপ, ১৫-২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ইঞ্জিনিয়ার গড়ে ৫.৩৯ লাখ টাকা আয় করেন।
  • দক্ষতা: AI, মেশিন লার্নিং, বা ব্লকচেইনের মতো বিশেষায়িত দক্ষতা বেতন ১৫-২০% বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • কোম্পানি: ডেলয়েট, অ্যাকসেনচারের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি স্থানীয় কোম্পানির তুলনায় বেশি বেতন দেয়।
  • জীবনযাত্রার খরচ: কলকাতার কম জীবনযাত্রার খরচ বেতনকে তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয় করে, তবে কোম্পানির সংখ্যা কম থাকায় চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত।

গ্লাসডোর বনাম বাস্তবতার পার্থক্য
গ্লাসডোরের তথ্য প্রায়ই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বা প্রযুক্তি কেন্দ্রের উপর বেশি নির্ভর করে, যা কলকাতার স্থানীয় কোম্পানি বা স্টার্টআপের বেতনকে পুরোপুরি প্রতিফলিত নাও করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ার্ল্ড স্যালারিজের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় গড় বেতন ৩.৯৪ লাখ টাকা, যা গ্লাসডোরের ৫.৯৮ লাখ টাকার তুলনায় কম। এই পার্থক্যের কারণ হলো গ্লাসডোরের তথ্যে বড় কোম্পানির বেতন বেশি প্রতিনিধিত্ব করে।

অন্যদিকে, রেডিটের মতো প্ল্যাটফর্মে কর্মচারীরা জানিয়েছেন, কলকাতায় ৫.৯ লাখ টাকার গড় বেতন কম জীবনযাত্রার খরচের কারণে মোটামুটি ভালো জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট। তবে, প্রমোশন এবং বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রায়ই স্থানীয় বাজারের সুবিধা নেয়, যা কর্মচারীদের জন্য হতাশাজনক।

২০২৫ সালে কলকাতায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বেতন গ্লাসডোর অনুযায়ী ৫.৯৮ লাখ টাকা, তবে বাস্তবে এটি ৩.৯৪ লাখ থেকে ১৪.৩৪ লাখ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হয়। অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, এবং কোম্পানির ধরন বেতনের উপর বড় প্রভাব ফেলে। গ্লাসডোরের তথ্য বড় কোম্পানির উপর বেশি নির্ভরশীল, যা স্থানীয় বাজারের পুরো চিত্র প্রতিফলিত নাও করতে পারে। তরুণ ইঞ্জিনিয়ারদের উচিত বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জন করা এবং বেতন বৃদ্ধির জন্য চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ খোঁজা। কলকাতার কম জীবনযাত্রার খরচ এই বেতনকে আকর্ষণীয় করলেও, বেঙ্গালুরু বা হায়দ্রাবাদের তুলনায় সুযোগ কম থাকায় ক্যারিয়ার বৃদ্ধির জন্য স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।