কলকাতা ভারতের পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, সাম্প্রতিক সময়ে তার রিয়েল এস্টেট বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। বিশেষ করে, অফিস স্পেসের ভাড়া (Office Rent in Kolkata) বৃদ্ধি শহরের ছোট স্টার্টআপগুলির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে, নাইট ফ্রাঙ্ক ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, কলকাতায় অফিস ভাড়া ৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শীর্ষ আটটি শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ভাড়া বৃদ্ধি শহরের আইটি সেক্টর এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে ছোট উদ্যোগগুলির জন্য যারা সীমিত বাজেটে কাজ করে।
কলকাতার সল্টলেক সেক্টর V এবং রাজারহাটের মতো আইটি হাবগুলিতে অফিস স্পেসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২৪ সালে, সিবিআরই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতায় ১.৩ মিলিয়ন বর্গফুট অফিস স্পেস লিজ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি। তবে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে লিজের পরিমাণ ১৬% কমে ০.১৬ মিলিয়ন বর্গফুটে নেমে এসেছে। এই হ্রাস সত্ত্বেও, ভাড়া বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে, যা ছোট স্টার্টআপগুলির জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। গড়ে অফিস ভাড়া এখন প্রতি বর্গফুটে ৪২ টাকা, যা বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইয়ের মতো শহরগুলির তুলনায় এখনও কম হলেও, ছোট স্টার্টআপগুলির জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য ব্যয়।
ছোট স্টার্টআপগুলি, যারা প্রায়শই সীমিত পুঁজি এবং বিনিয়োগ নিয়ে কাজ শুরু করে, এই ভাড়া বৃদ্ধির কারণে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কলকাতার আইটি সেক্টরে নতুন উদ্যোগগুলি প্রায়শই সল্টলেক সেক্টর V বা নিউ টাউনের মতো এলাকায় অফিস স্থাপনের চেষ্টা করে, যেখানে আধুনিক অবকাঠামো এবং সংযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ভাড়ার উচ্চ হার তাদের জন্য এই অবস্থানগুলিতে টিকে থাকা কঠিন করে তুলছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছোট স্টার্টআপ যার ৫০০ বর্গফুটের অফিস স্পেস প্রয়োজন, তাকে এখন মাসিক ২১,০০০ টাকার বেশি খরচ করতে হবে, যা তাদের অপারেশনাল বাজেটের একটি বড় অংশ দখল করে নেয়।
এই সমস্যা শুধুমাত্র ভাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অফিস স্পেসের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য খরচ, যেমন রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ,ও বাড়ছে। এছাড়া, অনেক স্টার্টআপের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লিজ চুক্তি সই করা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তাদের ব্যবসায়িক মডেল এবং আয়ের ধারা এখনও স্থিতিশীল নয়। ফলস্বরূপ, অনেকে কো-ওয়ার্কিং স্পেস বা শেয়ার্ড অফিসের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এই কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলির খরচও বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, সল্টলেক সেক্টর V-এর একটি কো-ওয়ার্কিং স্পেসে প্রতি সিটের জন্য মাসিক খরচ ৪,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, যা ছোট দলগুলির জন্য এখনও ব্যয়বহুল।
কলকাতার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য এই ভাড়া বৃদ্ধি একটি দ্বিধারী তলোয়ার। একদিকে, এটি শহরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আইটি সেক্টরে ক্রমবর্ধমান চাহিদার ইঙ্গিত দেয়। ক্রেডাই বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ পানসারি বলেছেন, “কলকাতার বাণিজ্যিক বাজারে ভারত-কেন্দ্রিক ব্যবসাগুলির ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি আগামী বছরগুলিতে এই সেক্টরের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্রবৃদ্ধির পথ নির্দেশ করছে।” তবে, এই বৃদ্ধি ছোট স্টার্টআপগুলির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যারা বড় কর্পোরেট বা গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি)-এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না।
সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোগ কিছু সমাধানের চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, স্টার্টআপ বেঙ্গল এবং বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাবের মতো উদ্যোগ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কর সুবিধা এবং ভর্তুকি প্রদান করছে। তবে, এই সুবিধাগুলি প্রায়শই বড় কোম্পানিগুলির জন্য বেশি অ্যাক্সেসযোগ্য, এবং ছোট স্টার্টআপগুলি এই সুযোগগুলি পেতে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া, কলকাতায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যেমন মেট্রো সম্প্রসারণ এবং নতুন আইটি পার্ক, ভাড়া বৃদ্ধির অবদান রাখছে।
এই পরিস্থিতিতে স্টার্টআপগুলির জন্য কিছু সমাধান প্রয়োজন। কো-ওয়ার্কিং স্পেসগুলির প্রসার একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। কলকাতার অফিস ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ছোট স্টার্টআপগুলি কীভাবে সংকটে পড়ছে?
সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। স্টার্টআপ বেঙ্গল এবং বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাবের মতো উদ্যোগগুলি ছোট স্টার্টআপের জন্য আরও সাশ্রয়ী কো-ওয়ার্কিং স্পেস প্রদান করতে প্রস্তুত। এছাড়া, সরকারি ভর্তুকি এবং ট্যাক্স সুবিধার মাধ্যমে ছোট স্টার্টআপগুলিকে তাদের ব্যয় কমানোর জন্য সহায়তা করা যায়।
For more updates, follow Kolkata24x7 on Facebook, Twitter, Instagram, Youtube; join our community on Whatsapp