একটি অসাধারণ খবর ভারতের প্রযুক্তি ও শিল্প জগতকে চমকে দিয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি মেটা (Meta) (Meta), যারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ-এর মালিক, ভারতীয় বাজারে নতুন দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের নতুন উদ্যোগে হিন্দি ভাষায় এআই চ্যাটবট তৈরির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কন্ট্রাক্টরদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যার প্রতি ঘণ্টার মজুরি হবে প্রায় ৪৮৫০ টাকা! এই খবরটি সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার ঝড় তুলেছে এবং ভারতের প্রযুক্তি ও শিল্প জগতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নতুন দিন, নতুন সুযোগ
মেটা (Meta)র এই উদ্যোগটি ভারতের বিশাল বাজারকে লক্ষ্য করে গড়ে উঠছে। ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৫০০ মিলিয়নের বেশি এবং তাদের মধ্যে ৭০% ব্যবহারকারী স্থানীয় ভাষায় কনটেন্ট পছন্দ করেন, যা ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ স্টাডির একটি প্রধান আবিষ্কার। এই তথ্যের ভিত্তিতে মেটা (Meta) তার এআই প্রযুক্তিকে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করছে। হিন্দি ভাষায় চ্যাটবট তৈরি করে তারা ভারতীয় ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই চ্যাটবটগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ব্যক্তিগতকৃত অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।
Also Read | কেন ভারতীয় স্টার্টআপগুলি নগদ অর্থের সংকটে পড়ছে
কিন্তু এখানে একটি বিস্ময়কর বিষয় হলো, মেটা (Meta) এই কাজের জন্য মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের নিয়োগ দিচ্ছে, যারা হিন্দি ভাষায় দক্ষ। প্রতি ঘণ্টায় ৫৫ ডলার (প্রায় ৪৮৫০ টাকা) মজুরি দেওয়া হচ্ছে, যা ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পের মানের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি। এই কন্ট্রাক্টরদের নিয়োগ স্টাফিং এজেন্সি যেমন ক্রিস্টাল ইকোয়েশন ও অ্যাকুয়েন্ট ট্যালেন্টের মাধ্যমে করা হচ্ছে।
কী দরকার এই কাজে?
মেটা (Meta) শুধুমাত্র কোডার বা প্রোগ্রামার খুঁজছে না। তারা চায় এমন ব্যক্তি যারা হিন্দি ভাষায় পারদর্শী এবং কমপক্ষে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা রাখে গল্পকথন, চরিত্র গঠন ও এআই কনটেন্ট ওয়ার্কফ্লোতে। এই চাকরির প্রয়োজনীয়তা থেকে বোঝা যায় যে মেটা (Meta) চায় তার চ্যাটবটগুলো শুধুমাত্র ভাষাগতভাবে সঠিক হবে না, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ২০২২ সালের একটি স্ট্যানফোর্ড স্টাডি অনুসারে, সাংস্কৃতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ চ্যাটবট ব্যবহারকারীর আকর্ষণ ৩৫% বাড়িয়ে দেয়, যা মেটা (Meta)র এই পদক্ষেপের পেছনে একটি বড় কারণ।
ভারতের প্রতিভা উপেক্ষা কেন?
এই খবরে একটি প্রশ্ন উঠেছে যে ভারতের নিজস্ব প্রচুর প্রযুক্তি ও এআই দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও মেটা (Meta) কেন মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের নিয়োগ দিচ্ছে? ভারতীয় এআই/এমএল ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বার্ষিক মজুরি ২৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ ডলারের মধ্যে, যেখানে মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের জন্য এটি ১৪০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ ডলার হতে পারে। এই পার্থক্য বোঝাতে পারে যে মেটা (Meta) আন্তর্জাতিক স্তরের বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা এবং গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের মান রক্ষা করতে চায়। তবে এটি ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা হচ্ছে, কারণ এই উচ্চ মজুরির কাজ ভারতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
Also Read | আইটি স্টার্টআপের শীর্ষ ৫ আইনি চ্যালেঞ্জ, সম্মতি নিশ্চিত করুন
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
মেটা (Meta)র এই উদ্যোগ ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে মাধ্যমে নিয়ে আসছে প্রযুক্তির জগতে। হিন্দি ছাড়াও ভবিষ্যতে অন্যান্য ভারতীয় ভাষা যেমন বাংলা, তামিল, তেলেগু ও মারাঠীতে এআই চ্যাটবট তৈরির পরিকল্পনা থাকতে পারে। ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্থানীয় ভাষার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, এবং ২০১৮ সালের একটি ফোর্বস রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৬-২০২১ এর মধ্যে নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯০% স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করবেন। এই প্রেক্ষাপটে মেটা (Meta)র এই পদক্ষেপ ভারতীয় বাজারে তার প্রভাব বাড়ানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তবে এই উদ্যোগের সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনাও জড়িত। গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিষয়টি একটি বড় উদ্বেগ। পূর্বে মেটা (Meta)র চ্যাটবট প্রকল্পে ব্যবহারকারীর সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা সংস্থার উপর প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়া, কেউ কেউ মনে করছেন যে ভারতীয় প্রতিভাকে উপেক্ষা করে মার্কিন কন্ট্রাক্টরদের নিয়োগ দেওয়া স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মেটা (Meta)র এই পদক্ষেপ ভারতীয় প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মধ্যে একটি নতুন সংযোগ স্থাপনের পথ খুলে দিয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ৪৮৫০ টাকা মজুরির সুযোগ হলেও, এটি ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি চিন্তার বিষয়। ভবিষ্যতে মেটা (Meta) যদি বাংলা বা অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় এই ধরনের উদ্যোগ নেয়, তাহলে ভারতের স্থানীয় প্রতিভাদের জন্য নতুন দরজা খোলা যেতে পারে। এই প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মাঝে ভারতের ভাষা ও সংস্কৃতি কীভাবে গ্লোবাল স্টেজে উঠবে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।