ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতে আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চালু হওয়া ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম (ECMS scheme)-এর আবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা জুলাইয়ের পরে বাড়ানো হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে সমর্থন জানিয়ে এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ১ মে চালু হয়। প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে, যা দেখে সরকার এই সময়সীমা কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, “আমরা এখন পর্যন্ত স্কিমটির জন্য ভালো সাড়া পেয়েছি। এই সাড়া বিবেচনা করেই আবেদন করার সময়সীমা অল্প কিছুদিনের জন্য বাড়ানো হতে পারে।”
কী এই ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম?
ECMS হল একটি মোট ২৩,০০০ কোটির (২৩০০০ কোটি টাকা) প্রকল্প, যার মূল লক্ষ্য হল দেশে ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য কমানো। ২৮ মার্চ জারি করা সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই স্কিমের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে বৃহৎ পরিসরের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি ঘরোয়া শিল্প সংস্থাগুলিকে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের (GVC) সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই স্কিমের মাধ্যমে ৫৯,৩৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আকর্ষণ, ৪,৫৬,৫০০ কোটি টাকার উৎপাদন, ৯১,৬০০টি সরাসরি চাকরি ও বিপুল পরিমাণে পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুরুতেই বিপুল সাড়া:
স্কিমটি ঘোষণার ২০ দিনের মধ্যেই ৭০টি সংস্থা আবেদন করেছে বলে মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই স্কিম নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে।
বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি যেমন টাটা ইলেকট্রনিক্স, ডিক্সন টেকনোলজিস, এবং ফক্সকন ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

কাদের জন্য এই স্কিম?
এই স্কিম মূলত সেইসব সংস্থার জন্য যেগুলি ভারতে ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টের বড় পরিসরে উৎপাদন করতে চায়। এতে দেশীয় সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থারাও অংশ নিতে পারবে। স্কিমটি মূলত অ্যাক্টিভ, প্যাসিভ, এবং ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পোনেন্ট উৎপাদনের ওপর কেন্দ্রিত।
সরকারের বক্তব্য, এখনো পর্যন্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। এই প্রকল্প সেই নির্ভরতা কাটিয়ে ভারতে নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ:
এই স্কিমের মাধ্যমে সরকার আশা করছে যে আগামী কয়েক বছরে ₹৫৯,৩৫০ কোটির বিনিয়োগ আসবে। এর ফলে দেশজ উৎপাদন বাড়বে ₹৪.৫৬ লক্ষ কোটির বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, প্রায় ৯১,৬০০ জনের সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়াও পরোক্ষভাবে বহু মানুষ এর সুবিধা পাবেন।
বলা হচ্ছে, এই স্কিম ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ভিত শক্ত করতে সাহায্য করবে এবং নতুন স্টার্টআপদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।
প্রযুক্তি ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত:
সরকার বলছে, এই স্কিম শুধু উৎপাদন নয়, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D)-এর ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও স্থানীয় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত একটি ‘হাব’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
শিল্প মহলের প্রতিক্রিয়া:
স্কিমটির ঘোষণার পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রি ফেডারেশন ও সংশ্লিষ্ট মহল থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অনেকেই বলছেন, এটি সরকারের একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ যা আগামী দশকে ভারতের প্রযুক্তি শিল্পকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-নির্ভরতা কমাতে ভারতের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে সাপ্লাই চেইনে পরিবর্তন আসছে, এবং ভারত এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।”
সময়সীমা বাড়লে নতুন সুযোগ:
যদিও সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সময়সীমা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেনি, তবে এই সম্ভাবনা যথেষ্ট জোরালো। এক্ষেত্রে যারা এখনো আবেদন করেনি, তাদের জন্য এটি একটি নতুন সুযোগ তৈরি করবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলি যাদের আবেদন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে, তারা এতে লাভবান হতে পারে।
ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম (ECMS) ভারতের প্রযুক্তি-ভবিষ্যৎ গঠনের এক বড় পদক্ষেপ। সরকারের সক্রিয় ভূমিকা, শিল্প মহলের আগ্রহ এবং সময়সীমা বাড়ার সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে এই স্কিম আগামী দিনে ভারতের বৈদ্যুতিন শিল্পে বিপুল পরিবর্তন আনতে চলেছে।