সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপ! অনলাইন হুমকির বিরুদ্ধে বাংলার নতুন প্রতিরক্ষা

ডিজিটাল যুগে ভারত দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তবে, ডিজিটালকরণের এই অগ্রগতির সঙ্গে বেড়েছে সাইবার হুমকির ঝুঁকি। ২০২৫ সালে ভারত ১৮ মিলিয়নেরও বেশি সাইবার…

Cybersecurity Startups in India: Bengal’s Rising Defense Against Cyber Threats

ডিজিটাল যুগে ভারত দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তবে, ডিজিটালকরণের এই অগ্রগতির সঙ্গে বেড়েছে সাইবার হুমকির ঝুঁকি। ২০২৫ সালে ভারত ১৮ মিলিয়নেরও বেশি সাইবার হামলার সম্মুখীন হয়েছে, যা ব্যবসা, সরকার এবং ব্যক্তিদের জন্য সাইবারসিকিউরিটির গুরুত্ব তুলে ধরে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপগুলি (Cybersecurity startups) অনলাইন হুমকির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিরক্ষা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। পশ্চিমবঙ্গ, যা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এই ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসছে। এই প্রতিবেদনে ভারতের, বিশেষ করে বাংলার, সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপগুলির ভূমিকা এবং তাদের অবদান নিয়ে আলোচনা করা হল।

ভারতের সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপের উত্থান
ভারতের সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং (এমএল), এবং ব্লকচেইনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ২০২৫ সালে ভারতে ১,৪৭০টিরও বেশি সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি বেঙ্গালুরু, পুনে এবং হায়দ্রাবাদের মতো শহরে অবস্থিত। তবে, পশ্চিমবঙ্গও এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কলকাতা এবং শিলিগুড়ির মতো শহরগুলিতে সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপ এবং আইটি নিরাপত্তা সমাধান প্রদানকারী সংস্থাগুলি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।

   

বাংলার সাইবারসিকিউরিটি ল্যান্ডস্কেপ
পশ্চিমবঙ্গের আইটি খাতে সাইবারসিকিউরিটির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। কলকাতা, ভারতের প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি, সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের জন্য উদ্ভাবনী স্টার্টআপগুলির আবির্ভাব দেখছে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতা-ভিত্তিক স্টার্টআপগুলি ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) জন্য কাস্টমাইজড সাইবারসিকিউরিটি সমাধান প্রদান করছে। এই স্টার্টআপগুলি ভার্চুয়াল সিআইএসও পরিষেবা, পেনিট্রেশন টেস্টিং, এবং রিয়েল-টাইম হুমকি শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞ।

উল্লেখযোগ্য সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপ
ভারতের শীর্ষস্থানীয় কিছু সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপের মধ্যে রয়েছে:

  • ক্লাউডএসইকে (CloudSEK): বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক এই স্টার্টআপ এআই-চালিত প্ল্যাটফর্ম XVigil ব্যবহার করে সাইবার হামলার পূর্বাভাস দেয়। এটি আইসিআইসিআই, ওলা এবং ক্রেডের মতো বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে।
  • উইজঙ্গল (WiJungle): এই স্টার্টআপ এআই-চালিত নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সলিউশন প্রদান করে এবং ২০১৮ সালে ডেটা সিকিউরিটি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (ডিএসসিআই) থেকে ‘মোস্ট ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট’ পুরস্কার জিতেছে।
  • সেকিউরডেন (Securden): চেন্নাই-ভিত্তিক এই স্টার্টআপ ডেভঅপস এবং ক্লাউড পরিবেশের জন্য অ্যাক্সেস সিকিউরিটি প্রদান করে।
  • ক্র্যাটিকাল (Kratikal): এই স্টার্টআপ থ্রেট ইন্টেলিজেন্স এবং ভিএপিটি (Vulnerability Assessment and Penetration Testing) পরিষেবায় বিশেষজ্ঞ।
  • অ্যাস্ট্রা সিকিউরিটি (Astra Security): এই স্টার্টআপ ওয়েব, মোবাইল এবং ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশনের জন্য স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল টেস্টিং প্রদান করে।

বাংলায়, যদিও সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপের সংখ্যা বেঙ্গালুরুর তুলনায় কম, কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতা-ভিত্তিক স্টার্টআপগুলি স্থানীয় ব্যবসার জন্য সাশ্রয়ী নিরাপত্তা সমাধান প্রদান করছে, যা এসএমই-দের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এছাড়াও, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইআইটি খড়গপুরের মতো প্রতিষ্ঠান সাইবারসিকিউরিটি গবেষণা এবং প্রশিক্ষণে অবদান রাখছে।

Advertisements

বাংলার ভূমিকা
পশ্চিমবঙ্গের আইটি ইকোসিস্টেম সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপগুলির জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষেত্র। কলকাতার রাজারহাট এবং সল্টলেকের আইটি হাবগুলি নতুন স্টার্টআপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করছে। রাজ্য সরকারের ডিজিটাল বাংলা উদ্যোগ এবং স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্প স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার একটি স্টার্টআপ স্থানীয় ব্যাঙ্ক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি এবং ফিশিং প্রতিরোধ সমাধান প্রদান করছে। এছাড়াও, শিলিগুড়ির মতো শহরে সাইবারসিকিউরিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠছে, যা তরুণ পেশাদারদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
ভারতের সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপগুলি কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন দক্ষ পেশাদারের অভাব, উচ্চ প্রতিযোগিতা এবং তহবিলের সীমাবদ্ধতা। তবে, সরকারের সাইবার সুরক্ষা নীতি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ এই খাতকে শক্তিশালী করছে। পশ্চিমবঙ্গে, সাইবারসিকিউরিটি প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা স্থানীয় স্টার্টআপগুলির জন্য সুযোগ তৈরি করছে।

ভারতের সাইবারসিকিউরিটি স্টার্টআপগুলি, বিশেষ করে বাংলার উদীয়মান প্রতিষ্ঠানগুলি, ডিজিটাল হুমকির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা গড়ে তুলছে। ক্লাউডএসইকে, উইজঙ্গল এবং অ্যাস্ট্রার মতো স্টার্টআপগুলি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাচ্ছে, যখন বাংলার স্থানীয় স্টার্টআপগুলি এসএমই এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করছে। সরকারি উদ্যোগ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমর্থনে, বাংলা সাইবারসিকিউরিটি খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের জন্য সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্টার্টআপগুলির উদ্ভাবনী সমাধান ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করবে।