আরবিআই নিয়ন্ত্রণের পরেও ভারতের ক্রিপ্টো স্টার্টআপ টিকে আছে?

ভারতের ক্রিপ্টো স্টার্টআপগুলো (Crypto Startups) গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-এর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে।…

Crypto Startups in India Thriving or Struggling Under RBI Regulations in 2025

ভারতের ক্রিপ্টো স্টার্টআপগুলো (Crypto Startups) গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-এর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে। তবে, এই প্রতিকূলতার মধ্যেও ভারতের ক্রিপ্টো এবং ব্লকচেইন ইকোসিস্টেম বেশ কিছু উদ্ভাবনী স্টার্টআপের মাধ্যমে বেড়ে উঠছে। বিশেষ করে কলকাতার মতো শহরগুলোতে ব্লকচেইন আইটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালে ভারতের ক্রিপ্টো স্টার্টআপগুলো (Crypto Startups) কীভাবে আরবিআই-এর (RBI) নিয়ন্ত্রণের মধ্যে টিকে আছে এবং কীভাবে তারা উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷

২০১৮ সালে আরবিআই (RBI) ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রদানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, যা ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এবং স্টার্টআপগুলোর জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে কাজ করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে জেবপে এবং ইউনোকয়েনের মতো কিছু স্টার্টআপ তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বা বিদেশে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছিল। তবে, ২০২০ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আরবিআই-এর (RBI) এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, যা ক্রিপ্টো শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এরপর থেকে ভারতের ক্রিপ্টো বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ২০২৫ সালে দেশটির ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো বাজারগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।

   

কলকাতায় ব্লকচেইন আইটি সেক্টরও এই সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। কলকাতা ভিত্তিক স্টার্টআপগুলো, যেমন টোকিওটেকি এবং অন্যান্য ছোট-বড় উদ্যোগ, ব্লকচেইন প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রয়োগের উপর কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ডিসেন্ট্রালাইজড অ্যাপ্লিকেশন (ডি-অ্যাপ), এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম। এই স্টার্টআপগুলো শুধুমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়েই কাজ করছে না, বরং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, হেলথকেয়ার এবং ফিনান্সের মতো ক্ষেত্রে ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার কিছু স্টার্টআপ ব্লকচেইন-ভিত্তিক ডকুমেন্ট স্টোরেজ এবং সাপ্লাই চেইন অপ্টিমাইজেশনের উপর কাজ করছে, যা ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোকে আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করে তুলছে।

তবে, আরবিআই (RBI) এবং ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণ এই স্টার্টআপগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২২ সালে ক্রিপ্টো লেনদেনের উপর ৩০% কর এবং ১% টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স) আরোপ করা হয়, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, ২০২৩ সালে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)-এর আওতায় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোকে কঠোর কেওয়াইসি এবং এএমএল (অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং) নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে। ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ)-এর সঙ্গে নিবন্ধন এবং রিপোর্টিং প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হচ্ছে, যা ছোট স্টার্টআপগুলোর জন্য অতিরিক্ত ব্যয় এবং জটিলতা সৃষ্টি করছে। এই নিয়ন্ত্রণগুলো ক্রিপ্টো ট্রেডিং ভলিউম কমিয়ে দিয়েছে এবং কিছু ব্যবসায়ীকে অফশোর প্ল্যাটফর্মের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যদিও সরকার এই ধরনের প্ল্যাটফর্মের উপরও কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে।

Advertisements

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ভারতের ক্রিপ্টো স্টার্টআপগুলো (Crypto Startups) উদ্ভাবনের মাধ্যমে টিকে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছে। পলিগন (এমএটিআইসি) এর মতো স্টার্টআপগুলো ভারতের ব্লকচেইন ইকোসিস্টেমকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছে। পলিগন, যা একটি লেয়ার-২ স্কেলিং সলিউশন, ভারতীয় ওয়ালেটে ৪০% বৃদ্ধি দেখেছে, যা সরকার-সমর্থিত ব্লকচেইন প্রকল্পগুলোর কারণে সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, কয়েনডিসিএক্স এবং ওয়াজিরএক্সের মতো ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলো কেওয়াইসি এবং এএমএল নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। কলকাতার মতো শহরে ব্লকচেইন আইটি কোম্পানিগুলো ডিফাই (ডিসেন্ট্রালাইজড ফিনান্স), এনএফটি (নন-ফাঞ্জিবল টোকেন), এবং মেটাভার্স প্রকল্পগুলোতে কাজ করছে, যা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

আরবিআই-এর (RBI) ডিজিটাল রুপি (সিবিডিসি) চালু করার উদ্যোগ ক্রিপ্টো শিল্পের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০২২ সালে পাইলট পর্যায়ে শুরু হওয়া ডিজিটাল রুপি ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি নিয়ন্ত্রিত বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ক্রিপ্টোর তুলনায় এটি আরও নিরাপদ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এটি ব্লকচেইন-ভিত্তিক স্টার্টআপগুলোর জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করছে, কারণ সরকার ব্লকচেইন প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, আরবিআই-এর (RBI) কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং কর ব্যবস্থা সত্ত্বেও ভারতের ক্রিপ্টো স্টার্টআপগুলো (Crypto Startups) টিকে আছে এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। কলকাতার ব্লকচেইন আইটি সেক্টর এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, আরও স্পষ্ট এবং উদ্ভাবন-বান্ধব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে, যা ভারতকে বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টো এবং ব্লকচেইন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং শিল্প নেতাদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।