বাংলার টিয়ার-২ আইটি ফার্মে ক্যারিয়ারের অগ্রগতি কী আশা করা যায়?

পশ্চিমবঙ্গের টিয়ার-২ শহরগুলি, যেমন শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, এবং হলদিয়া, ধীরে ধীরে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের (IT Firms in Bengal) কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। যদিও কলকাতা এবং তার…

Career Progression in Tier-2 IT Firms in Bengal: Promotion Paths and Opportunities in 2025"

পশ্চিমবঙ্গের টিয়ার-২ শহরগুলি, যেমন শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, এবং হলদিয়া, ধীরে ধীরে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের (IT Firms in Bengal) কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। যদিও কলকাতা এবং তার আশেপাশের অঞ্চল বাংলার আইটি শিল্পের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে, টিয়ার-২ আইটি ফার্মগুলি তাদের দ্রুত বৃদ্ধি, নমনীয় কাজের পরিবেশ এবং খরচ-কার্যকর কাঠামোর কারণে তরুণ পেশাদারদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এই ফার্মগুলিতে ক্যারিয়ারের অগ্রগতি এবং পদোন্নতির পথ সম্পর্কে জানা আইটি পেশাদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা এই অঞ্চলে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে চান। ২০২৫ সালে বাংলার টিয়ার-২ আইটি ফার্মে ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলি কী হতে পারে, তা নিয়ে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হল।

টিয়ার-২ আইটি ফার্ম কী?
টিয়ার-২ আইটি ফার্ম বলতে সাধারণত মাঝারি আকারের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে বোঝায়, যেগুলি টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), ইনফোসিস, বা উইপ্রোর মতো টিয়ার-১ ফার্মের তুলনায় ছোট, কিন্তু স্থানীয় বা আঞ্চলিক স্তরে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ফার্মগুলির মধ্যে রয়েছে কগনিজেন্ট, টেক মাহিন্দ্রা, এবং কিছু ছোট স্কেলের স্টার্টআপ যারা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ক্লাউড সার্ভিসেস, এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের উপর কাজ করে। এই ফার্মগুলি প্রায়শই নিচ-টেকনোলজি এবং ডিজিটাল সার্ভিসেসে বিশেষায়িত, যেমন সফটওয়্যার টেস্টিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স, এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।

   

পদোন্নতির পথ এবং ক্যারিয়ারের অগ্রগতি
টিয়ার-২ আইটি ফার্মে ক্যারিয়ারের অগ্রগতি টিয়ার-১ ফার্মের তুলনায় দ্রুত হতে পারে, কারণ এই ফার্মগুলির কাঠামো তুলনামূলকভাবে ছোট এবং নমনীয়। তবে, এই অগ্রগতি ব্যক্তির দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, এবং কোম্পানির প্রকল্পের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। সাধারণত, টিয়ার-২ ফার্মে নিম্নলিখিত পদোন্নতির পথ দেখা যায়:

  • এন্ট্রি-লেভেল পজিশন (০-২ বছর): ফ্রেশাররা সাধারণত সফটওয়্যার ডেভেলপার, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স (কিউএ) টেস্টার, বা আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগদান করে। এই পর্যায়ে বেতন সাধারণত ৩-৬ লক্ষ টাকা প্রতি বছর হয়। কাজের মধ্যে রয়েছে কোডিং, টেস্টিং, এবং বেসিক টেকনিক্যাল সাপোর্ট। প্রাথমিক দক্ষতার মধ্যে পাইথন, জাভা, এবং এসকিউএলের জ্ঞান প্রয়োজন।
  • মিড-লেভেল পজিশন (২-৫ বছর): দুই থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতার পর কর্মীরা সিনিয়র ডেভেলপার, টিম লিড, বা প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। এই পর্যায়ে বেতন ৬-১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ভূমিকায় নেতৃত্ব, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, এবং ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।
  • সিনিয়র-লেভেল পজিশন (৫-১০ বছর): অভিজ্ঞ পেশাদাররা প্রজেক্ট ম্যানেজার, সলিউশন আর্কিটেক্ট, বা ডেলিভারি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এই পর্যায়ে বেতন ১২-২৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। এই ভূমিকায় ক্লাউড কম্পিউটিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স, এবং সাইবারসিকিউরিটির মতো নিচ-টেকনোলজিতে দক্ষতা প্রয়োজন।
  • লিডারশিপ রোল (১০+ বছর): দীর্ঘমেয়াদী অভিজ্ঞতার পর কিছু পেশাদার চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) বা ডিরেক্টর অফ আইটি পদে পৌঁছাতে পারেন। এই পদে বেতন ২৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। এই ভূমিকায় স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এবং টিম ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলার টিয়ার-২ শহরে আইটি ফার্মের বৃদ্ধি
পশ্চিমবঙ্গের টিয়ার-২ শহরগুলি কম খরচে অপারেশন, প্রতিভাবান কর্মীবাহিনী, এবং উন্নত অবকাঠামোর কারণে আইটি ফার্মগুলির কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। দুর্গাপুরে টিসিএস এবং কগনিজেন্টের মতো ফার্মগুলি তাদের অপারেশন সম্প্রসারণ করছে, যখন শিলিগুড়ি স্টার্টআপ এবং ছোট আইটি ফার্মের জন্য একটি কেন্দ্র হয়ে উঠছে। নাসকমের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, টিয়ার-২ শহরগুলিতে আইটি কর্মসংস্থান ১৪% বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা টিয়ার-১ শহরের তুলনায় বেশি। এই শহরগুলিতে কম জীবনযাত্রার খরচ এবং হাইব্রিড কাজের মডেলের কারণে কর্মীরা এখানে কাজ করতে আকৃষ্ট হচ্ছেন।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
টিয়ার-২ আইটি ফার্মে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এই ফার্মগুলি তরুণ পেশাদারদের দ্রুত দায়িত্ব দেয়, যা দ্রুত শেখার সুযোগ প্রদান করে। দ্বিতীয়ত, কম প্রতিযোগিতার কারণে পদোন্নতির সম্ভাবনা বেশি। তবে, চ্যালেঞ্জও রয়েছে। টিয়ার-২ ফার্মগুলি প্রায়শই টিয়ার-১ ফার্মের তুলনায় কম বেতন এবং কম বৈচিত্র্যময় প্রকল্প অফার করে। এছাড়াও, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সুযোগ সীমিত হতে পারে।
কৃষ্ণেন্দু দাস, শিলিগুড়ির একটি টিয়ার-২ আইটি ফার্মের সিনিয়র ডেভেলপার, বলেন, “এখানে কাজের পরিবেশ খুবই সহায়ক, এবং আমি দ্রুত টিম লিড হয়েছি। তবে, বড় প্রকল্প এবং উন্নত প্রযুক্তির এক্সপোজারের জন্য কলকাতা বা ব্যাঙ্গালোরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।”

Advertisements

দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ
টিয়ার-২ আইটি ফার্মে ক্যারিয়ারের অগ্রগতির জন্য নিম্নলিখিত দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
টেকনিক্যাল দক্ষতা: পাইথন, জাভা, ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম (এডব্লিউএস, অ্যাজিউর), এবং সাইবারসিকিউরিটি।
নরম দক্ষতা: যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান, এবং টিম ম্যানেজমেন্ট।
সার্টিফিকেশন: কম্পটিআইএ এ+, নেটওয়ার্ক+, এবং সাইবারসিকিউরিটি সার্টিফিকেশন ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতে সহায়ক।

অর্থনীতিবিদ প্রিয়াঙ্কা মুখার্জি বলেন, “টিয়ার-২ আইটি ফার্মগুলি তরুণদের জন্য একটি ভালো শুরু, তবে ক্রমাগত দক্ষতা উন্নয়ন এবং নেটওয়ার্কিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাউড কম্পিউটিং এবং এআই-এর মতো উদীয়মান প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করলে পদোন্নতির সম্ভাবনা বাড়ে।”

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গ সরকার টিয়ার-২ শহরগুলিতে আইটি হাব গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করছে। শিলিগুড়ি এবং দুর্গাপুরে আইটি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রাজ্যের আইটি খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। তবে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, “তৃণমূল সরকার আইটি খাতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। টিয়ার-২ শহরে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।”

বাংলার টিয়ার-২ আইটি ফার্মগুলি তরুণ পেশাদারদের জন্য দ্রুত ক্যারিয়ার অগ্রগতির সুযোগ প্রদান করে, বিশেষ করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ক্লাউড কম্পিউটিং, এবং সাইবারসিকিউরিটি ক্ষেত্রে। তবে, টিয়ার-১ ফার্মের তুলনায় সীমিত প্রকল্প এবং বেতন একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ক্রমাগত দক্ষতা উন্নয়ন, সার্টিফিকেশন, এবং নেটওয়ার্কিং এই ফার্মগুলিতে সফল ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে