নিজস্ব সংবাদদাতা | ৮ অক্টোবর, ২০২৫: দেশের ভোক্তাদের জন্য এ যেন বড়ই স্বস্তির খবর। একদিকে টমেটো, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে, অন্যদিকে তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মুদ্রাস্ফীতির উপর। ব্যাঙ্ক অফ বরোদার (BoB) সদ্য প্রকাশিত প্রাইস পিকচার রিপোর্ট-এ জানানো হয়েছে, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ দেশের ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) নেমে এসেছে প্রায় ১.২ শতাংশে।
এই হ্রাসকে বিশেষজ্ঞরা ঐতিহাসিক বলছেন, কারণ বিগত কয়েক মাস ধরেই শীর্ষমুখী মুদ্রাস্ফীতির চাপ ক্রমশ কমছিল, আর সেপ্টেম্বর সেই প্রবণতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।
🔻 টমেটো, পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমার প্রভাব
‘TOP’ নামে পরিচিত এই তিনটি সবজি—টমেটো, অনিয়ন (পেঁয়াজ) ও পটেটো (আলু)—ভারতের খাদ্য ঝুড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রিপোর্ট বলছে:
টমেটোর খুচরা দাম কমেছে ৮.৩%
পেঁয়াজের দাম পড়েছে এক লাফে ৪৬.২%
আলুর দাম নেমেছে ৩০.৯%
বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ ও আগমন বৃদ্ধিই এই হ্রাসকে ত্বরান্বিত করেছে। BoB-এর হিসাবে, চলতি অর্থবছরে (FYTD26) ‘TOP’-এর মোট আগমন বেড়েছে ১০.৩%, যেখানে গত বছর একই সময়ে তা ১৫.৪% সংকোচন হয়েছিল।
📉 BoB Essential Commodities Index
ব্যাঙ্ক অফ বরোদার নিজস্ব Essential Commodities Index (ECI) সেপ্টেম্বর মাসে টানা পঞ্চম মাসে হ্রাস পেয়েছে।
বছরওয়ারি ভিত্তিতে সূচক কমেছে ১%
অক্টোবরের প্রথম ৬ দিনে সূচক আরও নেমেছে ৩.৮%
মাসিক ভিত্তিতে কমেছে ০.৩%
অর্থাৎ প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামের স্থায়ী নিম্নমুখী প্রবণতাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
🌍 আন্তর্জাতিক বাজার ও ঘরোয়া দামের প্রভাব
শুধু দেশীয় বাজার নয়, আন্তর্জাতিক খাদ্যপণ্যের দামও এখন নিম্নমুখী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে—
জিএসটি হ্রাস
FMCG, ই-কমার্স ও অটোমোবাইল খাতে ছাড়
সরাসরি গ্রাহকদের কাছে দাম কমিয়ে দেওয়া
ফলে, সার্বিকভাবে ভোক্তারা কম দামে প্রয়োজনীয় পণ্য পাচ্ছেন, আর মুদ্রাস্ফীতিও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত পূর্বাভাসের চেয়ে নীচে নেমে আসছে।
⚠️ সামনে কী ঝুঁকি?
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, সবুজ সংকেতের মধ্যেও কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে।
ধাতু, খনিজ ও জ্বালানির দাম কিছুটা বাড়ছে, যদিও ভোক্তা দামে তার প্রভাব সীমিত।
স্বর্ণের দাম অস্থির রয়েছে, যা কোর ইনফ্লেশন-কে প্রভাবিত করতে পারে।
আসন্ন রবি ফসলের মৌসুমি সবজির দাম আরও নামতে পারে, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সরবরাহ চেইন ব্যাহত হলে পুনরায় চাপ তৈরি হতে পারে।
ব্যাঙ্ক অফ বরোদার এই রিপোর্ট স্পষ্ট করেছে, মুদ্রাস্ফীতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, এবং খাদ্যপণ্যের দাম পতন সাধারণ মানুষের খরচ কমাতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই প্রবণতা বজায় রাখতে সরকারকে ফসল সংগ্রহ, মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থার উপর আরও কড়া নজর রাখতে হবে।
দেশজুড়ে ভোক্তারা এখন আশায় বুক বাঁধছেন—পুজো মরসুমে বাজার আরও স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দেবে।