ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য ব্রিটিশ বাজারে নতুন দিগন্ত

ভারতের টেক্সটাইল শিল্পের (Textile Export) জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ৫০ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ধাক্কা। তবে, ক্রেডএজ রেটিংসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই…

India's textile export to UK under FTA may offset US losses: CareEdge Ratings

ভারতের টেক্সটাইল শিল্পের (Textile Export) জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ৫০ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ধাক্কা। তবে, ক্রেডএজ রেটিংসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে যেতে পারে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের সদ্য সমাপ্ত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA)-এর কারণে। বিশেষ করে রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG) ও হোম-টেক্সটাইল খাতের জন্য এই চুক্তি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই স্বল্পমেয়াদে ভারতের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, কেমিক্যালস ও মেশিনারি খাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে মন্ত্রকের দাবি, দীর্ঘমেয়াদে সামগ্রিক বাণিজ্য ও জিডিপিতে এর প্রভাব সীমিত থাকবে।

   

যুক্তরাষ্ট্রই এতদিন ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য ছিল। গত চার বছরে (CY24 পর্যন্ত) মোট রপ্তানির প্রায় ২৮-২৯ শতাংশই গেছে মার্কিন বাজারে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ছিল তুলাভিত্তিক হোম টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল। ফলে এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে রপ্তানি আয়ে ৯-১০ শতাংশ হ্রাস ঘটতে পারে বলে ধারণা দিচ্ছে ক্রেডএজ রেটিংস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি টেক্সটাইল শিল্পের জন্য গেম চেঞ্জার হতে চলেছে। প্রায় ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যুক্তরাজ্যের আমদানি বাজারে ভারতের জন্য সমান সুযোগ তৈরি হবে। এতদিন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিযোগী দেশগুলো এই সুবিধা ভোগ করছিল। এখন থেকে ভারতীয় রপ্তানিকারকরাও সমান শর্তে প্রবেশ করতে পারবে।

ক্রেডএজের সহকারী পরিচালক অক্ষয় মোরবিয়া বলেন, “মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় টেক্সটাইল রপ্তানি ২০২৬ সালে ৯-১০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে আরএমজি ও হোম টেক্সটাইল রপ্তানিকারকদের মুনাফার মার্জিন ৩০০-৫০০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবে কতটা ক্ষতি হবে তা নির্ভর করছে রপ্তানিকারকরা কতটা দক্ষতার সঙ্গে মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে মূল্য নিয়ে সমঝোতা করতে পারেন তার ওপর।”

যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সঙ্গেও ভারত সক্রিয়ভাবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চালাচ্ছে। এই আলোচনায় অগ্রগতি হলে ইউরোপীয় বাজারেও ভারতের টেক্সটাইল খাত নতুন সুযোগ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisements

ক্রেডএজ রেটিংসের ডিরেক্টর ক্রুনাল মোদি বলেন, “ভারত সরকার ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কটনে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক তুলে নিয়েছে। পাশাপাশি ৪০টি দেশে রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য যে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, তার ফলে টেক্সটাইল খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। এছাড়া রপ্তানি প্রণোদনা ও সুদ ভর্তুকি রপ্তানিকারকদের লাভজনকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।”

মোদির মতে, মার্কিন বাজারে আরএমজি ও হোম টেক্সটাইলের ক্ষতি হলেও কটন ইয়ার্ন ও ফ্যাব্রিক রপ্তানিতে ভারত লাভবান হতে পারে। কারণ অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ এ ক্ষেত্রে ব্যাকওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন বা কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা পায় না। ফলে এই সেগমেন্টে ভারতের রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারতের টেক্সটাইল রপ্তানির বড় বাজারগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ (৭ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৫ শতাংশ) এবং জার্মানি (৪ শতাংশ)। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের উচিত হবে এই বাজারগুলোতে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করা, যাতে মার্কিন বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো যায়।

মার্কিন শুল্ক নিঃসন্দেহে ভারতের টেক্সটাইল খাতকে একটি কঠিন সময়ের মধ্যে ফেলবে। আয়ের ক্ষতি, মুনাফার হ্রাস এবং মূল্য প্রতিযোগিতার চাপ সামলানো রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কটন আমদানিতে শুল্ক ছাড়, নতুন বাজার খোঁজার প্রচেষ্টা এবং আর্থিক সহায়তার মতো পদক্ষেপগুলো শিল্পকে টিকিয়ে রাখবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও আসন্ন ইইউ চুক্তি ভারতের টেক্সটাইল শিল্পকে নতুন সুযোগ এনে দেবে। ফলে স্বল্পমেয়াদী আঘাত থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্প আবারও শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে আসবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News