কর রিফান্ডে ৮১% গতি বৃদ্ধি, বড় ঘোষণা অর্থ মন্ত্রকের

অবশেষে ভারতের কর প্রশাসনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সাক্ষী হলো দেশ। গত এক দশকে করদাতাদের রিফান্ড (Tax refund) যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা কর সংগ্রহের বৃদ্ধির…

Step-by-Step Guide for NRIs to Invest in Indian Stock Market: PIS, Non-PIS, and Tax Rules

অবশেষে ভারতের কর প্রশাসনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সাক্ষী হলো দেশ। গত এক দশকে করদাতাদের রিফান্ড (Tax refund) যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা কর সংগ্রহের বৃদ্ধির চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের সূত্রে ANI-কে জানানো হয়েছে যে, এই নাটকীয় পরিবর্তন দেশের কর ব্যবস্থার দক্ষতা ও স্বচ্ছতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত করদাতাদের রিফান্ড ৪৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৩,০০৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪,৭৬,৭৪৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একই সময়ে, মোট প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ ২৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ৭,২১,৬০৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৭,০২,৯৭৪ কোটি টাকা হয়েছে।

   

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে রিফান্ড প্রক্রিয়ার গতিতে। ২০১৩ সালে যেখানে গড়ে ৯৩ দিন সময় লাগত কর রিফান্ড দেওয়ার জন্য, ২০২৪ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ১৭ দিনে। অর্থাৎ, ৮১ শতাংশ সময় সাশ্রয় করা হয়েছে। এর পেছনে বড় অবদান রয়েছে কর প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপান্তরের।

ডিজিটাল ফাইলিং সিস্টেম, ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট, এবং স্বয়ংক্রিয় রিফান্ড প্রক্রিয়া চালু হওয়ার ফলে আগে যে ধরণের জটিলতা ও বিলম্ব দেখা যেত, তা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। করদাতাদের সুবিধার্থে প্রি-ফিলড রিটার্ন, রিয়েল-টাইম TDS সমন্বয় এবং অনলাইন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (CBDT)-এর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ANI-কে জানিয়েছেন, ‘‘ডিজিটাল অবকাঠামোর মাধ্যমে করদাতাদের সেবা প্রদানের পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না, করদাতাদের অভিজ্ঞতাও এখন অনেক মসৃণ ও স্বচ্ছ।’’

শুধু রিফান্ড নয়, করদাতার সংখ্যাতেও অভূতপূর্ব বৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে ৩.৮ কোটি মানুষ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিলেন, ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৮৯ কোটিতে। অর্থাৎ, ১৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি। এর ফলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই আরও ফর্মাল বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে।

অন্যদিকে, রিফান্ডের পরিমাণ মোট কর সংগ্রহের অনুপাতে ২০১৩-১৪ সালে যেখানে ছিল ১১.৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে ১৭.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এক সিনিয়র ইনকাম ট্যাক্স অফিসার জানান, ‘‘রিফান্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে করদাতাদের স্বেচ্ছায় কর পরিশোধের মানসিকতা এবং অগ্রিম কর প্রদানের প্রবণতা উভয়ই প্রতিফলিত হচ্ছে।’’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘যত বেশি মানুষ ফর্মাল ট্যাক্স সিস্টেমে যুক্ত হচ্ছেন এবং TDS-এর আওতা বাড়ছে, তত বেশি মানুষ অগ্রিম বেশি কর জমা দিচ্ছেন, যার ফলে রিফান্ডের পরিমাণও বাড়ছে।’’

Advertisements

এই রিফান্ড বৃদ্ধির অর্থনৈতিক প্রভাবও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত রিফান্ড প্রক্রিয়ার ফলে ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক উভয় স্তরে নগদ অর্থপ্রবাহ বাড়ে। ফলে ব্যবসার প্রসার এবং ব্যক্তিগত খরচের প্রবণতা — দুই ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। একইসঙ্গে, রিফান্ডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া মানে দেশের অর্থনীতির ফর্মালাইজেশনের আরও দৃঢ়তা এবং করের আওতা সম্প্রসারণ।

অর্থ মন্ত্রকের কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতিকে ‘‘সিস্টেমিক ম্যাচুরিটি’’ বা প্রাতিষ্ঠানিক পরিপক্কতা বলে অভিহিত করেছেন। এর মানে, দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং করদাতার সেবার মান উন্নয়ন এখন আর কোনো লক্ষ্য নয়, বরং তা বাস্তবায়িত ও নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি হলো প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ এবং প্রশাসনিক সংস্কার। ই-ফাইলিং, ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট, এবং ইনস্ট্যান্ট রিফান্ডের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির সমকক্ষ হতে শুরু করেছে।

অতীতে কর রিটার্ন দাখিল করতে এবং রিফান্ড পেতে যেখানে করদাতাদের মাসের পর মাস সময় লাগত, এখন তা কয়েক দিনের মধ্যে সম্ভব হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষ নিজের ঘরে বসেই কর দাখিল, রিফান্ড স্ট্যাটাস দেখা এবং সমস্যার সমাধান করতে পারছে। ফলে, কর ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বাড়ছে, তেমনি কর পরিশোধের মানসিকতাও তৈরি হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, ভারতের কর প্রশাসনের এই পরিবর্তন শুধুমাত্র কর সংগ্রহের পরিসংখ্যানকেই নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক সংস্কৃতিকেও নতুন রূপ দিচ্ছে। সরকারি আধিকারিকদের ভাষায়, ‘‘আজকের ভারত করদাতাদের সম্মান ও সুবিধার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।’’

এই অগ্রগতির ফলে আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতিতে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেকটাই উজ্জ্বল। এর পাশাপাশি, দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এই পরিবর্তনের সরাসরি সুফল ভোগ করছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে, ভারত খুব শীঘ্রই বৈশ্বিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ডিজিটাল ভারত ও স্বচ্ছ প্রশাসনের এই যৌথ উদ্যোগ দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন দিক নির্দেশ করছে।