২০৩০-এর মধ্যে ভারতের সংগঠিত খুচরা বাজার ছাড়াবে ৬০০ বিলিয়ন ডলার

ভারতের খুচরা বাণিজ্য (Organised Retail Market) খাত ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের (প্রায় ১৩৪ লক্ষ কোটি টাকা) একটি বিশাল বাজারে পরিণত হতে চলেছে। এই…

India’s Retail Market girl

ভারতের খুচরা বাণিজ্য (Organised Retail Market) খাত ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের (প্রায় ১৩৪ লক্ষ কোটি টাকা) একটি বিশাল বাজারে পরিণত হতে চলেছে। এই বিপুল সম্ভাবনার মধ্যে সংগঠিত খুচরা বাণিজ্যের জন্য অসীম বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে বুধবার প্রকাশিত একটি নতুন রিপোর্টে জানানো হয়েছে। রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টস-এর এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সংগঠিত খুচরা বাণিজ্য ৬০০ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৫০ লক্ষ কোটি টাকা) বেশি আকারে পৌঁছবে এবং মোট খুচরা বাজারের ৩৫ শতাংশেরও বেশি দখল করবে।

   

প্রয়োজনীয় ও ঐচ্ছিক ব্যয়ের ভূমিকা

রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় পণ্যের (যেমন খাদ্য, পোশাক, ওষুধ) ব্যয় এখনও বাজারের প্রধান চালিকাশক্তি থাকবে। তবে, ঐচ্ছিক ব্যয় (যেমন বিনোদন, ফ্যাশন, ইলেকট্রনিক্স) আগামী দিনে বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপের নেতৃত্ব দেবে। অফলাইন এবং অনলাইন সংগঠিত খুচরা বিক্রেতারা বাজারের অদক্ষতা দূর করতে উন্নত সোর্সিং কৌশল, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অবকাঠামোগত উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর ফলে সংগঠিত খুচরা বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Advertisements

ভারতীয় ব্র্যান্ডের উত্থান

ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য, দামের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং জটিল সাপ্লাই চেইন সত্ত্বেও, ৩৫০টি ভারতীয় ব্র্যান্ড ইতিমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৪০ কোটি টাকা) আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। তবে, সাপ্লাই ল্যান্ডস্কেপ এখনও খণ্ডিত রয়েছে এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই খণ্ডিত অবস্থা বজায় থাকবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আঞ্চলিক এবং ব্র্যান্ডবিহীন পণ্যগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাজারের ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ দখল করবে।

রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টস-এর অ্যাসোসিয়েট পার্টনার কুশল ভাটনাগর বলেন, “সংগঠিত খুচরা বাণিজ্যের মডেলগুলোকে এগিয়ে যেতে হলে শুধু ব্র্যান্ডেড পণ্যের দিকে নয়, আঞ্চলিক এবং ব্র্যান্ডবিহীন পণ্যের চাহিদার দিকেও নজর দিতে হবে। এটি তাদের ঐতিহ্যগত লক্ষ্যের বাইরে একটি নতুন সুযোগ।” তিনি আরও জানান, অফলাইন এবং অনলাইন খুচরা বিক্রেতারা ব্যাকওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন, প্রাইভেট লেবেলিং এবং সাপ্লাই অ্যাগ্রিগেশনের মতো কৌশল অবলম্বন করছে।

ভারতের বৈচিত্র্য ও চ্যালেঞ্জ

ভারতের সংস্কৃতি, ভাষা এবং রুচি প্রতি কয়েক কিলোমিটারে পরিবর্তিত হয়। এর ফলে স্ন্যাকস, মশলা, খাদ্যশস্য, পোশাক, গহনা এবং বাড়ির সাজসজ্জার মতো বিভাগে স্টক কিপিং ইউনিট (এসকেইউ) বা পণ্যের বৈচিত্র্য অত্যন্ত বেশি। এই বৈচিত্র্য সাপ্লাই চেইনের খণ্ডিত অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের বেশিরভাগ গ্রাহক ছোট মূল্যের লেনদেন পছন্দ করেন এবং কেনাকাটার সময় সাশ্রয়ী মূল্যকে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। সোর্সিং এবং বিতরণ পর্যায়ে একাধিক অসংগঠিত মধ্যস্থতাকারীর উপস্থিতি সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।

সাধারণ বাণিজ্যের শক্তি

সাধারণ বাণিজ্য (জেনারেল ট্রেড বা জিটি) এখনও বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এর সহজলভ্যতা, ছোট লেনদেনের সুবিধা এবং স্থানীয় সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে গভীর সংযোগ এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। জিটি হাইপার-লোকাল গ্রাহক চাহিদা পূরণে দক্ষতা দেখিয়েছে, যা সংগঠিত খুচরা বিক্রেতাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলার প্রেক্ষাপটে খুচরা বাণিজ্য

বাংলার গ্রাহকদের জন্য এই রিপোর্টটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গে খুচরা বাণিজ্যে স্থানীয় দোকান এবং অসংগঠিত বাজার এখনও প্রভাবশালী। কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুরের মতো শহরে সংগঠিত খুচরা বাণিজ্য (যেমন শপিং মল, ই-কমার্স) দ্রুত বাড়ছে। তবে, গ্রামীণ এলাকায় এবং ছোট শহরে সাধারণ বাণিজ্যই প্রধান। বাঙালি গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যের পাশাপাশি স্থানীয় স্বাদের পণ্য পছন্দ করেন, যেমন মিষ্টি, মশলা, এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলার মতো রাজ্যে সংগঠিত খুচরা বিক্রেতাদের সাফল্য পেতে হলে স্থানীয় চাহিদা এবং আঞ্চলিক ব্র্যান্ডের দিকে নজর দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলার মিষ্টির বাজারে স্থানীয় দোকানগুলোর আধিপত্য থাকলেও, সংগঠিত খুচরা বিক্রেতারা যদি এই পণ্যগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে, তবে তারা বাজারের একটি বড় অংশ দখল করতে পারে।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ভূমিকা

সংগঠিত খুচরা বাণিজ্যের বৃদ্ধির পিছনে প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ডেলিভারি সিস্টেম উন্নত করছে, যেখানে ড্রোন এবং এআই-ভিত্তিক ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে। অফলাইন খুচরা বিক্রেতারা স্মার্ট চেকআউট এবং ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা বাড়াচ্ছে। বাংলায় ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যোগ দিচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

সংগঠিত খুচরা বাণিজ্যের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল অসংগঠিত খাতের প্রতিযোগিতা। বাংলার গ্রামীণ এলাকায় এখনও মুদি দোকান এবং একটি স্থানীয় বাজার গ্রাহকদের প্রথম পছন্দ। তবে, সংগঠিত খুচরা বিক্রেতারা যদি স্থানীয় চাহিদা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের দিকে মনোযোগ দেয়, তবে তারা এই বাজারে প্রবেশ করতে পারে।

ভারতের খুচরা বাণিজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে একটি বিশাল বাজারে পরিণত হতে চলেছে, এবং সংগঠিত খুচরা এই বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে। বাংলার গ্রাহকদের জন্য এটি একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। স্থানীয় স্বাদ এবং চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংগঠিত খুচরা বিক্রেতারা যদি এগিয়ে যায়, তবে তারা বাংলার বাজারেও সাফল্য পেতে পারে।