জিএসটি আদায় ১০.৭% বৃদ্ধি, জানাল সরকার

বর্তমান অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬) প্রথম প্রান্তিকে ভারতের নিট পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) আদায়ে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী…

Big GST Reform Likely

বর্তমান অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬) প্রথম প্রান্তিকে ভারতের নিট পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) আদায়ে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী মঙ্গলবার রাজ্যসভায় লিখিত উত্তরে জানান, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মাসিক গড় নিট জিএসটি আদায় হয়েছে ₹১,৮০,৭৭৪ কোটি, যা গত অর্থবর্ষের একই সময়ের ₹১,৬৩,৩১৯ কোটি-র তুলনায় প্রায় ১০.৭ শতাংশ বেশি।
এই বৃদ্ধিকে দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের প্রসার ও কর পরিশোধে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং কর কাঠামোর সরলীকরণ এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ (MSME)-এর জন্য বড় স্বস্তি:
অর্থ প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, জিএসটি কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কর পরিশোধ প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলবে।

   

জিএসটি রেজিস্ট্রেশনে ছাড়:
যেসব ব্যবসা শুধুমাত্র রাজ্যের মধ্যেই পণ্য বিক্রি করে এবং বাৎসরিক টার্নওভার ₹৪০ লক্ষ-এর কম, তাদের জিএসটি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়।
বিশেষ কিছু রাজ্যে এই সীমা ₹২০ লক্ষ-এ নির্ধারিত।
পরিষেবা প্রদানকারীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ছাড় রয়েছে। যদি বাৎসরিক আয় ₹২০ লক্ষ-এর কম হয়, তাহলে তাদের জিএসটি রেজিস্ট্রেশন লাগবে না।
আবার, বিশেষ রাজ্যে এই সীমা ₹১০ লক্ষ-এ কমে আসে।
এই উদ্যোগগুলি ছোট ব্যবসায়ীদের উপর প্রশাসনিক ও আর্থিক চাপ কমাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সহজ কর পরিশোধের বিকল্প — কম্পোজিশন স্কিম:
সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য চালু করেছে Composition Levy Scheme, যাতে তারা সরল উপায়ে কর পরিশোধ করতে পারে।
যেসব ব্যবসায়ীর বাৎসরিক টার্নওভার ₹১.৫ কোটি (কিছু রাজ্যে ₹৭৫ লক্ষ) পর্যন্ত, তারা এই স্কিমে স্বেচ্ছায় অংশ নিতে পারেন।

এই স্কিমে:
পণ্য বিক্রেতা ও নির্মাতারা ১% হারে জিএসটি পরিশোধ করতে পারবেন (CGST ০.৫% + SGST ০.৫%)।
রেস্তোরাঁ পরিষেবা প্রদানকারীরা ৫% হারে জিএসটি দেবেন (CGST ২.৫% + SGST ২.৫%)।
এছাড়া যেসব ব্যবসায়ীর বার্ষিক টার্নওভার ₹৫ কোটি পর্যন্ত, তারা ত্রৈমাসিকভাবে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন, যদিও কর মাসিক ভিত্তিতে দিতে হবে।
এই পদ্ধতিগুলি ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য বইপত্র সংরক্ষণ, হিসাবরক্ষণ ও সময়মতো কর জমা দেওয়ার চাপ কমায়।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ:
শুধু কর কাঠামো নয়, মূল্যবৃদ্ধির দাপট ঠেকাতেও সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, খাদ্যদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার নিচ্ছে নিচের মতো পদক্ষেপ:

Advertisements

1. বাফার স্টক রক্ষা ও নিয়ন্ত্রিত মুক্তি:
চাল, গম ও ডাল সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের জরুরি মজুত (buffer stock) রাখা হচ্ছে।
বাজারে সংকট তৈরি হলে সেগুলি ধাপে ধাপে ছাড় করে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।

2. আমদানির সুবিধা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ:
প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিলে তার আমদানিতে শুল্ক ছাড় বা নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বজায় রাখতে রপ্তানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে।

3. স্টকহোল্ডিং সীমা নির্ধারণ:
বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি এড়াতে কিছু পণ্যে সংরক্ষণের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে।
এই পদক্ষেপগুলি বাজারে সরবরাহ ও চাহাদার ভারসাম্য রক্ষা করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করছে।

বিশ্লেষকদের মত: জিএসটি ও অর্থনীতির স্থিতিশীল অগ্রগতি:
অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটি আদায়ের এই বৃদ্ধি এবং কর কাঠামোর সরলীকরণ, বিশেষত MSME খাতে, ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও সহায়ক করে তুলবে।
তারা মনে করছেন, সরকার যদি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে কর আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়বে এবং রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হবে।

ভারতের জিএসটি ব্যবস্থার প্রথম প্রান্তিকের সাফল্য কেবল সংখ্যাতেই নয়, নৈতিক ও প্রশাসনিক দিক থেকেও সরকারের আগ্রহ ও সদিচ্ছার প্রতিফলন। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়ম সহজ করা এবং বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ, দুটিই অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার, পরবর্তী প্রান্তিকেও এই ধারা বজায় থাকে কিনা।