ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং PMI উর্ধ্বমুখী, উৎপাদন খাতে রেকর্ড অর্ডার

Manufacturing sector

ভারতের উৎপাদন খাত জুলাই মাসে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে, যেখানে HSBC ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স’ ইনডেক্স (PMI) পৌঁছেছে ৫৯.১-এ, যা গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুন মাসে এই সূচক ছিল ৫৮.৪। এই তথ্য প্রকাশ করেছে S&P Global। উৎপাদন খাতে এই শক্তিশালী বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি ছিল নতুন অর্ডার ও উৎপাদনের জোরালো বৃদ্ধি, যদিও ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি কিছুটা দুর্বলতা দেখিয়েছে।

Advertisements

অর্ডারের ঢল, উৎপাদনের তেজ:
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে ফ্যাক্টরি অর্ডার বা কারখানাগুলির নতুন অর্ডার প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে বেড়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে যে ঘরোয়া চাহিদা অত্যন্ত শক্তিশালী, এবং সংস্থাগুলি দক্ষ বিপণন কৌশল ব্যবহার করে সেই চাহিদাকে কাজে লাগাতে পেরেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে গত ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, বিশেষত ইন্টারমিডিয়েট পণ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে।

HSBC-র প্রধান ভারতীয় অর্থনীতিবিদ প্রাঞ্জল ভাণ্ডারী বলেন, “ভারত জুলাই মাসে ৫৯.১ PMI রেকর্ড করেছে, যা আগের মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সূচক উৎপাদন খাতের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে এবং এটি দেখায় নতুন অর্ডার ও উৎপাদনের শক্তিশালী বৃদ্ধি হয়েছে। তবে একই সময়ে ব্যবসায়িক আস্থা তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচু পর্যায়ে নেমে এসেছে, প্রতিযোগিতা ও মূল্যস্ফীতির আশঙ্কার কারণে।”

নিয়োগে ধীর গতি, আস্থার ঘাটতি:
উৎপাদন খাতের শক্তিশালী বিস্তার সত্ত্বেও, প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ধীর গতি। মাত্র অল্প কয়েকটি সংস্থা কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে, বেশিরভাগই মনে করেছে যে বর্তমান কর্মীবল যথেষ্ট। ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছে, অতিরিক্ত নিয়োগের প্রয়োজন নেই। এর ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নভেম্বর ২০২৪ সালের পর সবচেয়ে দুর্বল হয়েছে। পাশাপাশি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে, যা ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করছে।

খরচ বেড়েছে সামান্য, কিন্তু বিক্রয়মূল্য বেড়েছে আরও বেশি:
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইনপুট কস্ট বা উপকরণ খরচ কিছুটা বেড়েছে। অ্যালুমিনিয়াম, রাবার এবং ইস্পাতের দাম বাড়ার কারণে এই খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও সামগ্রিকভাবে খরচ বৃদ্ধির হার দীর্ঘমেয়াদী গড়ের তুলনায় কমই রয়েছে। এরই মধ্যে, কোম্পানিগুলি তাদের পণ্যের বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করেছে ইনপুট কস্ট বৃদ্ধির তুলনায় আরও দ্রুত হারে। এর কারণ হল, বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় সংস্থাগুলি দাম বাড়িয়ে বেশি লাভ করার সুযোগ নিচ্ছে।

Advertisements

মজুদ পরিস্থিতি ও সরবরাহ শৃঙ্খলা:
সরবরাহ ব্যবস্থা এবং মজুদের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কাঁচামাল কেনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যতের উৎপাদনের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। সরবরাহকারীরা দ্রুত ডেলিভারি দিচ্ছে, যা উৎপাদকদের কার্যক্রমে গতি আনছে। তবে প্রস্তুত পণ্যের মজুদ কিছুটা কমেছে, কারণ কোম্পানিগুলি আগের স্টক থেকেই বিক্রি করে চলেছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ:
যদিও ভারতের উৎপাদন খাত শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং এফওয়াই২৫-এর দ্বিতীয়ার্ধে প্রবেশ করছে জোরালো গতিতে, তবুও কর্মসংস্থানের স্থবিরতা ও ব্যবসায়িক আস্থার ঘাটতি ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। মূল্যস্ফীতি এবং বাজার প্রতিযোগিতা যদি আরও বাড়ে, তাহলে এই খাতের গতি কিছুটা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মাসগুলিতে সরকার এবং আরবিআই-এর নীতি সহায়তা, কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং গ্লোবাল ডিমান্ডের উন্নতি উৎপাদন খাতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।