বিকশিত ভারতের লক্ষ্যপূরণে ১০% জিডিপি বৃদ্ধির শর্ত জানাল CII

ভারতের সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে একটি “বিকশিত ভারত” (Viksit Bharat) হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে দেশে বার্ষিক গড় ১০ শতাংশ…

CII President Rajiv Memani

ভারতের সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশকে একটি “বিকশিত ভারত” (Viksit Bharat) হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে দেশে বার্ষিক গড় ১০ শতাংশ নামমাত্র (nominal) জিডিপি বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির নবনিযুক্ত সভাপতি রাজীব মেমানি (CII President Rajiv Memani)।

এক সাক্ষাৎকারে পিটিআই-কে মেমানি বলেন, “ভারতকে বিকসিত ভারত হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রায় ১০ শতাংশ হারে নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধির প্রয়োজন।”

   

নামমাত্র জিডিপি হলো দেশের মোট পণ্য ও সেবার উৎপাদনের মূল্য, যা বর্তমান বাজার মূল্যে পরিমাপ করা হয় এবং এখানে মুদ্রাস্ফীতি বা মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করা হয় না। এটি মূলত দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার একটি সামগ্রিক ছবি তুলে ধরে।

ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আশাবাদ:
মেমানি জানান, ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাণিজ্য চুক্তি খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত হতে চলেছে। এই চুক্তি চূড়ান্ত হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা দূর হবে এবং বিশেষ করে শ্রম-নির্ভর খাতে ভারতীয় শিল্পের জন্য নতুন বাজারের দরজা খুলবে।

তিনি বলেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে প্রযুক্তি হস্তান্তর, যৌথ উদ্যোগ ও অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা অনেক বাড়বে। সব থেকে বড় বিষয় হলো, যে অনিশ্চয়তা এতদিন ছিল, তা দূর হবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ও ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও স্পষ্টভাবে করতে পারবে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা:
CII অনুমান করছে যে চলতি অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি ৬.৪-৬.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে দেশের মজবুত অভ্যন্তরীণ চাহিদা। যদিও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা ঝুঁকি তৈরি করছে, তবে ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত।

মেমানি বলেন, “ম্যাক্রো অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত ভালো। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো — যেমন পুঁজিবাজার, রিজার্ভ ব্যাংক, ব্যাংকিং সেক্টর — সবকিছু সুস্থ ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কর্পোরেট সেক্টরের আর্থিক অবস্থাও আগের থেকে অনেক শক্তিশালী।”

Advertisements

RBI-এর পূর্বাভাস:
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) চলতি অর্থবছর (মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত) ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে ধরে রেখেছে। রিজার্ভ ব্যাংকের মতে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ভারতের অর্থনীতি শক্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্ভাবনার প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামী বছরগুলোতে দেশকে বিকসিত দেশের স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক নীতি, সংস্কার এবং শিল্পের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

বিকসিত ভারতের রূপরেখা:
২০২৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৪৭ সালের মধ্যে “বিকশিত ভারত” গড়ার স্বপ্নের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছিলেন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প বিকাশ, প্রযুক্তি বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে।

যদি বার্ষিক গড় ১০ শতাংশ হারে নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি সম্ভব হয়, তবে ভারতের অর্থনীতি বহুগুণ বড় হয়ে যাবে। এর ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবনমান উন্নত হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, দারিদ্র্য হ্রাস পাবে এবং ভারত একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।

সঙ্কট ও চ্যালেঞ্জ:
অবশ্যই, এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক লগ্নি বাড়ানো, শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা করা অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতিকে মাঝেমধ্যে প্রভাবিত করতে পারে।

সিআইআই-এর বার্তা:
মেমানি তার বার্তায় উল্লেখ করেছেন, “সরকার, শিল্প এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আমাদের সামনে অনেক সুযোগ আছে, সঠিক পদক্ষেপ নিলে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে বেশি সময় লাগবে না।”