বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানিতে বড় সাফল্য! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছে ভারতে

ভারতের বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানি (Electronics Exports) খাতে একটি অসাধারণ সাফল্যের সংবাদ এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (কিউ১ এফওয়াই২৬) দেশের বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানি ৪৭% বৃদ্ধি পেয়ে…

India’s Electronics Exports Surge 47% to $12.4 Billion in Q1 FY26, Boosting Economy

ভারতের বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানি (Electronics Exports) খাতে একটি অসাধারণ সাফল্যের সংবাদ এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (কিউ১ এফওয়াই২৬) দেশের বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানি ৪৭% বৃদ্ধি পেয়ে ১২.৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে। এই অবিশ্বাস্য লাভের পেছনে সরকারের উদ্যোগশীল নীতি, বিশেষ করে প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম, এবং প্রযুক্তির উন্নতি রয়েছে। এই সাফল্য ভারতকে গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স হাব হিসেবে স্থাপন করতে সাহায্য করছে, যা দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মোবাইল ফোন খাতে বিপ্লব
বৈদ্যুতিন রফতানির এই লাফ দেয়ার মূল কারণ হলো মোবাইল ফোন উৎপাদন খাত। ২০২০ সালে পিএলআই স্কিম চালু হওয়ার পর থেকে, ইন্ডিয়া ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসোসিয়েশন (আইইএসএ) এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মোবাইল ফোন উৎপাদন ১৭৫% বেড়েছে। এর ফলে চীনের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা কমে এসেছে। বিশেষ করে কোম্পানি যেমন স্যামসাং ভারতে তার উৎপাদন কেন্দ্র প্রসারিত করেছে, যার ফলে ২০২৪ সালে তাদের রফতানি ৫.২ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলো শুধুমাত্র চাকরি সৃষ্টি করছে না, বরং বিশ্ববাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, নতুন প্রজন্মের স্মার্টফোন এবং টিভি যা ভারত থেকে রফতানি হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বাজারে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

   

সরকারি উদ্যোগ ও প্রযুক্তির ভূমিকা
সরকারের পিএলআই স্কিম এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে চালু করা ২২,৯১৯ কোটি টাকার কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম ভারতের বৈদ্যুতিন খাতকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই নীতিগুলো স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে মার্কিন মুলুক ও ইউরোপীয় বাজারে ভারতীয় ইলেকট্রনিক্সের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, চীন এবং জার্মানি ভারতের শীর্ষ রফতানি গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এই দেশগুলোতে ভারতীয় পণ্যের গুণমান ও মূল্যের কারণে চাহিদা বাড়ছে।

চাকরি সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
এই রফতানি বৃদ্ধি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লাভই নয়, এটি বৃহৎ সংখ্যক চাকরির সৃষ্টিও করছে। উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে দেশের যুবশক্তি বেকারত্বের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে এগোচ্ছে। এছাড়া, রফতানির মাধ্যমে আসা বিদেশি মুদ্রা ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছে এবং রুপির মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করছে।

Advertisements

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও এই সাফল্য উল্লেখযোগ্য, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের ২০২৪ সালের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শ্রম ও ভূমি সংক্রান্ত আইনের অপরিপক্কতা ভারতের উৎপাদন খাতের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব এবং শ্রম আইনের কঠোরতা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করছে। এর ফলে অনেক কোম্পানি ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডের মতো দেশে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনকে পছন্দ করছে। তবে সরকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রম ও ভূমি সংক্রান্ত সংস্কারের দিকে কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্যের পথ তৈরি করতে পারে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সরকারের লক্ষ্য হলো ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারী ও রফতানিকারী দেশে পরিণত করা। এর জন্য নতুন প্রযুক্তি, গবেষণা ও উন্নত উৎপাদন কৌশলের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, গ্রিন টেকনোলজি এবং স্থায়ী উৎপাদন পদ্ধতির প্রচারের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায়ও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো ভারতকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করবে না, বরং বিশ্বের টেক সামনে রাখবে।

ভারতের বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানিতে এই ৪৭% বৃদ্ধি একটি গর্বের বিষয়। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সঠিক নীতি ও উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত বিশ্বমঞ্চে সফল হতে পারে। তবে, ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য শ্রম ও ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত সমাধান করা জরুরি। যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা যায়, তবে ভারত কিছুটা সময়ের মধ্যেই বিশ্বের ইলেকট্রনিক্স খাতে একটি অপরাজেয় শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারে।