India’s Banking Sector Sees Credit Slowdown: নতুন আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বর্তমানে জমা (ডিপোজিট) প্রবৃদ্ধি ঋণ প্রবাহ (ক্রেডিট অফটেক)-এর চেয়ে বেশি গতিতে বাড়ছে। কেয়ারএজ (CareEdge) প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি পাক্ষিকে ঋণ এবং জমা উভয়ের প্রবৃদ্ধিই তুলনামূলকভাবে মন্থর হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে উচ্চ প্রারম্ভিক ভিত্তি (হাই বেস এফেক্ট) এবং বিভিন্ন খাতে দুর্বল প্রবৃদ্ধির প্রভাব।
ঋণ প্রবাহে মন্থরতা:
কেয়ারএজ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ৩০ মে পর্যন্ত দেশের মোট ঋণ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ₹১৮২.৯ লাখ কোটি টাকা, যা বার্ষিক ভিত্তিতে (ইয়ার-অন-ইয়ার) ৯.০% প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তবে এই হার গত বছরের একই সময়ের ১৬.১% প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেকটাই কম, যেখানে সেই তথ্য থেকে একীভবনের (মার্জার) প্রভাব বাদ দেওয়া হয়েছে।
ঋণ প্রবাহ বা ‘ক্রেডিট অফটেক’ বলতে বোঝানো হয়, নির্দিষ্ট সময়ে কতটা পরিমাণ ঋণ বা ঋণ সুবিধা ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি জনগণ ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিতরণ করছে।
জমা প্রবৃদ্ধিতেও শ্লথতা:
অন্যদিকে, জমা অর্থাৎ ডিপোজিটের পরিমাণ ৩০ মে, ২০২৫ পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ₹২৩১.৭ লাখ কোটি টাকা, যা বছরে ৯.৯% হারে বেড়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধিও গত বছরের ১২.২% প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম, যেখানে মার্জার প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে জমা পরিমাণ ১.২৫% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রবণতা দেখাচ্ছে যে, সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থায় জমার গতি ঋণের তুলনায় বেশি হলেও উভয় ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধির হার কমেছে।
সার্টিফিকেট অব ডিপোজিট (CD) ইস্যু বৃদ্ধির মুখে:
কেয়ারএজ জানিয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলি স্বল্প-মেয়াদি তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ডিপোজিটের উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এর ফলস্বরূপ, মে ৩০ পর্যন্ত সিডি ইস্যুর মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.১৩ লাখ কোটি টাকায়। জমার নিম্নগতি ব্যাংকগুলিকে এই বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করছে।
ক্রেডিট-ডিপোজিট অনুপাতের (CD Ratio) পতন:
এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেডিট-ডিপোজিট অনুপাত (CD Ratio) সামান্য হ্রাস পেয়ে টানা পাঁচ পাক্ষিকের জন্য ৮০ শতাংশের নিচে রয়ে গেছে। এই পতনের প্রধান কারণ হল বর্তমান পাক্ষিকে জমার প্রবাহ ২.৮৫ লাখ কোটি টাকা হলেও, ঋণ প্রবাহ ছিল মাত্র ০.৫৯ লাখ কোটি টাকা। ফলে ক্রেডিটের চেয়ে জমা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি হওয়ায় CD ratio স্বাভাবিকভাবেই কমেছে।
মোট সম্পদের অনুপাত বিশ্লেষণ:
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “ঋণ-টু-টোটাল অ্যাসেট রেশিও সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯.৯ শতাংশে, যেখানে সরকারি বিনিয়োগ-টু-টোটাল অ্যাসেট রেশিও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে ২৫.৬ শতাংশে।” অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোট সম্পদের তুলনায় ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে এবং সরকারের বিনিয়োগ স্থিতিশীল রয়েছে।
সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধির গতি:
সরকারি বিনিয়োগের দিক থেকেও সামান্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। মে ৩০, ২০২৫ পর্যন্ত মোট সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ₹৬৭.১ লাখ কোটি টাকা। বার্ষিক ভিত্তিতে এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৫%, এবং গত পাক্ষিকের তুলনায় ০.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ:
এই প্রবণতা একদিকে দেখাচ্ছে যে, দেশে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্থির হচ্ছে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল গ্রহণ করছে। উচ্চ ভিত্তি ও সাম্প্রতিক আর্থিক চ্যালেঞ্জের কারণে নতুন ঋণ বিতরণে মন্থরতা এসেছে। অন্যদিকে, জনগণের সঞ্চয় প্রবণতা ও ব্যাংকের ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের দিকে ঝোঁক বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রভাব আগামী দিনে আর্থিক বাজার, সুদের হার, এবং RBI-এর নীতিমালার ওপর পড়তে পারে। CD রেশিও কমে আসা ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য এক ধরনের সতর্ক সংকেত হলেও, এটি মূলত কম ঋণ চাহিদা এবং সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
সব মিলিয়ে, কেয়ারএজ-এর এই রিপোর্ট স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, চলতি আর্থিক বছরে ঋণ এবং জমা প্রবাহে ভারসাম্য তৈরি হলেও প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটাই কমেছে। ফলে ব্যাংক ও সরকার উভয়ের কাছেই আগামী দিনগুলোতে সতর্ক এবং কৌশলী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়বে।