২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন মাসে ভারতের অর্থনৈতিক প্রগতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের জাতীয় মোট উৎপাদন (GDP) বৃদ্ধিদর ৭.৮% রেকর্ড করেছে, যা বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক শক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে গণ্য হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের এই অর্থনৈতিক সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল সূচক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত কেবল আসন্ন ভবিষ্যতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে না, বরং এটি একটি উদীয়মান শক্তির পরিচয় দিচ্ছে।
ভারতের GDP বৃদ্ধির গল্প
এপ্রিল-জুন ২০২৫ কোয়ার্টারে ভারতের ৭.৮% GDP বৃদ্ধি চিনের ৫.২%, ইন্দোনেশিয়ার ৫.১%, যুক্তরাষ্ট্রের ৩.৩% এবং জাপানের ১% এর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিশেষ করে জার্মানির -০.৩% নেতিবাচক বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক সাফল্যকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। এই তথ্য প্রকাশের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় নেটিজেনরা এই সাফল্যকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত করে প্রশংসা করছেন। ভারতের এই বৃদ্ধির পেছনে গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়ন, উচ্চ মানের কৃষি উৎপাদন (বিশেষ করে গমের উৎপাদন), এবং GST সংগ্রহে বৃদ্ধি মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইকোনমি ফাউন্ডেশন (IBEF) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসে HSBC ইন্ডিয়া PMI ৫৮.৪ রেকর্ড করে, যা গত ১৪ মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এটি নির্দেশ করে যে ভারতের উৎপাদন খাত এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে স্থান করে দিয়েছে, যা জাপানকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
চিন ও অন্যান্য দেশের তুলনা
চিনের ৫.২% GDP বৃদ্ধি অবশ্যই সন্তোষজনক, তবে এটি তার ঐতিহ্যবাহী বৃদ্ধিদরের তুলনায় কিছুটা কম। ট্রেডিং ইকনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, চিনের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে এই বৃদ্ধি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতি এবং বাণিজ্যিক চাপের মুখে প্রাপ্ত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধিদর ২.৩% হতে পারে, যা রপ্তানি নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এদিকে, জার্মানির নেতিবাচক বৃদ্ধি ইউরোপীয় অর্থনীতির দুর্বলতার প্রতীক, যা ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে আরও স্পষ্ট হয়।
মোদীর অর্থনৈতিক নীতির ভূমিকা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল উন্নতির পথে এগিয়ে গেছে। ইউনাইটেড নেশন্স ইউনিভার্সিটির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতের প্রতি মাথা GDP প্রায় ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা US$৫,০০০ থেকে US$৭,০০০ এর বেশি হয়ে গেছে। এই উন্নতি সত্ত্বেও, ২০১৬ সালে নোটবন্ধীকরণের মতো নীতিগুলো কিছু সময়ের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করেছিল, তবে মোদী সরকার তা পুনরুদ্ধারে সফল হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড (IMF) এর পূর্বাভাসে ২০২৫ সালে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিদর ৬.৬% থাকতে পারে, যা এটিকে বিশ্বের একটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এছাড়া, NITI Aayog-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা B.V.R. সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, ভারত পরবর্তী ২.৫ থেকে ৩ বছরে জার্মানিকে পিছনে ফেলে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
যদিও ভারতের এই অর্থনৈতিক সাফল্য প্রশংসনীয়, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গ্রামীণ অঞ্চলে চাকরির সুযোগ এবং আধুনিকীকরণের প্রয়োজন এখনও সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া, বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং রপ্তানি নির্ভরতা ভারতের জন্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে, মোদী সরকারের “মেক ইন ইন্ডিয়া” এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া-র মতো উদ্যোগ ভারতকে আত্মনির্ভর হওয়ার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
ভারতের ৭.৮% GDP বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক নেতৃত্বের একটি গৌরবোজ্জ্বল উদাহরণ। এই সাফল্য দেশের গ্রামীণ ও শহরবর্তী অর্থনীতির সমন্বয়, উদ্ভিদ উৎপাদনের বৃদ্ধি এবং সরকারী নীতির ফলাফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ভারত যখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠছে, তখন এই উন্নতি স্থায়ী রাখা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করা প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে। ভবিষ্যতে ভারত যদি এই গতি ধরে রাখতে পারে, তবে এটি বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চে একটি অপরিহার্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।