অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফুলবাড়ীতে (Fulbari) সোমবার সকাল থেকে চরম অচলাবস্থা। ভুটানের ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ভারতীয় ট্রাক মালিক ও চালকরা। তাঁদের অভিযোগ, ভুটানের ট্রাকগুলো ভারত থেকে বাংলাদেশে পাথর পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু ভারতীয় ট্রাকচালকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই বৈষম্যের প্রতিবাদে শতাধিক ট্রাকচালক ও মালিক সীমান্তের রাস্তায় বসে অনশন শুরু করেছেন, ফলে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য পথে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে।
আন্দোলনের জেরে ফুলবাড়ী সীমান্তে প্রায় দুই হাজার ট্রাক আটকে পড়েছে। দীর্ঘ যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পণ্যবাহী গাড়ির চালক, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ ও বিএসএফ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাঁদের দাবি মানা হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।
এক আন্দোলনকারী ট্রাকচালক বলেন, “ভুটানের ট্রাকগুলো বাংলাদেশে পাথর নিয়ে যাচ্ছে, আর আমরা হাতে কাজ না পেয়ে জীবিকার সংকটে পড়েছি। আমরা শুধু সমান সুযোগ চাই। ভারতীয় ট্রাকচালকদেরও এই বাণিজ্যে অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে।” তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ভুটানের ট্রাকগুলো কম খরচে পরিবহন করছে, যা ভারতীয় ট্রাকচালকদের বাজার থেকে ছিটকে দিচ্ছে। এই বৈষম্য তাঁদের জীবনযাত্রাকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, এই আন্দোলনের ফলে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি হয়, যার মধ্যে পাথর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আটকে পড়া ট্রাকগুলোর মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য পণ্য রয়েছে, যা বাংলাদেশের বাজারে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এক ব্যবসায়ী বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রশাসনকে দ্রুত সমাধান বের করতে হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চলছে। তবে, আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। বিএসএফের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করছি। পরিস্থিতি যাতে আরও উত্তপ্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ঘটনা ভারত, বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। ভুটানের ট্রাকগুলোর জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা থাকলেও, ভারতীয় ট্রাকচালকদের জন্য একই সুযোগ না থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। আন্দোলনকারীরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং ন্যায্য সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনা স্থানীয় অর্থনীতি এবং সীমান্ত বাণিজ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। ফুলবাড়ী সীমান্তের এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে এবং কীভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।