ট্রাম্পের শুল্কের চাপেও অটুট দালাল স্ট্রিট: ভারতের শক্তি কারা?

আমেরিকার কড়া শুল্ক বৃদ্ধির মধ্যেও ভারতীয় শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রয়েছে, বৃহত্তর ভারতীয় মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীর কারণে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দেশের প্রধান দুই…

Indian stock market stability

আমেরিকার কড়া শুল্ক বৃদ্ধির মধ্যেও ভারতীয় শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রয়েছে, বৃহত্তর ভারতীয় মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীর কারণে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দেশের প্রধান দুই শেয়ার সূচক ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন ধীরে ধীরে বাজার ত্যাগ করছেন, তখনই দেশীয় রিটেল ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই ডালাল স্ট্রিটকে ভর করেছে।

কোটাক মহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজার হর্ষ উপাধ্যায় বলেন, “গত দশকে বিদেশি মালিকানা ২৪% থেকে কমে প্রায় ১৬% হয়েছে। আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি বাজারের হাল নির্ধারণ করত, এখন দেশীয় বিনিয়োগকারীরাই সেটি করছে।”

   

দেশীয় বিনিয়োগকারীর শক্তি বাড়ছে

বিদেশি তহবিলের প্রস্থান সত্ত্বেও ভারতীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছেন। মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা কোম্পানি এবং রিটেল বিনিয়োগকারীরা ক্রমশ বিনিয়োগের মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠছেন, যা ব্যবসা ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখছে।

নতুন প্রজন্মের ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা আর বৈশ্বিক বাজারের ধারা অনুসরণ করছেন না। অনেকেই মাসিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিউচুয়াল ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগ করছেন, দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।

বিদেশি বিনিয়োগের সরে যাওয়ার কারণ Indian stock market stability

ভারতের বাজার থেকে বিদেশি তহবিল প্রস্থান করার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো চীনা শেয়ারবাজারের শক্তিশালী পুনরুদ্ধার, যেখানে হংকংয়ের সূচক এপ্রিল থেকে ২১% বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকার শুল্ক নীতি ভারতীয় রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে রাশিয়ার তেল ক্রয় সংক্রান্ত শুল্ক।

এই শুল্ক বিশেষ করে আমেরিকা বাজারে কাজ করা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের শ্রমিকদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ভারতকে চীনের বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ার পরিকল্পনাও ঝুঁকির মুখে। এছাড়াও, ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের সম্ভাব্য দূরত্ব বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

Advertisements

সরকারের সমর্থন ও মধ্যবিত্তের আস্থা

ভারতের সরকার এই ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রক ভ্যাট হ্রাস ও সহজীকরণের মাধ্যমে ভোক্তা ব্যয় বাড়ানোর এবং রপ্তানি ক্ষতি সামলানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এই নীতি পদক্ষেপগুলি ভারতীয় মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। গ্রীষ্মের মধ্যে ব্যক্তিগত ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২ কোটি অতিক্রম করেছে, যা ভারতীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি সাতজনের একটির সমান।

সঞ্চয়ের “ফাইন্যান্সিয়ালাইজেশন”

ASK হেজ সলিউশনসের সিইও বৈভব সাঙভাভি এই প্রবণতাকে “ভারতের সঞ্চয়ের ফাইন্যান্সিয়ালাইজেশন” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে অর্থ আগে রিয়েল এস্টেট বা সোনায় বিনিয়োগ হতো, তা এখন শেয়ারবাজারে যাচ্ছে।”

এই পরিবর্তন ভারতীয় পাবলিক কোম্পানিগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যম ও ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকরা হঠাৎ আর্থিক চাপে থাকলেও দেশের শেয়ারবাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।

ভারতের বাজারে দেশীয় বিনিয়োগকারীর উত্থান কেবল ডালাল স্ট্রিটকে স্থিতিশীল রাখছে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য নতুন আস্থা সৃষ্টি করছে।

Business: The Indian stock market remains stable despite US tariffs, driven by domestic retail investors. A new report shows local investors and mutual funds are now the key force, stabilizing the market as foreign investors exit.