শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি, সেনসেক্স ৫০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি

বুধবার সকালে বিশ্ববাজারের ইতিবাচক প্রবণতার প্রভাব পড়েছে ভারতীয় শেয়ারবাজারে (stock market)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক নীতিমালা সংক্রান্ত মন্তব্য এবং ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম…

Indian stock market

বুধবার সকালে বিশ্ববাজারের ইতিবাচক প্রবণতার প্রভাব পড়েছে ভারতীয় শেয়ারবাজারে (stock market)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক নীতিমালা সংক্রান্ত মন্তব্য এবং ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের প্রতি তার সমর্থনসূচক বক্তব্য বিনিয়োগকারীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। তার ফলে বাজারে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য উল্লাস।

বিএসই সেনসেক্স (BSE Sensex) দিনের শুরুতে ৫২৮.৮৭ পয়েন্ট বা ০.৬৬ শতাংশ বেড়ে পৌঁছায় ৮০,১২৪.৪৬ পয়েন্টে। অন্যদিকে, নিফটি ৫০ (Nifty 50) সূচক ১৮২.৯০ পয়েন্ট বা ০.৭৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪,৩৫০.১৫ পয়েন্টে।

   

ট্রাম্পের মন্তব্য ও বিশ্ববাজারের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি এক বক্তব্যে জানিয়েছেন, চীনের উপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সম্ভাব্য শুল্ক অনেকটা হ্রাস পেতে পারে। তার এই মন্তব্য বাজারে উত্তেজনা হ্রাস করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্থিতিশীলতার বার্তা পৌঁছেছে। তিনি ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের প্রতি তাঁর সমর্থনও ব্যক্ত করেন, যা আর্থিক নীতিতে অস্থিরতার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।

এর ফলে মঙ্গলবার রাতে ওয়াল স্ট্রিটে উল্লেখযোগ্য ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ (Dow Jones Industrial Average) ২.৬৬ শতাংশ বেড়ে ৩৯,১৮৬.৯৮ পয়েন্টে বন্ধ হয়। একইসঙ্গে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ (S&P 500) ২.৫১ শতাংশ বেড়ে ৫,২৮৭.৭৬ পয়েন্টে এবং নাসডাক কম্পোজিট (Nasdaq Composite) ২.৭১ শতাংশ বেড়ে ১৬,৩০০.৪২ পয়েন্টে পৌঁছায়।

এছাড়া ফিউচার মার্কেটেও ইতিবাচক প্রবণতা বজায় ছিল। ডাও জোন্স ফিউচার ১.২১ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার ১.৫৬ শতাংশ এবং নাসডাক ১০০ ফিউচার ১.৭৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব

মার্কিন বাজারের এই উল্লাসের প্রভাব পড়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজারেও। জাপানের নিক্কেই ২২৫ (Nikkei 225) সূচক ১.৮৯ শতাংশ বেড়ে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি (Kospi) ০.৯৮ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ (S&P/ASX 200) সূচক ১.৬৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্ববাজারের এমন ইতিবাচক প্রবণতা ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে এবং বাজারে এক প্রকার ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাঙ্কিং এবং ফাইন্যান্স সেক্টরের শেয়ারগুলোতে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য চাহিদা।

ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সাময়িকভাবে মৃদু অবস্থান এবং ফেডের উপর সমর্থনসূচক মন্তব্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক কড়াকড়ির বিষয়ে অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে।

তবে তারা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বরাবরই অনিশ্চয়তাপূর্ণ, তাই দীর্ঘমেয়াদে বাজার কতটা স্থিতিশীল থাকবে, তা এখনই বলা কঠিন। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, বিশ্ববাজারের সঙ্গতিসূত্রে বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা গেলেও, দেশীয় অর্থনৈতিক সূচক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালাও আগামী দিনে বাজারের গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সার্বিকভাবে, বুধবারের বাজারে সূচনার এই গতি প্রমাণ করে যে বৈশ্বিক ইঙ্গিত এবং ভূ-রাজনৈতিক মন্তব্য শেয়ারবাজারে কতটা তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় বাজারের সাম্প্রতিক এই চাঙ্গাভাব বজায় থাকবে কি না, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের নীতিগত পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উপর।

Advertisements