অটো শেয়ারে উল্লম্ফন, সেনসেক্সে সামান্য পতন, নিফটি সামান্য ঊর্ধ্বমুখী

শুক্রবার দিনের অস্থির লেনদেনের পর দেশীয় শেয়ার বাজার কার্যত সমতল অবস্থায় শেষ হলেও সামগ্রিক মনোভাব ইতিবাচকই ছিল। দিনের শুরুতে তীব্র বিক্রির চাপে সূচকগুলি হু-হু করে…

Sensex, Nifty Slip as IT Stocks Fall; Wipro Earnings in Focus

শুক্রবার দিনের অস্থির লেনদেনের পর দেশীয় শেয়ার বাজার কার্যত সমতল অবস্থায় শেষ হলেও সামগ্রিক মনোভাব ইতিবাচকই ছিল। দিনের শুরুতে তীব্র বিক্রির চাপে সূচকগুলি হু-হু করে নেমে যায়, তবে দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমাগত পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। বড় ভরসা হয়ে ওঠে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের জোরদার ক্রয়চাপ।

দিনের শেষে বিএসই সেনসেক্স সামান্য ৭.২৫ পয়েন্ট বা ০.০১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৮০,৭১০.৭৬-এ। অপরদিকে, এনএসই নিফটি ৬.৭০ পয়েন্ট বা ০.০৩ শতাংশ বেড়ে ২৪,৭৪১.০০-এ শেষ করে।

   

এসবিআই সিকিউরিটিজ-এর টেকনিক্যাল রিসার্চ ও ডেরিভেটিভস প্রধান সুদীপ শাহ বলেন, “জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের পর বিনিয়োগকারীদের মনোভাব কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। কিছু সেক্টরে মুনাফা বুকিং দেখা গেছে, যা দিনের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।”

রিলিগেয়ার ব্রোকিং-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অজিত মিশ্র জানান, “নীতি সংস্কার নিয়ে ইতিবাচক দিক থাকলেও বাজার ধীরে ধীরে এক ধরনের সংহতি পর্যায়ে প্রবেশ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানা বিক্রির কারণে সতর্কতা দেখা দিচ্ছে। যদিও নানান সেক্টরে লেনদেনের সুযোগ রয়েছে, তবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।”

বিশ্লেষকদের মতে, সূচকের গতিবিধি বর্তমানে অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির অঞ্চলের মধ্যে আটকে নেই। ফলে সূচক সীমিত পরিসরে ঘুরপাক খেতে পারে। শাহ জানান, “নিফটি সূচক এখনও রেঞ্জ-বাউন্ড। দৈনিক আরএসআই ৪৯.৩৯-এ রয়েছে, যা নিরপেক্ষ অবস্থান নির্দেশ করছে।”

সাম্প্রতিক জিএসটি সংস্কারে একাধিক পণ্যে করহার হ্রাসের খবর বাজারে আশার সঞ্চার করলেও, তা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। প্রাথমিক উল্লম্ফন মুনাফা বুকিংয়ের কারণে দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা সূচকে সাময়িক নিম্নমুখী চাপ তৈরি করতে পারে।

দিনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল অটো শেয়ার। গাড়ির উপর জিএসটি হার কমার খবরের জেরে অটো সেক্টরে সূচক প্রায় ১% এর বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে সেই লাভ ম্লান হয়ে যায় ভোক্তা পণ্য ও আইটি শেয়ারের দুর্বলতায়।

Advertisements

আইটি সেক্টর দিনের শুরুতে শক্তিশালী অবস্থান নিলেও শেষে ১.৩% নিম্নমুখী হয়ে দিন শেষ করে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা এখানে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অপরদিকে, মিডক্যাপ ও স্মলক্যাপ সূচক তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। উভয় সূচকই প্রায় ০.৩% করে বৃদ্ধি পায়।

এনএসই নিফটি ৫০০ সূচকের মধ্যে ২৫৮টি শেয়ার অগ্রগতি দেখিয়েছে, অন্যদিকে ২৪১টি শেয়ার পতনে ছিল। অর্থাৎ বাজারে প্রস্থ ছিল কার্যত নিরপেক্ষ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজার এখন সাময়িক সংহতি পর্যায়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানা বিক্রি এবং স্থানীয় মুনাফা বুকিং মিলে সূচকের গতি আপাতত সীমিত থাকতে পারে। তবে সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত, জিএসটি কাঠামোয় পরিবর্তন, এবং শক্তিশালী দেশীয় চাহিদা ভবিষ্যতে বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করতে পারে।

অজিত মিশ্র বলেন, “এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেও অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।”

শুক্রবার বাজার কার্যত সমতল থাকলেও দিনভর অস্থিরতা ও বিনিয়োগকারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করল যে, বর্তমানে বাজারে স্থিতিশীলতা নেই। তবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও অটো শেয়ারের ইতিবাচক অবদান সূচককে ভারসাম্যে ফিরিয়ে এনেছে। জিএসটি সংস্কারের খবর বাজারে আশাবাদ তৈরি করলেও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি বিনিয়োগের ধারার কারণে বাজার আপাতত সীমিত পরিসরেই ঘোরাফেরা করছে।