ভারতের শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবার শক্তিশালী সেশনের মাধ্যমে বন্ধ হয়েছে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (BSE) সেনসেক্স ৮৩,০০০ পয়েন্টের গণ্ডি অতিক্রম করেছে এবং ৩০০-এর বেশি পয়েন্ট উত্থান দেখিয়েছে। একইভাবে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (NSE) নিফটি ৫০ সূচকও ২৫,৪০০ পয়েন্টের ওপর বন্ধ হয়েছে, যা প্রায় ১০০ পয়েন্টের বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
সেনসেক্স ও নিফটির শীর্ষ শেয়ার পারফরম্যান্স:
সেন্সেক্সের ৩০টি শেয়ারের মধ্যে ইটার্নাল, সান ফার্মা, ইনফোসিস, এইচডিএফসি ব্যাংক এবং পাওয়ারগ্রিড শেয়ারগুলি সর্বাধিক লাভ করেছে।
অন্যদিকে, বাজাজ ফাইন্যান্স, টাটা মোটরস, ট্রেন্ট, আল্ট্রাটেক সিমেন্ট এবং এশিয়ান পেইন্টস লেনদেনের দিনে হারের মুখোমুখি হয়েছে।
বড় ও মাঝারি বাজারে ইতিবাচক প্রভাব: Indian Stock Market
বৃহত্তর বাজারেও ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে। নিফটি মিডক্যাপ সিলেক্ট সূচক প্রায় ০.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্ষেত্রভিত্তিক দিক দিয়ে, ফার্মা সূচক ১.৫০ শতাংশ উত্থান দিয়ে নজর কেড়েছে। তবে মিডিয়া সূচক ০.৩০ শতাংশ পিছিয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক বাজার ও সুদের হারের প্রভাব:
এই উত্থান মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের ইতিবাচক প্রভাব এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের (US Federal Reserve) মূল সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে ঘটেছে।
তাছাড়া, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি বাজারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে।
দিনের শুরুতে সূচক পারফরম্যান্স:
সেনসেক্স সকালেই ৮৩,০৪০ পয়েন্ট দিয়ে উচ্ছ্বাসজনক সূচনার সঙ্গে শুরু করেছে, যা প্রায় ৩৫০ পয়েন্টের উত্থান নির্দেশ করে।
নিফটি সূচক ২৫,৪২১.৩৫ পয়েন্ট দিয়ে ৯১ পয়েন্টের বৃদ্ধি সহ দিনটি শুরু করেছে।
জিওজিট ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি.কে. বিজয়কুমার বলেন, “বাজারের চলমান উত্থান মূলত আয়ের পুনর্জীবন এবং ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশার কারণে।”
প্রাক-বাজার সূচক ও বিনিয়োগ প্রবাহ:
গিফট নিফটি (GIFT Nifty) সূচকও প্রাক-বাজারে ৫০ পয়েন্টের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৫,৩০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে।
বিনিয়োগের প্রবাহের দিকে তাকালে দেখা যায়, বৈদেশিক সংস্থা (FIIs) বুধবার প্রায় ১,১২৪.৫৪ কোটি টাকা বিক্রি করেছে। এর পরেও বাজারে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রয়েছে।
গতকের বাজার কার্যক্রম:
গত বুধবার সেনসেক্স ৩১৩.০২ পয়েন্ট উত্থান নিয়ে ৮২,৬৯৩.৭১ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছিল। সেইদিন সেনসেক্স সেশন চলাকালীন সর্বোচ্চ ৮২,৭৪১.৯৫ পয়েন্টে পৌঁছেছিল।
নিফটি সূচকও ৯১.১৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ২৫,৩৩০.২৫ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারে উত্থান শুধু সুদের হারের পরিবর্তন বা আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব নয়, বরং ভারতীয় অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার ইতিবাচক প্রভাবের প্রতিফলন।
বিশেষ করে ফার্মা, ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলির বৃদ্ধি বাজারের মোটিফকে আরও শক্তিশালী করেছে।
মধ্যম এবং ছোট বাজারের শেয়ারগুলিতেও ইতিবাচক উত্থান লক্ষ্য করা গেছে। নিফটি মিডক্যাপ সিলেক্ট সূচক প্রায় ০.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ছোট ও মধ্যম খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক সংকেত।
তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। যদিও উত্থান সমর্থিত, তবুও বাজারে অস্থিরতা থাকতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং হঠাৎ ওঠানামার প্রভাব থেকে সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা:
বৃহস্পতিবারের দিনের শেষ অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে, ভারতের শেয়ার বাজারে ইতিবাচক ধারা চলছে। এটি আন্তর্জাতিক প্রভাব, সুদের হারের পরিবর্তন এবং ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনার ইতিবাচক প্রত্যাশার মিলিত ফলাফল।