ভারতীয় মুদ্রা আজ ৮ পয়সা কমে ৮৬.৯৬-তে পৌঁছেছে, যা মূলত বিদেশি তহবিলের প্রবাহের অব্যাহত হ্রাস এবং মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হয়েছে। আজকের এই পতন ছিল আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়সার। ফোরেক্স ট্রেডারদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশীয় শেয়ার বিক্রি অব্যাহত রাখায় এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) সমর্থন ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় ডলারের বিরুদ্ধে রুপির নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আজকের ট্রেডিং সেশনের শুরুতে ৮৬.৯৪ টাকাতে ওপেন হয়েছিল এবং দিনের মধ্যে ৮৬.৯১-এ উচ্চতা পৌঁছেছিল। তবে, দিনের শেষে তা ৮৬.৯৬-এ নেমে আসে, যা আগের বন্ধের তুলনায় ৮ পয়সার পতন। সোমবার, ভারতীয় মুদ্রা ১৭ পয়সা কমে ৮৬.৮৮-এ বন্ধ হয়েছিল।
ফোরেক্স ট্রেডাররা জানাচ্ছেন যে, ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির হতাশাজনক তথ্যও ভারতীয় মুদ্রার উপর চাপ ফেলেছে। জানুয়ারিতে ভারতের রপ্তানি ৩ মাস ধরে হ্রাস পেয়েছে, যা ২.৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৪৩ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ২২.৯৯ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে।
এছাড়া, জানুয়ারিতে সোনার আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমদানির পরিমাণ ১০.২৮ শতাংশ বেড়ে ৫৯.৪২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা ভারতীয় অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বব্যাপী ডলারের শক্তি পরিমাপকারী ডলার ইনডেক্স ০.৩৫ শতাংশ বেড়ে ১০৬.৯৫-এ দাঁড়িয়েছে। এই বৃদ্ধি ভারতীয় মুদ্রার আরও পতনে অবদান রাখছে।
এছাড়া, বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ০.৭৭ শতাংশ বেড়ে ৭৫.৮০ ডলার প্রতি ব্যারেল হয়েছে। এই তেলের দাম বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতির ওপর আরও চাপ ফেলছে, কারণ এটি আমদানির খরচ বাড়াচ্ছে।
ভারতীয় শেয়ার বাজারেও আজ নেতিবাচক প্রবণতা ছিল। ৩০ শেয়ার সম্বলিত বিএসই সেনসেক্স ২৯.৪৭ পয়েন্ট, বা ০.০৪ শতাংশ কমে ৭৫,৯৬৭.৩৯-এ দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, নিফটি ১৪.২০ পয়েন্ট, বা ০.০৬ শতাংশ কমে ২২,৯৪৫.৩০-এ বন্ধ হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা জানাচ্ছেন যে, FIIs (ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরস) সোমবার ৩,৯৩৭.৮৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন, যা ভারতীয় মুদ্রার আরও পতনের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, “আমরা আশা করছি যে, দুর্বল শেয়ারবাজার এবং মার্কিন ডলারের পুনরুদ্ধারের মধ্যে ভারতীয় মুদ্রা নেতিবাচক প্রবণতা দেখাবে।। FIIs এর বিক্রির প্রবণতা ভারতীয় মুদ্রার উপর চাপ ফেলবে। তবে, RBI যদি বাজারে হস্তক্ষেপ করে, তবে ভারতীয় মুদ্রা কিছুটা সমর্থন পেতে পারে।”
এছাড়া, আগামী দিনে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (FOMC) সদস্যদের ভাষণের দিকে ট্রেডাররা নজর রাখবেন, যা মার্কিন ডলারের ভবিষ্যত প্রবণতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতে পারে।
গ্লোবাল মঞ্চে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সোমবার ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে একটি বিরল বৈঠক করেছেন, যাতে তারা তাদের প্রতিভা কাজে লাগাতে পারেন এবং চীনের অর্থনীতির মন্দাভাব কাটানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। এই বৈঠকটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের রপ্তানির উপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, যা চীনের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় মুদ্রা আরও দুর্বল হতে পারে, বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তবে, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার নীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির সিদ্ধান্ত ভারতীয় মুদ্রার ভবিষ্যত দিশা নির্ধারণ করবে। এভাবে, ভারতীয় মুদ্রা এবং অর্থনীতি সম্পর্কিত নানা অর্থনৈতিক সংকেতগুলো খেয়াল রেখে আগামী দিনগুলোর জন্য মনোযোগী থাকতে হবে।