ট্রেনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে AI, ভারতীয় রেলের বড় পদক্ষেপ

নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেনের নিরাপত্তা ও পরিষেবার মান আরও উন্নত করতে ভারতীয় রেলওয়ে (Indian Railways) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি, ভারতীয় রেলওয়ে এবং ডেডিকেটেড…

Indian Railways Boosts Train Safety With AI-Powered Inspection System

নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেনের নিরাপত্তা ও পরিষেবার মান আরও উন্নত করতে ভারতীয় রেলওয়ে (Indian Railways) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি, ভারতীয় রেলওয়ে এবং ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (DFCCIL)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে ‘মেশিন ভিশন বেসড ইন্সপেকশন সিস্টেম’ (MVIS) স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা ট্রেনের নিরাপত্তা আরও মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই সমঝোতা স্মারকটি রেল ভবনে ভারতীয় রেল বোর্ডের ডিরেক্টর (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সুমিত কুমার এবং ডিএফসিসিআইএলের জেনারেল ম্যানেজার (মেকানিক্যাল) জওহর লাল-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।

   

রেল মন্ত্রকের দেওয়া এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, MVIS হলো একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML)-এর মাধ্যমে কাজ করে। এই প্রযুক্তি ট্রেনের নিচের অংশের (আন্ডার-গিয়ার) উচ্চ-রেজোলিউশন চিত্র ধারণ করে এবং চলন্ত অবস্থায় ট্রেনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কোনো ঝুলন্ত, আলগা বা নিখোঁজ থাকা উপাদান শনাক্ত করতে পারে।

যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে এই সিস্টেমটি রিয়েল-টাইমে সতর্কবার্তা জারি করে, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। এর ফলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ অনেকটাই স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে এবং ম্যানুয়াল ইন্সপেকশন কমে আসবে।

চুক্তি অনুযায়ী, DFCCIL চারটি এমভিআইএস ইউনিট ক্রয়, সরবরাহ, ইনস্টলেশন, পরীক্ষা এবং কমিশন করার দায়িত্বে থাকবে। রেলওয়ে জানিয়েছে, এই প্রযুক্তি ভারতীয় রেলওয়েতে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে ট্রেন পরিচালনার নিরাপত্তা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এবং পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।

রেলওয়ে মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘এই প্রযুক্তি ভারতীয় রেলের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এটি রেলের আধুনিকীকরণ ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে আমাদের বৃহত্তর উদ্যোগের একটি অংশ। ভবিষ্যতের রেল অবকাঠামো নির্মাণে এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রেলের নিরাপত্তার মান আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করবে এবং ডিজিটাল রেল নেটওয়ার্কের পথে আরও এক ধাপ অগ্রগতি ঘটাবে।’’

Advertisements

অন্যদিকে, নিয়োগের ক্ষেত্রেও ভারতীয় রেলওয়ে বড় সাফল্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (Q1 FY26) ভারতীয় রেলওয়ে ইতিমধ্যেই ৯,০০০-এর বেশি নিয়োগপত্র প্রদান করেছে। চলতি অর্থবছরের শেষের মধ্যে ৫০,০০০-এরও বেশি নিয়োগপত্র প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে রেলের।

রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডস (RRBs) নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় পরিসরের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে এখনও পর্যন্ত সাতটি বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য সারা দেশে ১.৮৬ কোটি প্রার্থীকে নিয়ে কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষা (CBT) আয়োজন করা হয়েছে।

নিয়োগ সংক্রান্ত এই উদ্যোগে গ্রুপ ডি, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, ক্লার্ক, টেকনিশিয়ান, অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকমোটিভ পাইলটসহ নানা পদে প্রার্থী নিয়োগ করা হচ্ছে। করোনার পর এই বিপুল নিয়োগ প্রক্রিয়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরি করছে।

রেলওয়ে মন্ত্রক জানিয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করা হচ্ছে। এর মধ্যে CBT পদ্ধতি অন্যতম, যা প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ে সহজ ও দ্রুত সমাধান দিচ্ছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতীয় রেলওয়ে একাধারে নিরাপত্তা এবং মানব সম্পদ— দুই ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে MVIS-এর মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনার নিরাপত্তায় বিশ্বমানের প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরির নতুন দরজা খুলে যাচ্ছে।

রেল মন্ত্রকের মতে, এই দুই উদ্যোগই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ভারত (Atmanirbhar Bharat) এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উন্নত প্রযুক্তি ও জনশক্তি— এই দুই শক্তির সমন্বয়ে ভারতীয় রেলওয়ে আগামী দিনে আরও বেশি কার্যকর, নিরাপদ ও আধুনিক পরিষেবা দিতে সক্ষম হবে।