Indian Railways: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারতের রেলওয়ে বিভাগ একাধিক নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জম্মু ও উদমপুর থেকে দিল্লিগামী একাধিক বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনগুলিতেও ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।
বিশেষ ট্রেনের পরিকল্পনা:
ভারতীয় রেলওয়ের এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে জম্মু ও উদমপুর থেকে রাজধানী দিল্লিগামী একাধিক বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে রেলওয়ে যাত্রীদের নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল যাত্রা নিশ্চিত করতে চায়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেন নম্বর ০৪৬১২, শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে জম্মু থেকে যাত্রা শুরু করবে। এই বিশেষ ট্রেনে মোট ২৪টি কোচ থাকবে, যার মধ্যে ১২টি সাধারণ (unreserved) এবং ১২টি সংরক্ষিত (reserved) কোচ থাকবে। সাধারণ এবং সংরক্ষিত শ্রেণির যাত্রীরা উভয়েই এই ট্রেনে যাত্রা করতে পারবেন।
এছাড়া, একটি ২০-কোচবিশিষ্ট বন্দে ভারত রেক ব্যবহার করে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে উদমপুর থেকে ছাড়বে। এই ট্রেন জম্মু ও পাঠানকোট হয়ে রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছাবে। এই ট্রেনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের জেলা গুলিকে রাজধানীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের আওতায় আনা হবে।
তাছাড়াও, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ (১৯:০০ ঘন্টা), একটি ২২-কোচবিশিষ্ট এলএইচবি (LHB) সম্পূর্ণ সংরক্ষিত বিশেষ ট্রেন জম্মু থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। এই সমস্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা ও চলাচল সহজতর করতে রেল মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় উদ্যোগের ফল।
অন্ধ্রপ্রদেশে কড়া নিরাপত্তা: নেল্লোর স্টেশনে তল্লাশি অভিযান:
এদিকে, পহেলগাঁও হামলার পর অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর রেলওয়ে স্টেশনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নেল্লোর জেলার পুলিশ সুপার এবং গুন্টাকাল রেলওয়ে এসপি-র নির্দেশে, ডগ স্কোয়াড, জিআরপি (GRP), সান্তাপেটা থানার পুলিশ, আরপিএফ (RPF), এবং বোম্ব ডিসপোজাল দল যৌথভাবে তল্লাশি অভিযান চালায়।
রেলওয়ে ডিএসপি মুরলীধর বলেন, “পহেলগাঁও-এর ঘটনার পর আমরা রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং গুন্টাকালের সিনিয়র রেল পুলিশ অফিসারের নির্দেশে তল্লাশি শুরু করি। এই অভিযান পরিচালনার জন্য মোট ছয়টি দল গঠন করা হয়, যাতে সমগ্র রেল স্টেশন ও আশপাশের এলাকা সুনির্দিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।”
এই অভিযানে নেল্লোর ছাড়াও গুদুর, কাভালী, ভঙ্গোল, এবং চিরালা রেল স্টেশনেও তল্লাশি চালানো হয়। প্ল্যাটফর্ম, ট্রেনের কামরা, প্যাকেট পার্সেল অফিস, স্টেশন চত্বর, আশেপাশের হোটেল, লজ ও বাসস্ট্যান্ডে তল্লাশি চালানো হয়। অভিযানে প্রায় ১০০ জন নিরাপত্তা কর্মী অংশ নেন।
ডিএসপি মুরলীধর আরও বলেন, “এই তল্লাশি একটি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় আশেপাশের এলাকাও সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।”
নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার:
সম্প্রতি দেশে একাধিক সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে এবং পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিশেষ ট্রেনের মাধ্যমে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একইসাথে রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে অতিরিক্ত নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সহযোগিতাও বিশেষভাবে প্রয়োজন, যাতে তারা সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে পারেন। রেল ও নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। তবে ভারতীয় রেলওয়ে এবং পুলিশ প্রশাসনের এমন তৎপরতা আশা জাগায় যে, দেশ কোনও ধরনের হুমকির মুখেও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যাত্রীদেরও এই পরিস্থিতিতে আরও সচেতন ও সহনশীল হয়ে চলাচল করা দরকার।