ভারতীয় রেলের (Railways) পক্ষ থেকে পুজোর মরশুমে যাত্রীদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। উৎসবের সময়কালকে কেন্দ্র করে রেল নিয়ে এসেছে এক আকর্ষণীয় ছাড়ের অফার। এবার কোনও গন্তব্যের যাতায়াতের রিটার্ন টিকিট একসঙ্গে কাটলেই মিলবে মোট ভাড়ার উপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। দীর্ঘদিন পর রেলের এমন উদ্যোগ যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ও উৎসাহের সঞ্চার করেছে।
বাংলা তথা গোটা দেশের বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো শুধু উৎসব নয়, বরং এক বিশেষ আবেগ। এই সময় অনেকেই পরিবারের সঙ্গে কিংবা বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র, আবার কেউ ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কিন্তু উৎসবের সময় ভ্রমণের খরচ অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই কারণেই রেলের এই ছাড় অনেক যাত্রীকেই টানবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রেলের (Railways) নিয়ম অনুযায়ী, এই ছাড় শুধুমাত্র উৎসবের মরশুমের জন্যই প্রযোজ্য হবে। গন্তব্যে যাত্রার তারিখ হতে হবে ১৩ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে। আর ফেরার যাত্রার তারিখ হতে হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে। অর্থাৎ, যাত্রীদের নির্দিষ্ট এই সময়সীমার মধ্যে যাওয়া ও আসার টিকিট কাটতে হবে।
শর্তও রয়েছে বেশ কয়েকটি। প্রথমত, যাওয়া ও আসার টিকিট একই সঙ্গে কাটতে হবে। দ্বিতীয়ত, একই শ্রেণির (সেকশন) টিকিট কাটতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যাওয়ার পথে যদি স্লিপার ক্লাসের টিকিট কাটা হয়, তবে ফেরার পথেও স্লিপার ক্লাসের টিকিটই কাটতে হবে। তৃতীয়ত, এই টিকিট যেকোনও একটি মাধ্যমেই (অফলাইন বা অনলাইন) কাটতে হবে—দুই পদ্ধতির মিশ্রণ চলবে না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল—টিকিট কনফার্ম হলে তবেই এই ২০ শতাংশ ছাড় প্রযোজ্য হবে। আর একবার টিকিট কেটে ফেললে সেটি বাতিল করলে কোনও রিফান্ড দেওয়া হবে না। ফলে যাত্রীদের আগে থেকেই ভ্রমণের পরিকল্পনা ও তারিখ নির্ধারণ করে টিকিট কাটতে হবে।
এই অফার প্রযোজ্য হবে দেশের যেকোনও মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে। অর্থাৎ, যাত্রীদের জন্য অপশন থাকবে অনেক বিস্তৃত। এর ফলে উৎসবের সময় বিমানে যাত্রার প্রবণতা যাঁদের বেশি ছিল, তাঁদেরও রেলের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। বিমান ভাড়ার তুলনায় রেলের খরচ এমনিতেই তুলনামূলকভাবে কম, তার উপর যদি ২০ শতাংশ ছাড় মেলে, তবে অনেকেই রেলের টিকিট (Railways) বুক করতে আগ্রহী হবেন বলে আশা।
পুজোর সময় সাধারণত ট্রেনের টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বেশিরভাগ আসন দ্রুত বুক হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রেলের নতুন স্কিম যাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ালেও, টিকিট কাটার প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলে ধারণা। তবে যারা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে বুকিং করবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এই সুবিধা নিতে পারবেন।
এই অফারের লক্ষ্য শুধু যাত্রীদের খরচ কমানো নয়, বরং উৎসবের সময় রেলে ভ্রমণকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা। রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিমানের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে অনেক যাত্রী রেলের পরিবর্তে আকাশপথ বেছে নিচ্ছেন। এই স্কিমের মাধ্যমে তাঁদের আবার ট্রেন ভ্রমণের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
বাংলার মানুষ উৎসবপ্রিয়। দুর্গাপুজোর মরশুমে বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে নতুন জায়গা ঘুরে দেখার আনন্দই আলাদা। সেই আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে রেলের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ভ্রমণপিপাসু মানুষ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম খরচে প্রিয় গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, পুজোর আগে রেলের (Railways) এই ছাড়ের ঘোষণা যাত্রীদের কাছে এক বড় উপহার হয়ে এল। এখন দেখার বিষয়, এই অফার কতটা যাত্রী আকর্ষণ করতে পারে এবং উৎসবের সময় ট্রেনে ভ্রমণের সংখ্যা কতটা বাড়ায়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—পুজোর মরশুমে এ বছর রেল ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক ও সাশ্রয়ী হতে চলেছে।