মার্কিন শুল্ক ছাড়ে ভারতীয় ফার্মা সংস্থার লাভের সম্ভাবনা বাড়ল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি পারস্পরিক শুল্কের তালিকা থেকে ওষুধকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল (Indian pharmaceutical) কোম্পানিগুলোর জন্য স্বস্তির খবর এসেছে। এই…

Indian pharmaceutical Stocks Surge

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি পারস্পরিক শুল্কের তালিকা থেকে ওষুধকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল (Indian pharmaceutical) কোম্পানিগুলোর জন্য স্বস্তির খবর এসেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ভারতীয় ফার্মা শেয়ারগুলো ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে পতন দেখা গেছে। এশিয়ার স্বাস্থ্যসেবা খাতের শেয়ারগুলোও এদিন উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখেছে, যেখানে ভারতীয় জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকরা এই ঊর্ধ্বগতির নেতৃত্ব দিয়েছে।

মার্কিন শুল্ক থেকে ওষুধের ছাড়

ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং মিত্র দেশগুলোর পণ্যও রয়েছে। তবে, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যসহ কিছু পণ্যকে এই শুল্ক থেকে সাময়িকভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই ছাড় ভারত এবং জাপানের মতো দেশগুলোর জন্য বড় স্বস্তি এনেছে, যারা মার্কিন বাজারে ওষুধের প্রধান রপ্তানিকারক। এর ফলে ভারতীয় ওষুধগুলো অতিরিক্ত ১০% কর ছাড়াই মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে পারবে, যা তাদের রপ্তানি শিল্পকে রক্ষা করবে এবং মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

অবজার্ভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি (ওইসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের মোট ওষুধ রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল, যার মূল্য ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। এই ওষুধগুলোর বেশিরভাগই জেনেরিক ওষুধ, যা ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় সস্তা। একইভাবে, জাপান ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৩৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছিল। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, মার্কিন বাজার ভারত এবং জাপানের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

জেফরিসের বিশ্লেষকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো “এখনকার জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।” তবে, তারা সতর্ক করে বলেছেন যে, ভবিষ্যতে শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জেফরিস আরও উল্লেখ করেছে যে, ২০২৫ আর্থিক বছরে মার্কিন বিক্রয় ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলোর আয়ের একটি বড় অংশ গঠন করবে। উদাহরণস্বরূপ, সিনজিনের ৬৮%, গ্ল্যান্ড ফার্মার ৫৪%, বায়োকনের ৫০%, জাইডাস লাইফের ৪৫%, ড. রেড্ডিজের ৪৩%, পিরামল ফার্মার ৪১%, লুপিনের ৩৫%, সান ফার্মার ৩০%, সিপলার ২৮%, আলকেমের ২০%, এবং লরাস ল্যাবসের ১৭% আয় মার্কিন বাজার থেকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই পরিসংখ্যান ভারতের জেনেরিক ওষুধ রপ্তানির জন্য মার্কিন বাজারের গুরুত্ব তুলে ধরে। বর্তমান শুল্ক ছাড় স্বস্তি দিলেও, জেফরিস পরামর্শ দিয়েছে যে, বাণিজ্য পরিস্থিতির পরিবর্তনের দিকে নজর রাখা এবং সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

ভারত-মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতা

সরকার-সমর্থিত বাণিজ্য সংস্থা ফার্মাসিউটিক্যালস এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (ফার্মেক্সিল) জানিয়েছে যে, এই মার্কিন ছাড় দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতাকে আরও উন্নত করবে। ভারতীয় কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জেনেরিক ওষুধ বিক্রি করে না, বরং আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন পরিষেবাও প্রদান করে। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই শিল্পটি ২০৩৫ সালের মধ্যে সাত গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতীয় ফার্মা শেয়ারের উত্থান

ভারতের বেঞ্চমার্ক নিফটি ৫০ সূচক (.NSEI) এদিন ০.২৫% হ্রাস পেলেও, দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল স্টক সূচক (.NIPHARM) ৩%-এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় একদিনের লাফ। বিক্রয়ের দিক থেকে ভারতের শীর্ষ তিন ফার্মা কোম্পানি—সান ফার্মা (SUN.NS), সিপলা (CIPL.NS), এবং ড. রেড্ডিজ (REDY.NS)—এদিন ৩% থেকে ৬% লাভ করেছে। ভারতীয় বাজারের ফার্মাসিউটিক্যাল সূচকটি গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দিনের মধ্যে লাফ দেওয়ার পথে রয়েছে, এবং এর ২০টি উপাদান সবই উচ্চতর ট্রেড করছে।

Advertisements

জাপানের শেয়ারের পারফরম্যান্স

জাপানে বেঞ্চমার্ক নিক্কেই সূচক (.N225) আট মাসের সর্বনিম্নে নেমে গেলেও, টাকেদা (4502.T) এবং দাইচি সানক্যো (4568.T) যথাক্রমে ২% এবং ২.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উত্থান শুল্ক ছাড়ের ফলে জাপানের ফার্মা শিল্পের জন্যও স্বস্তির ইঙ্গিত দেয়।

ভারতীয় ফার্মা শিল্পের গুরুত্ব

ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল রপ্তানি ২৭.৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা প্রায় ২০০টি দেশে পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে জেনেরিক ওষুধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এই ওষুধগুলো মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সতর্কতা

যদিও বর্তমান শুল্ক ছাড় ভারতীয় ফার্মা শিল্পের জন্য স্বস্তি এনেছে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন ভবিষ্যতে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল পর্যালোচনা করতে হবে এবং বিকল্প বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। তবে, ফার্মেক্সিলের মতে, এই ছাড় ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে এবং দুই দেশের স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

মার্কিন পারস্পরিক শুল্ক থেকে ওষুধের ছাড় ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি শুধুমাত্র ভারতীয় কোম্পানিগুলোর রপ্তানি বজায় রাখবে না, বরং মার্কিন গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। তবে, ভবিষ্যৎ নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনা করে শিল্পটিকে সতর্ক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে, ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে এবং তাদের বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে।