ভারতীয়র হাতে সিঙ্গাপুরের কাছে আস্ত দ্বীপ! তৈরি হবে স্কুল

২০২৫ সালের জুলাই মাসে একটি অসাধারণ খবর বিশ্বের প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা সম্প্রদায়কে চমকে দিয়েছে। ভারতীয় উৎপত্তির একজন প্রতিভাশালী উদ্যোক্তা বালাজি শ্রীনিবাসন সিঙ্গাপুরের কাছে একটি ব্যক্তিগত…

Indian-Origin Entrepreneur Balaji Srinivasan Buys Island Near Singapore to Build Network School for Tech Innovators

২০২৫ সালের জুলাই মাসে একটি অসাধারণ খবর বিশ্বের প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা সম্প্রদায়কে চমকে দিয়েছে। ভারতীয় উৎপত্তির একজন প্রতিভাশালী উদ্যোক্তা বালাজি শ্রীনিবাসন সিঙ্গাপুরের কাছে একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ (Singapore Island) কিনে সেখানে একটি অভিনব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। এই প্রকল্পটি নামকরণ করা হয়েছে “দ্য নেটওয়ার্ক স্কুল”। এই দ্বীপটি শুধুমাত্র একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, স্টার্টআপ কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের একটি কেন্দ্র হিসেবে রূপ নিচ্ছে। বালাজি শ্রীনিবাসনের এই উদ্যোগটি তাঁর “নেটওয়ার্ক স্টেট” নামক দূরদর্শী ধারণার একটি বাস্তব রূপ, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক গঠনের একটি নতুন মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী আলোচনা তৈরি করেছে।

বালাজি শ্রীনিবাসনের দূরদৃষ্টি
বালাজি শ্রীনিবাসন একজন সুপরিচিত ভারতীয়-আমেরিকান উদ্যোক্তা, যিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি কয়েকটি প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং কয়েনবেসের সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর অবদান অতুলনীয়। ২০২২ সালে তিনি তাঁর বই “দ্য নেটওয়ার্ক স্টেট” প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি একটি নতুন ধরনের সামাজিক গঠনের কথা বলেছেন। তাঁর ধারণা হলো, ডিজিটাল সম্প্রদায়গুলো অনলাইনে গড়ে উঠে এবং ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে ভৌগোলিক অঞ্চল কিনে নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে। এই ধারণাটি বিশেষ করে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি ব্যাপক অসন্তোষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁর আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের ৭ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই ধরনের নেটওয়ার্ক স্টেটের সাথে যুক্ত হতে পারে।

   

এই দ্বীপটি সেই ধারণার প্রথম বাস্তব রূপ। “দ্য নেটওয়ার্ক স্কুল” একটি বছরব্যাপী রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম হিসেবে শুরু হয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, রিমোট কর্মী এবং ফিটনেস উৎসাহীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালে একটি তিন মাসের পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে শুরু হয়েছিল, যা এখন এক বছরের প্রোগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে।

দ্বীপের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
“দ্য নেটওয়ার্ক স্কুল” একটি আধুনিক শিক্ষা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। এখানে জিমের সুবিধা, সুস্বাস্থ্যকর খাবার, এবং এআই ও ব্লকচেইন নিয়ে কর্মশালা সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত আছে। বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব যেমন ভাইটালিক বুটেরিনের মতো মানুষ এখানে মেন্টরিং করবেন। এই দ্বীপটি সিঙ্গাপুর থেকে কমপক্ষে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত, যা এটিকে একটি সুবিধাজনক অবস্থান করে তুলেছে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই দ্বীপে যাওয়া যায়, এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে একই দিনে পৌঁছানো সম্ভব।

বাসস্থানের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে যে, রুমমেটের সাথে থাকলে মাসিক ভাড়া ১০০০ ডলার এবং একা থাকলে ২০০০ ডলার নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই দ্বীপে শুরুতে ১০০ থেকে ৩০০ জন মানুষকে গ্রহণ করা হবে। তবে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। এছাড়া সপ্তাহান্তে দ্বীপবাসীদের জন্য গ্রুপ আউটিং-এর ব্যবস্থাও থাকবে, যা তাদের বিনোদন ও নেটওয়ার্কিং-এ সাহায্য করবে।

Advertisements

সিঙ্গাপুরের চয়নের কারণ
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন বালাজি শ্রীনিবাসন ভারতের পরিবর্তে সিঙ্গাপুরের কাছে এই প্রকল্প শুরু করলেন? বিশ্লেষকদের মতে, সিঙ্গাপুর একটি প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বে খ্যাত। ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরের প্রতি ব্যক্তি জিডিপি ৮২,৭৯৪ ডলার ছিল (ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক তথ্য অনুযায়ী), যা এটিকে একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এছাড়া, সিঙ্গাপুর ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ প্রদান করে, যা বালাজির “নেটওয়ার্ক স্টেট” ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অপরদিকে, ভারতের ব্যুরোক্রেটিক জটিলতা এবং দুর্নীতির চাপ এই ধরনের উদ্যোগের জন্য বাধা হতে পারত। এই কারণেই বালাজি সিঙ্গাপুরের মতো একটি কার্যকর শাসনব্যবস্থা ও প্রযুক্তি-বান্ধব অঞ্চল বেছে নিয়েছেন।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
“দ্য নেটওয়ার্ক স্কুল” শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতীক। ভবিষ্যতে এই ধরনের দ্বীপগুলো বিভিন্ন শহরে, যেমন দুবাই, টোকিও বা মায়ামি-তে গড়ে উঠতে পারে। এটি একটি স্টার্টআপ জাতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং সম্প্রদায়ের একত্রিত কাজের মাধ্যমে একটি নতুন সমাজ গড়ে উঠবে।

ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এটি গর্বের বিষয়। বালাজি শ্রীনিবাসনের এই উদ্যোগ বিশ্বের মানচিত্রে ভারতীয় প্রতিভার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তিনি শুধু কথা বলেননি, বরং ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছেন। এই প্রকল্পটি ভারতীয় যুবশক্তিকে উৎসাহিত করবে এবং বিশ্বের প্রযুক্তি দৃশ্যে ভারতের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করবে।