গিগ কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বড় ঘোষণা, জানুন আবেদন প্রক্রিয়া

ভারতের শ্রম মন্ত্রক সম্প্রতি গিগ কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ আবেদন অভিযান শুরু করেছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের গিগ অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় এনে…

Indian Government Launches e-Shram Drive for Gig Workers

ভারতের শ্রম মন্ত্রক সম্প্রতি গিগ কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ আবেদন অভিযান শুরু করেছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের গিগ অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় এনে ওই খাতের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা। এই আবেদন কার্যক্রমটি ‘ই-শ্রম পোর্টাল’-এর (e-Shram Portal) মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে, যা শ্রম মন্ত্রক ২০২১ সালের আগস্টে চালু করেছিল।

এই উদ্যোগের আওতায় ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের তাদের আধার নম্বর, প্যান কার্ড এবং আধার-লিঙ্কড মোবাইল নম্বর দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে শ্রমিকরা একটি ইউনিক অ্যাকাউন্ট নম্বর (UAN) পাবেন, যা তাদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে পরিচিতি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

গিগ অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

নীতিআয়োগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ সালে ভারতে গিগ কর্মীর সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৭.৭ মিলিয়ন। এই সংখ্যাটি ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে ২৩.৫ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ব্যাপক বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে, গিগ কর্মীদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষার কাঠামো গঠন এখন সময়ের দাবি।

ই-শ্রম পোর্টাল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

ই-শ্রম পোর্টাল মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের একটি কেন্দ্রীভূত তথ্যভান্ডার গঠনের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়। এর মধ্যে গিগ কর্মী, প্ল্যাটফর্ম কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, গৃহকর্মী ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এই পোর্টালের মাধ্যমে সরকার সহজে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক সুবিধা পৌঁছে দিতে পারবে এবং লক্ষ্যভিত্তিক নীতি প্রণয়ন করতে পারবে।

কারা উপকৃত হবেন এই উদ্যোগ থেকে?

গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীরা, যেমন ডেলিভারি কর্মী, রাইড-হেইলিং ড্রাইভার, ফ্রিল্যান্সার এবং অন্যান্য স্বনির্ভর ঠিকাদারদের ই-শ্রম পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে তারা সরকারি বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আসবেন। এর ফলে তারা চিকিৎসা সুবিধা, দুর্ঘটনাজনিত বীমা, পেনশনসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা পাবেন যা এতদিন তাদের নাগালের বাইরে ছিল।

উপলভ্য সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাসমূহ:

১. স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা:
প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (PM-JAY)-এর মাধ্যমে চিকিৎসার খরচে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া হবে। দরিদ্র ও অসহায় গিগ কর্মীরা এই স্কিমের আওতায় বিনামূল্যে হাসপাতাল সেবা পাবেন।

২. দুর্ঘটনাজনিত বীমা:
কাজের সময় দুর্ঘটনায় আহত হলে বা মৃত্যুবরণ করলে শ্রমিক ও তার পরিবার আর্থিক সহায়তা পাবে।

Advertisements

৩. পেনশন স্কিম:
গিগ কর্মীরা ইচ্ছা করলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্বনির্ভর পেনশন প্রকল্পে যুক্ত হয়ে বার্ধক্যে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারবেন।

আবেদনের যোগ্যতা:

  • বয়স: ১৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • কর্মসংস্থান: গিগ ও প্ল্যাটফর্ম খাতে নিযুক্ত হতে হবে।
  • পরিচয়পত্র: আধার কার্ড থাকতে হবে এবং সেটি মোবাইল নম্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে যাতে সরাসরি সুবিধা প্রেরণ করা যায়।

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি:

  • আধার কার্ড (পরিচয় যাচাইয়ের জন্য)
  • আধার-লিঙ্কড মোবাইল নম্বর (OTP যাচাইয়ের জন্য)
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিবরণ (DBT সুবিধার জন্য)

আবেদন প্রক্রিয়া:

১. ই-শ্রম পোর্টালে প্রবেশ করুন: https://eshram.gov.in এই লিঙ্কে গিয়ে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খুলুন।
২. সেল্ফ-রেজিস্ট্রেশন বেছে নিন: আধার-লিঙ্কড মোবাইল নম্বর প্রবেশ করান এবং OTP যাচাই করুন।
৩. ব্যক্তিগত তথ্য দিন: নাম, ঠিকানা, পেশা, ব্যাংক বিবরণ ইত্যাদি পূরণ করুন।
৪. UAN নম্বর প্রাপ্তি: সফলভাবে তথ্য জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ইউনিক অ্যাকাউন্ট নম্বর (UAN) তৈরি হবে।
৫. লগইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন: যারা ইতিমধ্যেই নিবন্ধন করেছেন, তারা ই-শ্রম পোর্টালে লগইন করে পরবর্তী সুবিধাগুলি দেখতে ও গ্রহণ করতে পারবেন।

এই উদ্যোগের তাৎপর্য:

ভারতের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নীতির আওতার বাইরে থেকে গেছে। গিগ কর্মীদের বেশিরভাগই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী না হওয়ায় তারা বেতনভুক্ত কর্মীদের মতো কোনও নিশ্চয়তা পান না। এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে, ই-শ্রম পোর্টাল গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের জন্য একটি বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। এতে তাদের জীবনে অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব আসবে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

শ্রম মন্ত্রকের এই উদ্যোগ কেবলমাত্র সামাজিক সুরক্ষার দেওয়াল নির্মাণ করছে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারী এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। গিগ অর্থনীতির কর্মীরা যেন দেশের উন্নয়নের পথে পিছিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ।

গিগ কর্মীদের ই-শ্রম পোর্টালে অন্তর্ভুক্তি ভারতের শ্রমনীতি ও সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ সফল হলে গিগ অর্থনীতির বহু শ্রমিক প্রথমবারের মতো সরকারি সাহায্য ও সুরক্ষার সুযোগ পাবেন। সময় এসেছে এই কর্মীদের প্রাপ্য সম্মান ও সুরক্ষা প্রদানের—আর ই-শ্রম পোর্টাল সেই দিশাতেই একটি বড় পদক্ষেপ।