উৎসবের মরসুমে ভারতের ই-কমার্সে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

ভারতের ই-কমার্স (India e-commerce) খাত এ বছর উৎসবের মরসুমে এক ঐতিহাসিক বিক্রির সাক্ষী হতে চলেছে। শীর্ষ কনসালটেন্সি সংস্থা রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টস-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা…

Indian E-Commerce Set For Biggest Festive Season Ever

ভারতের ই-কমার্স (India e-commerce) খাত এ বছর উৎসবের মরসুমে এক ঐতিহাসিক বিক্রির সাক্ষী হতে চলেছে। শীর্ষ কনসালটেন্সি সংস্থা রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টস-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের উৎসব মৌসুমে দেশের ই-কমার্স শিল্পের স্থূল পণ্যমূল্য (GMV) ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ঘটবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর ই-কমার্স শিল্পে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে। গত বছরের প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল এর অর্ধেক, সেখানে এবার উৎসবের কারণে রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২০২৫ সাল শেষ হওয়ার আগে ই-কমার্সে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ১৭ থেকে ২২ শতাংশে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এই নজিরবিহীন উত্থানের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে—
রেপো রেট হ্রাস: ঋণের সুদ কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের হাতে ব্যয় করার সুযোগ বেড়েছে।
করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি: ২০২১ অর্থবর্ষে করমুক্ত আয়ের সীমা যেখানে ছিল ৫ লক্ষ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির হাতে অতিরিক্ত সঞ্চয় তৈরি হয়েছে।

   

গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি: গত চার বছরে গ্রামীণ পরিবারের আয় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। উন্নত কৃষি উৎপাদন এবং মজুরি বৃদ্ধির ফলেই এই প্রবৃদ্ধি।
সংগৃহীত চাহিদা (Pent-up demand): মহামারী ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে গত কয়েক বছর ভোক্তাদের যে খরচ দমিয়ে রাখা হয়েছিল, তা এ বছর বাজারে ঢেলে দেওয়া হবে।

রেডসিয়ারের মতে, ব্যবসায়ীদের এ বছর প্রস্তুত থাকতে হবে দুটি আলাদা বিক্রির শিখরের জন্য। প্রথম ধাক্কা আসবে দুর্গাপুজো, নবরাত্রি, ঈদ ও দীপাবলির সময়। দ্বিতীয় ধাক্কা আসবে দীপাবলির পর, যখন নতুন জিএসটি হার কার্যকর হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিএসটি কাঠামো সরলীকরণের ফলে পণ্য সস্তা হবে এবং গ্রাহকদের আস্থা আরও বাড়বে।

এ বছর সরকারের বড় পদক্ষেপ হতে পারে জিএসটি স্ল্যাব কমিয়ে আনা। আশা করা হচ্ছে, করের হারকে সীমিত করে রাখা হবে দুটি স্তরে— ৫ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ। এর ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীদের কর মেনে চলার প্রবণতা বাড়বে, অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা কম দামে পণ্য পাবেন।

রেডসিয়ার জানিয়েছে, প্রাক-উৎসব সময়ে কুইক কমার্স বা দ্রুত বাণিজ্যে ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ভ্যালু কমার্সে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এই দুটি খাত ক্রেতাদের কেনাকাটার ধারা আমূল বদলে দিচ্ছে। বিশেষ করে ছোট শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলে এদের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে।
ই-কমার্সের এই প্রবৃদ্ধি আর শুধু মহানগর কেন্দ্রিক নয়। বরং টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরগুলিতেই সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ বাড়ছে। উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা, ডিজিটাল পেমেন্ট এবং দ্রুত ডেলিভারির সুবিধা গ্রামীণ ও আধা-শহুরে এলাকায় ভোক্তাদের বড় আকারে বাজারে টেনে আনছে।

Advertisements

কোন খাতে কেমন বৃদ্ধি?
ফ্যাশন, বিউটি এবং হোম ডেকর: এই তিন খাতেই ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।
গ্রোসারি: দ্রুত বাণিজ্যের জোরে মুদি বাজারে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা।
মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স: উৎসবের সময় অফার ও ছাড়ের জেরে বড় ধরনের বিক্রি হবে।

হরাইজন্টাল প্ল্যাটফর্ম: যদিও উল্লম্ব ও বিশেষায়িত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও উৎসব বিক্রির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এখনও হরাইজন্টাল প্ল্যাটফর্ম যেমন ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন বা জিওমার্টের দখলে থাকবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এ বছরের উৎসব মৌসুম ভারতের খুচরা বাজারকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। গ্রামীণ সমৃদ্ধি ও নগর মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা মিলে বাজারে এক দ্বিমুখী চাহিদা তৈরি করছে। জিএসটি কাঠামো সহজ হলে এবং কর কমলে আগামী কয়েক বছর ধরে এই প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রেডসিয়ার সতর্ক করেছে, খুচরা ব্যবসায়ীদের শুধু উৎসবের জন্যই নয়, দীপাবলির পরবর্তী সময়ের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। ভোক্তারা বড় কেনাকাটা কিছুটা পিছিয়ে রাখতে পারেন, যাতে নতুন কর কাঠামোর সুবিধা মেলে। তাই মজুত ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে অফার কৌশল—সব ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের দ্বিমুখী পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।

ভারতের ই-কমার্স শিল্প যে রেকর্ড ভাঙার পথে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রেপো রেট হ্রাস, আয় বৃদ্ধির সুযোগ, কর সুবিধা এবং দ্রুত বাণিজ্যের মতো নতুন প্রবণতা মিলে এ বছর উৎসবের মৌসুমকে দেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা বিক্রির মরসুমে পরিণত করতে চলেছে। ই-কমার্স সংস্থাগুলির জন্য এটি যেমন প্রবৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ, তেমনি ক্রেতাদের জন্যও সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটার এক অনন্য সময়।