২০২৫ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় কলা (ব্যানানা) বিশ্ববাজারে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। ভারত, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত, তার রপ্তানি ব্যবসায় অসাধারণ প্রগতি করেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে রপ্তানি করা কলার মধ্যে ইরাক, ইরান এবং উজবেকিস্তান তিনটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে উঠে এসেছে। ইরাক ভারতীয় কলার সবচেয়ে বড় আমদানিকারী (Indian Banana Export), যেখানে ভারতীয় কলার ৪৬.২২% ভাগ আসে। উজবেকিস্তান ২০.৪০% এবং ইরান ১০.৫৫% কলা আমদানি করে। এই তথ্যগুলো ভারতের বাণিজ্য দফতর থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশের হর্টিকালচার সেক্টরের বৃদ্ধির একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ইরাকের কলা প্রেম
ইরাক ভারতীয় কলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ২০২৫ আর্থিক বছরে ইরাক ভারতীয় কলার মোট রপ্তানির ৪৭% ভাগ নিজের কাছে আকর্ষণ করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১০৮% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে কলার চাহিদা বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারতীয় কলার দাম প্রতিযোগিতামূলক, যা স্থানীয় বাজারে এটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় কৃষকরা উচ্চমানের কলা উৎপাদন করছেন, যা ইরাকের গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই রপ্তানি বৃদ্ধি ভারতের জন্য একটি অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
উজবেকিস্তানে নতুন দাবি
উজবেকিস্তান ভারতীয় কলার দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারী হিসেবে এগিয়ে এসেছে, যেখানে ২০.৪০% কলা রপ্তানি হয়। এই কেন্দ্রীয় এশিয়ার দেশে কলার চাহিদা বাড়ার পেছনে সুপারমার্কেটের বিস্তার এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা রয়েছে। উজবেকিস্তানে ২০২১ সালে কলার আমদানি দ্বিগুণ হয়ে ৫৮.৬ হাজার টন পৌঁছেছে, যা দেশের বাজারে ভারতীয় কলার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া, ভারতীয় কলার সাশ্রয়ী মূল্য এবং সুস্বাদুত্ব উজবেক গ্রাহকদের মধ্যে এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই বাজারে ভারতের প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে আরও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
ইরানের বাজারে স্থিতিশীলতা
ইরান ভারতীয় কলার ১০.৫৫% আমদানি করে, যা মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ইরানে কলার চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে, কারণ এই ফলটি সেখানকার খাদ্যশৃঙ্খলায় একটি জনপ্রিয় উপাদান। ভারতীয় কলা ইরানের বাজারে এর সাশ্রয়ী মূল্য এবং পুষ্টিকর গুণাগুণের জন্য গ্রহণযোগ্য। তবে, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য ভারতকে লজিস্টিকস এবং সরবরাহ শৃঙ্খলা উন্নত করতে হবে, যা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
ভারতের কলা রপ্তানির বিস্তার
ভারতীয় কলা রপ্তানি ২০২৫ আর্থিক বছরে ২৯.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৮ সাল থেকে সাতগুণ বৃদ্ধির পরিচয় দেয়। এই বৃদ্ধির পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের চাহিদা এবং ভারতীয় কলার কম দাম প্রধান কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে কলা রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য রেখেছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন সমুদ্রীয় প্রটোকল চালু হয়েছে, যা ২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডে একটি সফল পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। এই পরিবর্তনটি বিমানপথে রপ্তানির ঐতিহ্যভিত্তিক মডেলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ভারত বিশ্বের ৩০% কলা উৎপাদন করলেও এর রপ্তানি শেয়ার ২০২২ সালে মাত্র ১.২% ছিল, যা উচ্চ স্থানীয় চাহিদা এবং ফলের দ্রুত ক্ষয়শীলতার কারণে ঘটেছে। তবে, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ভালো গুণাগুণের নিশ্চিতকরণ এবং বাজার বিস্তারের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারে। ভারতীয় কলা বাজারে ২৫,০০০-এর বেশি কৃষক এবং ৫০,০০০ সরবরাহ শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবিকা নির্ভর করছে, যা এই খাতকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
ভারতীয় কলার ইরাক, ইরান এবং উজবেকিস্তানে বৃদ্ধ চাহিদা দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি আশাপ্রদ ভবিষ্যৎ নির্দেশ করছে। সঠিক নীতি, প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। কলা শুধু একটি ফল নয়, এটি ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।