আগস্ট ২০২৫-এ ভারতে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতি (Wholesale Inflation) ফের ইতিবাচক হয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (UBI)-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে যেখানে পাইকারি মূল্যসূচক (WPI) -০.৫৮ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছিল, আগস্টে তা বেড়ে ০.৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই উত্থানকে বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলা হচ্ছে।
WPI নিম্নমুখী অবস্থায় পৌঁছালেও ঘুরে দাঁড়ায়
প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই মাসে WPI সাম্প্রতিক নিম্নমুখী অবস্থায় পৌঁছালেও আগস্টে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি এবং কোর বা মূল খাতের দামে সর্বত্র বৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, গত বছরের উচ্চ ভিত্তির প্রভাবও (high base effect) এবার অনেকটাই ম্লান হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে যেখানে WPI ছিল ১.২৫ শতাংশ, সেখানে জুলাই ২০২৪-এ ছিল ২.১০ শতাংশ। ফলে তুলনামূলকভাবে এই বছরের আগস্টে বৃদ্ধির হার ইতিবাচক পথে ফিরেছে।
UBI-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আমাদের অনুমান অনুযায়ী আগস্ট ২০২৫-এ পাইকারি মূল্যসূচক ইতিবাচক হয়েছে, যা জুলাইয়ের -০.৫৮ শতাংশ নিম্নস্তরের পর একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন।”
খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি গত দুই মাস ধরে ঋণাত্মক অঞ্চলে ছিল। জুলাই মাসে এটি নেমেছিল -২.১৪ শতাংশে। কিন্তু আগস্টে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ায় এবং খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ০.২১ শতাংশে, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, খাদ্যের প্রায় সবকটি উপখাতেই ধারাবাহিকভাবে দাম বেড়েছে, ফলে বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।
মূল খাতের দামও গতিশীল India wholesale inflation
কোর মুদ্রাস্ফীতি বা মূল খাতের দামও আগস্টে গতিশীল হয়েছে। জুলাই মাসে যেখানে তা ছিল ১.২০ শতাংশ, আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৬৯ শতাংশে। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে মুদ্রাস্ফীতি এখনও ঋণাত্মক থাকলেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জুলাই মাসের -৩.৮৪ শতাংশ থেকে আগস্টে তা দাঁড়িয়েছে -৩.৫৩ শতাংশে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ নয়, বহিরাগত কারণও আগামী মাসগুলিতে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি প্রভাবিত করবে। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কনীতি এবং ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন এই অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হতে পারে। ফলে ভারতের আমদানি ও রপ্তানি উভয়ের ক্ষেত্রেই চাপ বাড়তে পারে।
দেশীয় স্তরে, আবহাওয়া জনিত সমস্যার পাশাপাশি সরবরাহ শৃঙ্খলের (supply chain) ব্যাঘাতও নিকট ভবিষ্যতে WPI-র উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত খরিফ ফসলের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যাহত হলে খাদ্যদ্রব্যের দামে নতুন করে চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিবাচক দিকও রয়েছে
তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া জিএসটি সংস্কার পাইকারি মুদ্রাস্ফীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI)-তে কমপক্ষে ৬০ বেসিস পয়েন্টের প্রভাব পড়তে পারে, যেখানে মোট প্রভাব ধরা হয়েছে প্রায় ১৩০ বেসিস পয়েন্ট। এর আংশিক প্রভাব বাজারে ইতিবাচক সাড়া আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির এই ইতিবাচক পরিবর্তন অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের একটি ইঙ্গিত হলেও ঝুঁকি এখনও থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা ও দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ সমস্যার কারণে মূল্যস্ফীতি আবার চাপে পড়তে পারে।
ফলে বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক মাসে নীতি নির্ধারকদের সতর্কভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, অন্যদিকে প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল রাখার চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।
Business: India’s wholesale inflation turned positive in August 2025, reaching 0.45%, according to a UBI report. This reversal from July’s -0.58% is driven by rising prices in food, fuel, and core sectors, signaling a major economic shift.