গম উৎপাদনে অবাক করা অবস্থান ভারতের

নতুন স্ট্যাটিস্টিকসের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ভারতের গম উৎপাদনে (India Wheat Production) একটি অসাধারণ অবদান। ২০২৩ সালে ভারত ১১০.৬ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন করে বিশ্ব উৎপাদনে…

India Wheat Production Hits Remarkable 110.6 Million Tons, Securing Global Top 4 Spot

নতুন স্ট্যাটিস্টিকসের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ভারতের গম উৎপাদনে (India Wheat Production) একটি অসাধারণ অবদান। ২০২৩ সালে ভারত ১১০.৬ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন করে বিশ্ব উৎপাদনে ১৪ শতাংশ অবদান রাখে, যা এই দেশকে গম উৎপাদনের শীর্ষ চারটি দেশের তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারত এই ক্ষেত্রে চীন (১৩৬.৬ মিলিয়ন টন), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (১৩৩.৭ মিলিয়ন টন) এবং রাশিয়া (৯২.৮ মিলিয়ন টন) এর পরে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এই অঙ্ক যদিও বিস্ময়কর, তবুও ভারতের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয় হলেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকার কথা মাথায় রাখতে হবে।

ভারতের কৃষি অঞ্চল সীমিত এবং বার্ষিক মনসূনের উপর নির্ভরশীলতা এই উৎপাদনের পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ২০২৩ সালের মনসূন মৌসুমে প্রথম দুই সপ্তাহে ৫২.৬% কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকদের জন্য উদ্বেগ ছিল, তবে জুলাই মাসের শেষের দিকে ৬% অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত খরিফ ফসলের চাষে সাহায্য করেছে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনসূনের অস্থিরতা এবং এল নিনোর প্রভাব ভবিষ্যতে গম উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ভারতীয় কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার এই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় সাহায্য করছে।

   

চীনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ভারতের তুলনায় চীনের উর্বর জমি কম হলেও তারা উচ্চ প্রযুক্তি এবং নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে গম উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে। ১৯৭৮ সালের পর চীনের কৃষি নীতিগুলো এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি তাদের এই সাফল্যের পেছনে কারণ। অন্যদিকে, ভারতের ক্ষেত্রে গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি চালু রয়েছে, যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ভারত সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (আইসিএআর), নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের গম বিকাশে কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে।

ভারতের গম উৎপাদনের এই সাফল্যে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের কৃষকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই অঞ্চলগুলো গ্রিন রিভলিউশনের ফলে উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষে সফল হয়েছে। তবে জলের অভাব এবং মাটির উর্বরতা হ্রাস পাওয়া একটি বড় চিন্তার বিষয়। ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহার মাটির গুণমান নষ্ট করছে, যা দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এই প্রেক্ষাপটে, টিকাউ কৃষি পদ্ধতি এবং জৈব কৃষির প্রচার জরুরি হয়ে উঠেছে।

Advertisements

বিশ্বে গম উৎপাদনের মোট পরিমাণ ৭৯২.১ মিলিয়ন টন হওয়ায় ভারতের অবদান উল্লেখযোগ্য। তবে এই পরিসংখ্যানে কিছু ভিন্নতা দেখা দিয়েছে, যেমন স্ট্যাটিস্টার ২০২৩/২৪ সালের আকড়ে ৭৮৫ মিলিয়ন টন উল্লেখ করা হয়েছে। এই পার্থক্য হতে পারে বিভিন্ন সূত্রের তথ্য সংগ্রহের সময় ভিন্নতার কারণে। তবে এই তথ্যগুলো ভারতের কৃষি খাতে প্রগতির একটি পরিচয় দেয়।

কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে গড় কৃষকদের কষ্টও লুকিয়ে আছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির অভাব, সঠিক বাজার সুবিধা এবং সরকারি সহায়তার অপর্যাপ্ততা তাদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। সরকারের পক্ষে গবেষণা ও উন্নয়ন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা বাড়ানো জরুরি। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় গমের চাহিদা বাড়লে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং মনসূনের অস্থিরতা ভারতের গম উৎপাদনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি নীতির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। ভারতের গম উৎপাদনে এই অবাক করা অবস্থান ধরে রাখতে হলে টেকনোলজি, শিক্ষা এবং টিকাউ কৃষি পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া উচিত। এই উদ্যোগগুলো সফল হলে ভারত শুধুমাত্র গম উৎপাদনে নয়, বিশ্ব কৃষি খাতে একটি নেতৃত্বদায়ী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে।