India-US Trade: ভারত তার বাণিজ্য নীতিতে একটি স্পষ্ট এবং দৃঢ় ভঙ্গি গ্রহণ করেছে। বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের (Piyush Goyal) সাম্প্রতিক বক্তব্যে এই বার্তাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি সই করা হবে না যদি তা উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে লাভজনক না হয়। গতকাল শনিবার, ৫ জুলাই, ভারতীয় প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর (Indian Tech & Infra) একটি পোস্টে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে মন্ত্রী গোয়েল বলেন, “ভারত শুধুমাত্র তখনই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে যাবে যদি তা দুই দেশের জন্য সুষম এবং জয়-জয়কার ফলাফল নিশ্চিত করে।” এই বক্তব্যটি ভারতের আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার ইচ্ছাকে প্রকাশ করছে, যা বিশ্বে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর একটি চেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি ও সন্দেহের ছায়া
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সবসময়ই একটি জটিল ইতিহাসের মধ্যে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের পক্ষে সামরিক সহায়তা প্রদানের ঘটনা এখনো ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে রেখেছে। আন্তর্জাতিক ইতিহাসের দলিলপত্র অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়ে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা করে ভারতের বিরুদ্ধে একটি ভূ-রাজনৈতিক স্ট্যান্ড নিয়েছিল। এই ঘটনা ভারতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি স্বাভাবিক সংশয় সৃষ্টি করেছে, যা আজও বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় প্রভাব ফেলছে। এই পটভূমিতে, পীযূষ গোয়েলের বক্তব্যটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রশ্ন নয়, বরং ভারতের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার একটি প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।
বর্তমান বাণিজ্য পরিস্থিতি
বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের মান ২০২৪ সালে প্রায় ১২৯.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংযোগের ইঙ্গিত দেয়। তবে, এই সম্পর্কটি সময়ে সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৮ সালে ভারতীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত ২৫% ও ১০% শুল্কের মতো পদক্ষেপে। ভারত এর প্রতিউত্তরে প্রতিশোধী শুল্ক আরোপ করেছিল, যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) এর তথ্য অনুযায়ী একটি বড় বিতর্কের মূল হয়ে ওঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (Bilateral Trade Agreement) নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, যা ২০২৫ সালের শরৎকালে সমাপ্ত হতে পারে। তবে, ভারত জোর দেয় যে এই চুক্তিটি একপক্ষীয় লাভের মাধ্যম হবে না; বরং উভয় দেশের জন্য সমানভাবে উপকারী হতে হবে।
ভারতের দৃঢ় ভঙ্গি: একটি নতুন যুগের শুরু
পীযূষ গোয়েলের বক্তব্যের পরে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এই সিদ্ধান্তকে ভারতের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করছেন। একজন ব্যবহারকারী (Ankur Pandey) বলেন, “ভারত আর নীরব অংশগ্রহণকারী নয়—এটি এখন একটি শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী আলোচনাকারী।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন, যেমন @Pora_Babu বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ভারতকে পছন্দ করেনি এবং পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে সমর্থন করেছিল।” এই মতামতগুলো ভারতের জনগণের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণাকে প্রকাশ করে, যা হলো—ভারত আর পূর্বে যেভাবে পশ্চিমা শর্তে চুক্তি সই করত, সেদিন আর ফিরে আসবে না।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
তবে, এই দৃঢ় ভঙ্গির সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, ভারতের বর্তমান বাণিজ্য ভারসাম্য (trade balance) ২০২২ সালে -১১৯.৫৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বৈদেশিক ঋণ ও আমদানি নির্ভরতার ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঠিন আলোচনা চালানো কঠিন হতে পারে। তবে, ভারতের পক্ষে এই চুক্তিটি একটি সুযোগ হিসেবেও দেখা যাচ্ছে, যেখানে দেশটি নিজের উৎপাদন ক্ষমতা এবং প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে পারে।
ভারতের এই নতুন বাণিজ্য নীতি একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। পীযূষ গোয়েলের নেতৃত্বে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান মানের আলোচনা চালাতে প্রস্তুত, যা দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও গ্রহণযোগ্যতার একটি প্রমাণ। যদিও এই পথে অনেক বাধা থাকতে পারে, তবুও ভারতীয় জনগণ এই সিদ্ধান্তকে একটি গর্বের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করছে। ভবিষ্যতে এই চুক্তি কী আকার নেবে, তা নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক দক্ষতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর।