ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যিক লেনদেন জানলে অবাক হবেন

আজকের বিশ্বে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দুটি দেশের মধ্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ভারত ও আমেরিকার মধ্যকার ( India-US Trade) সম্পর্ক থেকে স্পষ্ট। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারত ২০২৫…

India US Trade: India $41.18 Billion Trade Surplus with US in FY25 Stuns, Boosted by Pharmaceuticals, Engineering, and Textiles

আজকের বিশ্বে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দুটি দেশের মধ্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ভারত ও আমেরিকার মধ্যকার ( India-US Trade) সম্পর্ক থেকে স্পষ্ট। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারত ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের আর্থিক বছরে (FY25) আমেরিকার সঙ্গে একটি রেকর্ড ত্রাণ বা বাণিজ্যিক অতিরিক্ততা অর্জন করেছে, যা প্রায় ৪১.১৮ বিলিয়ন ডলার। এই বিস্ময়কর সংখ্যাটি জানলে অনেকেই অবাক হতে পারেন, কারণ এটি ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্যে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। আসুন, এই বিষয়টির বিস্তারিত জানি।

ভারতের রেকর্ড রপ্তানি ও আমদানি
ভারতের আমেরিকার সঙ্গে রপ্তানি ৮৬.৫১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১১.৬% বৃদ্ধি দেখিয়েছে। অন্যদিকে, আমদানি ৪৫.৩৩ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে, যা মাত্র ৭.৪% বেড়েছে। ফলে, এই বৃহৎ পার্থক্যটি ভারতের জন্য একটি বড় বাণিজ্যিক সুবিধা সৃষ্টি করেছে। এই রপ্তানির পেছনে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল শিল্পের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত বিশ্বের বড় সরবরাহ শৃঙ্খলায় (global supply chains) তার অবদান বাড়িয়ে নিচ্ছে, যা এই সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ভারতকে বিশ্বের “ফার্মেসি” হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়, কারণ এখান থেকে সস্তা ও গুণগত মানের ওষুধ বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়।

   

আমেরিকার প্রতিক্রিয়া: শুল্কবৃদ্ধি ও চাপ
এই বাণিজ্যিক অতিরিক্ততা আমেরিকার কাছে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসন এপ্রিল ২০২৫-এ ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি বাণিজ্য সামঞ্জস্য (trade balance) রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে, যা আমেরিকার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির অংশ। তবে, মে ২০২৫-এ আমেরিকার একটি ফেডারেল আদালত এই শুল্ক আরোপকে অস্থায়ীভাবে বাতিল করে দিয়েছে, যা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এই অস্থিরতা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি ও বর্তমান সম্পর্ক
ভারত ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্কের ইতিহাসে উত্থান-পতন দেখা গেছে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পঞ্চম নভেম্বর পরীক্ষার পর আমেরিকা দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা (sanctions) এই সম্পর্কে একটি গভীর আঘাত হয়েছিল। তবে, ২০০৫ সালে নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ (NSSP) চুক্তির মাধ্যমে এই সম্পর্ক নতুন দিকে এগিয়েছে। বর্তমানে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে আলোচনা চলছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারে। তবে, এই বাণিজ্য অতিরিক্ততা যদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি করে, তবে সর্বোচ্চ স্তরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন হবে।

Advertisements

রাশিয়া থেকে ক্রয়ে শুল্ক ও জরিমানা
সম্প্রতি, ট্রাম্পের একটি বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত রাশিয়া থেকে শক্তি ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২৫% শুল্ক ও জরিমানা দিতে বাধ্য হতে পারে। এই বিষয়টি ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। ভারত তার জরুরি শক্তি চাহিদা মেটাতে রাশিয়া থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে, যা আন্তর্জাতিক সঙ্কটে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে জোরদার করেছে। তবে, এই ক্রয় আমেরিকার নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে, যা বাণিজ্য চুক্তিতে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভারতের জন্য এই বাণিজ্যিক সফলতা গর্বের বিষয়, তবে এর সঙ্গে জড়িত চ্যালেঞ্জগুলোও উপেক্ষা করা যায় না। আমেরিকার শুল্ক নীতি ও রাশিয়া সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের বাণিজ্যিক কৌশল পুনর্মূল্যায়নের দাবি করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি যদি সফল হয়, তবে এটি উভয় দেশের জন্য উপকারী হতে পারে। ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে নিজের শিল্পকে আরও বৈচিত্র্যময় করা এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষা করা।

সুতরাং, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যিক লেনদেন একটি জটিল এবং গতিশীল সম্পর্কের পরিচয় দেয়। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ে উঠবে, তা নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর। ভারতের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে, যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়।