নয়াদিল্লি: দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার পথে ভারত এবং আমেরিকা৷ যা কার্যকর হলে আমেরিকার ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক বর্তমান ৫০ শতাংশ থেকে কমে ১৫–১৬ শতাংশের মধ্যে আসবে। Mint-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চুক্তি মূলত শক্তি ও কৃষি খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে।
সূত্র জানিয়েছে, আলোচনাগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং দুই দেশ চেষ্টা করছে চুক্তিটি এই মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত আসন্ন এসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের (ASEAN Summit) আগে সম্পন্ন করতে। সম্মেলনেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি ঘোষণা করা হতে পারে।
শক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে সমন্বয়
প্রস্তাবিত চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারত ধীরে ধীরে রাশিয়ার কাঁচা তেলের আমদানি হ্রাস করবে, যা বৈশ্বিক রাশিয়ার শক্তি নির্ভরতা কমানোর মার্কিন প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই সঙ্গে চুক্তিতে ভারত কিছু নির্দিষ্ট আমেরিকান কৃষি পণ্যের আমদানি বাড়াতে পারে, যেমন নন-জেনেটিক্যালি মডিফায়েড কর্ন এবং সোয়ামিল। এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিনের মার্কিন উদ্বেগ দূর করবে, যেটি ভারতের কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
Mint-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চুক্তিতে নিয়মিত শুল্ক ও বাজার প্রবেশাধিকারের পর্যালোচনার ব্যবস্থা থাকবে, যা উভয়পক্ষকে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্য শর্ত বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
ভারতীয় রফতানি ও আমেরিকার সুবিধা India US Trade Deal
চুক্তি বাস্তবায়িত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেবে। বিশেষ করে বস্ত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের ভারতীয় পণ্য মার্কিন বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। এর পাশাপাশি আমেরিকার কোম্পানিগুলিও ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে।
নেতৃবৃন্দের আলোচনার পটভূমি
চুক্তির অগ্রগতি আসে এমন সময় যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাণিজ্য ও শক্তি সহযোগিতা। তিনি বলেন, “শক্তি খাতের বিষয়ও আলোচনার অংশ ছিল, এবং মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত রাশিয়ার তেলের আমদানি সীমিত করবে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদি X (সাবেক Twitter)-এ লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনার ফোন কল এবং দীপাবলির উষ্ণ শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ। এই আলোর উৎসবে আমাদের দুই মহান গণতন্ত্র আশা ও ঐক্যের আলো বিশ্বে ছড়াতে থাকবে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াবে।” যদিও মোদি বাণিজ্য আলোচনার বিস্তারিত উল্লেখ করেননি, তার বার্তা থেকে বোঝা যায় যে উভয় পক্ষ চুক্তির আগে সম্পর্ক জোরদার করতে কাজ করছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নতুন অধ্যায়
যদি চুক্তি চূড়ান্ত হয়, তবে এটি ২০২০ সালের পর সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে গণ্য হবে, যখন শুল্ক বিরোধের কারণে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা আটকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে $200 বিলিয়ন অতিক্রম করেছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক হ্রাস ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও কৃষি খাতে। অন্যদিকে, রাশিয়ার তেল আমদানি হ্রাস সংক্রান্ত শর্ত ভারতের শক্তি নিরাপত্তা ও জিওপলিটিক্যাল ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
সূত্রের খবর, দুই দেশ আশা করছে আসন্ন ASEAN শীর্ষ সম্মেলনের আগে চুক্তি চূড়ান্ত হবে, যা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।