ভারত-আমেরিকা মিনি চুক্তির সম্ভাব্য ঘোষণা আজ, জানাল সরকার

ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের (India US trade ) মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ, অর্থাৎ একটি “মিনি ট্রেড ডিল”, সম্ভবত মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা হতে চলেছে।…

India US 'Mini Trade Deal' Likely To Be Announced Today

ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের (India US trade ) মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ, অর্থাৎ একটি “মিনি ট্রেড ডিল”, সম্ভবত মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা হতে চলেছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ক্ষুদ্র চুক্তি ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান করবে এবং এর মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিস্তার ঘটানো, বিশেষ করে যখন বিশ্ব অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নিয়ে আরও আলোচনা চলবে এবং তা বছরের শেষের দিকে সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

   

ভারতের অগ্রাধিকার: জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা:
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার হলো দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। তিনি বলেন, “যে কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আমরা যেকোনো দেশের সঙ্গে করি না কেন, তা হবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের স্বার্থ এবং ভারতের প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

মন্ত্রী আরও বলেন, “আজ সারা বিশ্ব ভারতের দিকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত আস্থা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ভারত এবং ভারতীয়রা সৎভাবে ব্যবসা করে—এটি আন্তর্জাতিক পরিসরে এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই কারণেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী।”

ট্রাম্পের মন্তব্য: ভারতের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে:
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নৈশভোজের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি করেছি, চীনের সঙ্গেও চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে… আমরা ভারতের সঙ্গেও খুব কাছে চলে এসেছি। কিছু দেশের সঙ্গে আমরা কোনো চুক্তি করতে পারবো না বলেই চিঠি পাঠাচ্ছি। তাদের জানিয়ে দিচ্ছি, যদি খেলতে চাও, তাহলে এই শর্ত মানতে হবে।”

বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক:
ট্রাম্প প্রশাসন সোমবারই প্রথম ধাপের কিছু “চিঠি” পাঠিয়েছে। এই চিঠিগুলিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে জানানো হয়েছে যে, তাদের পণ্য আমেরিকায় ঢুকতে কত হারে শুল্ক দিতে হবে।

যেসব দেশকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে, সেগুলো হলো বাংলাদেশ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কাজাখস্তান, লাওস, মালয়েশিয়া, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং তিউনিসিয়া।

Advertisements

ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠাচ্ছি, তাদের বলছি কত শুল্ক দিতে হবে। এই দেশগুলো আমেরিকাকে শোষণ করেছে এবং আগে এমনভাবে শুল্ক ধার্য করেছিল যা আগে কখনও দেখা যায়নি। কিছু দেশ ২০০% পর্যন্ত শুল্ক নিচ্ছিল, যা ব্যবসা করা একপ্রকার অসম্ভব করে তুলেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “এই শুল্কের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আমেরিকায় আসতে বাধ্য হচ্ছে, আমেরিকায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে আমাদের দেশীয় শিল্প শক্তিশালী হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।”

ভারতের জন্য তাৎপর্য:
এই চুক্তির ফলে ভারতের কৃষি, বস্ত্র, ফার্মা, প্রযুক্তি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের জন্য বড় বাজারের সুযোগ তৈরি হবে। ভারতীয় রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য সহজে এবং কম শুল্কে পাঠাতে পারবে, যা রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিনি চুক্তি মূলত আস্থা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতীক। এটি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করবে। তবে ভারতের পক্ষে সাবধানতা অবলম্বন করে অগ্রসর হওয়া দরকার, কারণ যুক্তরাষ্ট্র আগেও বিভিন্ন দেশে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেছে।

ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে কৃষক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, এবং অন্যান্য প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে শর্তাবলী নিয়ে দরকষাকষি চলবে।

মোটের উপর, এই মিনি ট্রেড ডিল ভারত-আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটি ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশবাসীর আশা, এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রবাহ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।