বাংলাদেশের বয়কটের পরেও বিদেশি পর্যটকের রেকর্ড গড়ল ভারত

India tourism growth: ২০২৪ সালের গোড়াতেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল এক বিতর্কিত রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন—”বয়কট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট”। দেশটির কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী ভারতের বিরুদ্ধে…

India tourism

India tourism growth: ২০২৪ সালের গোড়াতেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল এক বিতর্কিত রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন—”বয়কট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট”। দেশটির কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী ভারতের বিরুদ্ধে একযোগে সরব হয়। ভারতের পণ্য বয়কট, চিকিৎসা বয়কট, এমনকি ভারতের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার মতো প্রচার চালানো হয়। এই আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই গভীর হয় যে, সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। গঠিত হয় একটি নতুন তদারকি সরকার।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত পর্যটকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা ও ব্যবসার কারণে একটি বড় অংশ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে ভারতের তরফে ভিসা প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আনা হয়। ফলত, বাংলাদেশিদের ভারতে আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তখন বাংলাদেশি নেটমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে দাবি ওঠে, ভারতীয় পর্যটন খাতে নাকি তার প্রবল প্রভাব পড়বে। বলা হয়, ভারতের হাসপাতাল, হোটেল, পর্যটন সংস্থা সব বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

   

কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন ছবি দেখিয়েছে। ভারতের পর্যটন খাত বরং আগের তুলনায় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে বিদেশি পর্যটকদের আগমন হয়েছে রেকর্ড ৯.৬৬ মিলিয়ন— অর্থাৎ প্রায় ৯৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক এসেছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ₹২.৭ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি (২০২৩ সালে তা ছিল ₹২.৩১ লক্ষ কোটি টাকা)।

এই পরিসংখ্যান একদিকে যেমন বাংলাদেশি নেতিবাচক প্রচারের জবাব, অন্যদিকে তেমনই ভারতের পর্যটন পরিকাঠামোর প্রতি বিশ্বের আস্থার প্রতিফলন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের পর্যটন খাতে এই বিপুল সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা নিয়েছে সরকারের একাধিক উদ্যোগ। ভারতের আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে যেমন ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে, তেমনই পরিকাঠামো উন্নয়ন, ই-ট্যুরিস্ট ভিসা সহজীকরণ, বিমান ও রেল সংযোগ বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপও বড় প্রভাব ফেলেছে।

Advertisements

২০২৫ সালে মহাকুম্ভের মতো বিশ্বমানের ধর্মীয় উৎসব ভারতে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কয়েক লক্ষ বিদেশি পর্যটকের আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে ভারত নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই হিমালয়, কাশ্মীর, বারাণসী, অযোধ্যা, কেরালা, গোয়া, আন্দামানসহ একাধিক পর্যটন কেন্দ্রে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে অনেকগুণ।

বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাব ভারতে অবশ্যই একটা শূন্যতা তৈরি করেছে, বিশেষত চিকিৎসা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত খাতে। তবে সেই শূন্যস্থান দ্রুত পূরণ করেছে অন্যান্য দেশ— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি।

বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে ভারতবিরোধী অবস্থান নেওয়া হলেও ভারতের পর্যটন খাতকে তার কোনও স্থায়ী ক্ষতি করতে পারেনি। বরং বৈচিত্র্যে ভরা ভারতের সংস্কৃতি, উন্নত পরিকাঠামো এবং বিশ্বজনীন স্বাগত-সংস্কৃতি আজ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

সব মিলিয়ে, বলা যায়— “বয়কট ইন্ডিয়া” স্লোগান যতটা গর্জেছে, ভারতের পর্যটন খাত ততটাই বজ্রের মতো জবাব দিয়েছে। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান সেই সত্যকেই আরও জোরালো করে তুলে ধরেছে। ২০২৫ সালে এই সাফল্যের ধারা আরও উচ্চতায় পৌঁছবে বলেই আশা করছে ভারত সরকার ও পর্যটন শিল্প।