আজকের দিনে ভারতের সড়ক গোছের উন্নয়নে একটি বিশাল পরিবর্তন এসেছে। এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় হাইওয়ে থেকে টোল আদায়ের (India Toll Collection) পরিমাণও অবাক করার মতো বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছর (২০২৪-২৫) এ জাতীয় হাইওয়েগুলো থেকে টোল আদায়ের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে ৬১,৪০০ কোটি টাকার বেশি, যা প্রতিদিন গড়ে ১৬৮.২৪ কোটি টাকা হয়ে দাঁড়ায়। এই অঙ্কটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫% বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যখন ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে এই পরিমাণ ছিল ৫৩,০০০ কোটি টাকা। এই বিস্ময়কর বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে সরকারের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ফাস্ট্যাগ (FASTag) এর বিস্তৃত ব্যবহার এবং জাতীয় হাইওয়ে নেটওয়ার্কের প্রসার। কিন্তু এই টোল আদায়ের বৃদ্ধি সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে—এই বিশাল অর্থ কোথায় যাচ্ছে এবং সড়কের গুণগত উন্নয়নে কতটা প্রভাব ফেলছে?
ফাস্ট্যাগের ভূমিকা
ফাস্ট্যাগ একটি ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহ পদ্ধতি, যা ২০১৪ সালে প্রথম চালু হয়েছিল। এই সিস্টেমটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) প্রযুক্তি ব্যবহার করে টোল প্লাজায় অটোমেটিক পেমেন্ট সম্ভব করে। ২০১৯ সাল থেকে ফাস্ট্যাগকে জাতীয় হাইওয়েগুলোতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এবং এর ফলে টোল সংগ্রহের দক্ষতা ৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৩ সালে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (NHAI) এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এই ডিজিটালকরণের মাধ্যমে ট্রাফিক জ্যাম কমেছে এবং রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। তবে, এই সিস্টেমের সঙ্গে নতুন নিয়মও চালু হয়েছে, যেমন ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে কম ব্যালেন্স বা ব্ল্যাকলিস্টেড ফাস্ট্যাগের জন্য দ্বিগুণ টোল চার্জ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি যদিও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে, তবুও এটি গাড়ি মালিকদের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করছে।
সড়ক উন্নয়নের জন্য অর্থ বিনিয়োগ
সরকারের দাবি হলো, এই টোল আদায়ের অর্থ সড়ক নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রী নীতিন গড়করী গত মার্চ ২০২৫ সালে জানিয়েছেন যে, ভারতের সড়ক জাল আগামী দুই বছরে আমেরিকার তুলনায় উন্নত হবে। তিনি এছাড়াও একটি নতুন টোল নীতি চালু করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন, যেখানে বার্ষিক পাস সিস্টেম চালু হবে, যার মাধ্যমে গাড়ি মালিকরা ৩,০০০ টাকা দিয়ে সমস্ত জাতীয় হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ে অপরিমিত ভ্রমণ করতে পারবেন। এই পদক্ষেপটি জনগণের টোল চার্জ নিয়ে অভিযোগ কমাতে ডিজাইন করা হয়েছে। তবে, বাস্তবে সড়কের অবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ কমছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীরা জানাচ্ছেন যে, টোল আদায় বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সড়কের গুণগত মান ক্রমশ পড়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের একটি ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, টোল রাজস্বের মাত্র ৬০% রক্ষণাবেক্ষণে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বাকি অংশ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
টোল আদায়ের বৃদ্ধি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এই বৃদ্ধিকে অর্থনৈতিক প্রগতির লক্ষণ হিসেবে দেখছেন, কারণ এটি রাস্তার ব্যবহার এবং পরিবহন সংযোগের বৃদ্ধি নির্দেশ করে। অন্যদিকে, অনেকে এটিকে “করের অতিরিক্ত বোঝা” হিসেবে অভিহিত করছেন। বাংলা ভাষী ব্যবহারকারীরা লিখছেন, “এত টোল নিচ্ছেন, কিন্তু সড়কগুলোর অবস্থা দেখলে মনে হয় কোনো উন্নয়নই হয়নি।” এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে সরকারের দায়িত্ব—টোল আদায়ের অর্থ যেন সঠিকভাবে সড়ক উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
নীতিন গড়করী জানিয়েছেন যে, আগামী দিনে ফিজিক্যাল টোল বুথগুলো সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলা হবে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল সংগ্রহ বাড়বে। এই পরিবর্তনটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব আদায়ে আরও উন্নতি আনতে পারে। তবে, এই পরিকল্পনার সঙ্গে জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়া জরুরি, যাতে তাদের মনে না হয় এটি শুধুমাত্র অর্থ সংগ্রহের একটি মাধ্যম।
সুতরাং, ৬১,৪০০ কোটি টাকার টোল আদায় জনগণের কাছে একটি বিস্ময়কর তথ্য হলেও, এর সঠিক ব্যবহার এবং সড়কের গুণগত উন্নয়নই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। সরকারের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে যে, এই অর্থটি জাতীয় সড়ক জালের উন্নতির জন্য কার্যকরভাবে ব্যবহার করে মানুষের আস্থা ফিরে পায়।