ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগেই ভারতের প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ছে, জানাল ফিচ

ভারত বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও তার প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিংসের (Fitch Ratings) সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ইকোনমিক আউটলুক’ রিপোর্ট…

India Retail Inflation

ভারত বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও তার প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিংসের (Fitch Ratings) সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ইকোনমিক আউটলুক’ রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী তিন বছরে ভারতের অর্থনীতি বার্ষিক ৬ শতাংশের ওপরে বৃদ্ধি বজায় রাখবে। চলতি অর্থবছরেই (এপ্রিল ২০২৫ – মার্চ ২০২৬) দেশের প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা গত জুনে প্রকাশিত অনুমান (৬.৫ শতাংশ) থেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

২০২৫ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের অর্থনীতি ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই শক্তিশালী ফলাফলের ভিত্তিতেই ফিচ পূর্বাভাস সংশোধন করে বর্তমান অর্থবছরের জন্য উন্নীত করেছে। সংস্থার মতে, ভারতের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে দেশীয় চাহিদা। ক্রমবর্ধমান প্রকৃত আয় এবং ভোক্তা ব্যয়ের উল্লম্ফন অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে। একই সঙ্গে সহজতর আর্থিক পরিবেশ বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে সহায়ক হবে।

   

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে (FY27) ভারতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৬.৩ শতাংশে। এরপর অর্থনীতি যখন তার সম্ভাবনার সামান্য ওপরে কাজ করতে থাকবে, তখন ২০২৭-২৮ অর্থবছরে (FY28) প্রবৃদ্ধি কিছুটা নেমে আসতে পারে ৬.২ শতাংশে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল স্তরে পৌঁছালেও তা এখনও বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় যথেষ্ট উঁচুতে থাকবে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) চলতি বছরের শেষে নীতিগত সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে। এর লক্ষ্য হবে ইতিমধ্যেই চালু করা আর্থিক নীতির প্রভাব মূল্যায়ন করা। ফিচের মতে, এই হ্রাসকৃত হার ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ২০২৭ সাল থেকে ধাপে ধাপে সুদের হার আবার বাড়াতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।

ভারত যখন শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করছে, তখন বিশ্বের অন্যান্য বড় অর্থনীতির চিত্র তুলনামূলকভাবে মিশ্র। ফিচ ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সামান্য বাড়িয়ে ২.৪ শতাংশ করেছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে চীন ও ইউরোজোনের উন্নততর তথ্য।
চীন: ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস জুনের ৪.২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪.৭ শতাংশ করা হয়েছে।
ইউরোজোন: পূর্বাভাস ০.৮ শতাংশ থেকে উন্নীত করে ১.১ শতাংশ করা হয়েছে।
আমেরিকা: সামান্য বৃদ্ধি, ১.৫ শতাংশ থেকে ১.৬ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে ২০২৬ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাস কিছুটা নিম্নমুখী— মাত্র ২.৩ শতাংশ।

Advertisements

ফিচ রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কোল্টন সতর্ক করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধীরগতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন আর শুধু ভোক্তা জরিপ বা মনোভাব সূচকে নয়, বরং সরাসরি অর্থনৈতিক তথ্যেও এই ধীরগতি ধরা পড়ছে। মার্কিন প্রশাসনের বড় মাপের শুল্কবৃদ্ধি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

রিপোর্টে আশা করা হয়েছে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে এবং ডিসেম্বরে দু’দফা করে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমাতে পারে। এরপর ২০২৬ সালে আরও তিন দফা হ্রাস ঘটতে পারে। তবে ২০২৫ সালের শেষার্ধে আমেরিকায় মূল্যচাপ আবার বাড়তে শুরু করবে, যা প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি কমাবে এবং ভোক্তা ব্যয় দুর্বল করে দেবে। চাকরির প্রবৃদ্ধিও ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে।

ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত, বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা এবং বড় অর্থনীতির মন্দার ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও ভারত যে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছে, তা আন্তর্জাতিক মহলে আশাবাদ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ভোক্তা বাজারের বিশাল সম্ভাবনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল খাতে দ্রুত প্রসার এবং নীতিগত সংস্কার এর মূল শক্তি।

ফিচের এই পূর্বাভাস দেশীয় বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষত যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে আছে, তখন ভারতের স্থিতিশীল বৃদ্ধি অনেকের কাছে ‘গ্লোবাল ব্রাইট স্পট’ হিসেবে ধরা দিচ্ছে।